ভিডিওর ভিউ বাড়াতে বিমান দুর্ঘটনার নাটক!
- Update Time : ০৭:০৫:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ মে ২০২৩
- / ১৭৩ Time View
ইউটিউবের ভিডিওতে ভিউ বাড়াতে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটান অনেক ইউটিউবার। এমনই এক ঘটনা ঘটালো মার্কিন যুবক জ্যাকব। ২৯ বছরের এই যুবক একটি প্লেনই ধ্বংস করে দিয়েছেন। এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট নিজ মালিকানাধীন ওই বিমানটিতে তিনি একাই অবস্থান করছিলেন এবং চালাচ্ছিলেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে বিধ্বস্ত করা হলেও কর্তৃপক্ষের কাছে এটিকে দুর্ঘটনা বলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন জ্যাকব। এ অবস্থায় তথ্য গোপন এবং নিরাপত্তাজনিত আইন ভঙ্গের কারণে তার ২০ বছর জেল হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্যাকবের তৈরি নাটকীয় ওই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, মাঝ আকাশে বিমানটি নিয়ে উড়ছিলেন তিনি। এক পর্যায়ে বিমানটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে একটি প্যারাস্যুট নিয়ে বিমান থেকে তিনি লাফ দেন। এ সময় তার হাতে ছিল একটি সেলফি স্টিক। এর মাধ্যমে উড়ন্ত অবস্থায় ভিউয়ারদের কাছে ঘটনার বিবরণ দিচ্ছিলেন তিনি।
এ ছাড়া ডানায় বসানো একটি ক্যামেরার মাধ্যমে নিচের দিকে নামতে থাকা বিমানটিরও ভিডিও ধারণ করেন জ্যাকব। পুরো ঘটনাটি দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হয় একটি ড্রোন ক্যামেরাও।
ভিডিওতে দেখা যায়, প্যারাস্যুট নিয়ে একটি ঝোপের মধ্যে গিয়ে অবতরণ করেন জ্যাকব। আর বিমানটি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড় ও জঙ্গলাকীর্ণ লস পারদেস ন্যাশনাল ফরেস্ট এলাকায় সজোরে গিয়ে আঁছড়ে পড়ে।
‘আই ক্রাশড মাই প্লেন’ শিরোনামে দুঃসাহসিক এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বরে। প্রায় এক বছর পর তা ইউটিউবে আপলোড করা হয়। ১৫ মিনিটের ওই ভিডিওটি ইতোমধ্যে ৩১ লাখ ভিউ হয়েছে।
এদিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হলেও কর্তৃপক্ষের কাছে বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে বলে একটি প্রতিবেদন জমা দেন জ্যাকব। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এবং ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
এ সময় জ্যাকব তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেন, তিনি জানেন না প্লেনটি কোথায় নেমে গেছে। যদিও তদন্তে বেরিয়ে আসে তিনি ও তার এক বন্ধু একটি হেলিকপ্টার নিয়ে বনের ভেতর থেকে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ এবং এতে স্থাপন করা ক্যামেরা থেকে ভিডিওগুলো উদ্ধার করেছিলেন।
এ ঘটনার জের ধরে কিছুদিনের মধ্যেই জ্যাকবের বিমান চালানোর লাইসেন্স বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। তদন্তে বেরিয়ে আসে বিমান দুর্ঘটনার নাটকটি সাজাতে একটি কোম্পানির কাছ থেকে স্পন্সর নিয়েছিলেন তিনি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নিজের অপকর্মের কথা আদালতে স্বীকার করতে সম্মত হয়েছেন জ্যাকব।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভিউয়ের লোভে নিজের ছোট বিমান পরিকল্পিতভাবে ক্র্যাশ করিয়েছিলেন ট্রেভর জ্যাকব নামে এক ইউটিউবার। পরে উড়ন্ত বিমান থেকে প্যারাসুট নিয়ে লাফ দেন তিনি। সেটির ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে দেন। ভিডিওটি ইউটিউবে ৩০ লাখ বার দেখা হয়েছে।
তবে বিমান ক্র্যাশের মতো বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি মার্কিন প্রশাসন। এ কারণে তদন্তের মুখে পড়েন তিনি। আর তাতে বাধা দেওয়ার অপরাধে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন জ্যাকব। এ ঘটনায় সান্তা বারবারা কাউন্টি বিচারবিভাগ তাকে অপরাধী ঘোষণা করেছে।
ট্রেভর জ্যাকব ফেডারেল তদন্তে বাধা দেওয়া এবং ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে রাখার জন্য দোষ স্বীকার করতে সম্মত হয়েছেন। এই অপরাধে ফেডারেল কারাগারে তার সর্বোচ্চ ২০ বছরের সাজা হতে পারে।
ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ২৯ বছর বয়সী প্রাইভেট পাইলটের সার্টিফিকেট বাতিল করেছে।
খবরে আরও বলা হয়, ২৪ নভেম্বর ২০২১-এ জ্যাকব তার বিমান নিয়ে লোম্পক সিটি বিমানবন্দর থেকে একা-একাই উড়াতে শুরু করেন। ম্যামথ লেক যাবেন বলে বের হয়েছিলেন। কিন্তু সেটি করেননি। বরং উড়ানোর সময়ে তার বিমান থেকে লাফ দিয়ে বের হয়ে যান। এরপর প্যারাসুটে করে নেমে আসেন। এদিকে তার বিমান নিচে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
উড়ানোর আগে জ্যাকব বিমানের বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্যামেরা বসিয়েছিলেন। নিজেও একটি প্যারাসুট, ভিডিও ক্যামেরা এবং সেলফি স্টিক নিয়েছিলেন। প্লেনটি উড়ানোর প্রায় ৩৫ মিনিট পরে সান্তা মারিয়ার কাছে লস প্যাড্রেস জাতীয় উদ্যানের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে এই আজব কাণ্ড করেন।
ভিডিও এডিট করে পরে ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তবে প্রায় সবাই বুঝেছিলেন যে এটি পরিকল্পিত। নয় তো এত ক্যামেরা নিয়ে কেন তৈরি থাকবেন!