ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভূমিকম্পে সারাদেশে পাঁচজনের মৃত্যু, আহত ২৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:০০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৬০ Time View

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানী ঢাকার অদূরে নরসিংদীর ঘোড়াশাল এলাকার কাছে উৎপত্তি হওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে। বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত একাধিক হাসপাতাল সূত্রে টেলিফোন মারফত প্রাপ্ত অনানুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা ৬ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ।

পুরান ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এবং নরসিংদীতে তিন শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শোকবার্তায় আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুরে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।

পুরান ঢাকায় নিহতেরা হলেন, রাফিউল ইসলাম (আনুমানিক ২০ বছর), আব্দুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। রূপগঞ্জে ফাতেমা নামে ১০ মাসের এক শিশু মারা গেছে। আর নরসিংদীতে বাড়ির সানসেট ভেঙে ওমর (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের শিক্ষার্থী বলে পরিবার জানিয়েছে। আব্দুর রহিমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনায়। তিনি সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে সৃষ্ট আতঙ্কে অনেকেই লাফ দিয়ে অথবা হুড়োহুড়িতে পড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত হতাহতের অনানুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে:

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (এসএসএমসিএইচ) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই হাসপাতালে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন কলেজটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফিউল ইসলাম। এছাড়া এসএসএমসিএইচ-এ আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ১০ জন।

গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এ মোট ৭২ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ২৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন মোট ৪০০ জন। গুরুতর আহত হওয়ার কারণে ৮৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং ৯৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে ৬ জনকে গুরুতর অবস্থায় অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

এ ছাড়া, নরসিংদী জেলা হাসপাতাল-এ ৪৫ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন, যার মধ্যে ৩ জন গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসিএইচ) রেফার করা হয়েছে। ডিএমসিএইচ এবং একটি ১০০ বেড হাসপাতাল (অজ্ঞাত স্থান)-এ ১০ জন করে আহত ব্যক্তি চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, সবক’টি হাসপাতালে জরুরি মেডিকেল টিম দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। তিনি আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার জন্য সব প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করার চেষ্টা চলছে।

ডা. মঈনুল আহসান উল্লেখ করেন, আহতদের একটি বড় অংশ ভবন ধসে নয়, বরং ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কের কারণে লাফ দিয়ে অথবা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে মনিটর করছে এবং জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে।

নিরাপত্তা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

ভূমিকম্পে সারাদেশে পাঁচজনের মৃত্যু, আহত ২৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৬:০০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানী ঢাকার অদূরে নরসিংদীর ঘোড়াশাল এলাকার কাছে উৎপত্তি হওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত হতাহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বেড়েছে। বেলা ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত একাধিক হাসপাতাল সূত্রে টেলিফোন মারফত প্রাপ্ত অনানুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা ৬ জন এবং আহত হয়েছেন ২৪০ জনেরও বেশি মানুষ।

পুরান ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এবং নরসিংদীতে তিন শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শোকবার্তায় আরও একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুরে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক।

পুরান ঢাকায় নিহতেরা হলেন, রাফিউল ইসলাম (আনুমানিক ২০ বছর), আব্দুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন (১২)। রূপগঞ্জে ফাতেমা নামে ১০ মাসের এক শিশু মারা গেছে। আর নরসিংদীতে বাড়ির সানসেট ভেঙে ওমর (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে রাফিউল ইসলাম স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের শিক্ষার্থী বলে পরিবার জানিয়েছে। আব্দুর রহিমের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রকোনায়। তিনি সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে সৃষ্ট আতঙ্কে অনেকেই লাফ দিয়ে অথবা হুড়োহুড়িতে পড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত হতাহতের অনানুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে:

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (এসএসএমসিএইচ) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এই হাসপাতালে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন হলেন কলেজটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফিউল ইসলাম। এছাড়া এসএসএমসিএইচ-এ আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ১০ জন।

গাজীপুরের তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এ মোট ৭২ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৯ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ২৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন মোট ৪০০ জন। গুরুতর আহত হওয়ার কারণে ৮৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে এবং ৯৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এখান থেকে ৬ জনকে গুরুতর অবস্থায় অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

এ ছাড়া, নরসিংদী জেলা হাসপাতাল-এ ৪৫ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন, যার মধ্যে ৩ জন গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসিএইচ) রেফার করা হয়েছে। ডিএমসিএইচ এবং একটি ১০০ বেড হাসপাতাল (অজ্ঞাত স্থান)-এ ১০ জন করে আহত ব্যক্তি চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মঈনুল আহসান বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, সবক’টি হাসপাতালে জরুরি মেডিকেল টিম দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। তিনি আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসার জন্য সব প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করার চেষ্টা চলছে।

ডা. মঈনুল আহসান উল্লেখ করেন, আহতদের একটি বড় অংশ ভবন ধসে নয়, বরং ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কের কারণে লাফ দিয়ে অথবা হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে মনিটর করছে এবং জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে।

নিরাপত্তা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।