ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ: কাদের
- Update Time : ০৬:৪৬:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
- / ২৫২ Time View
বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের গ্রাউন্ড ব্রেকিং কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যেও পিছিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
আজ বুধবার সকালে রামগড়ের মহামুনি এলাকার ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু’ এলাকা থেকে প্রশস্ত কাজের উদ্বোধন করা হয়। বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের গ্রাউন্ড ব্রেকিং কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৯৭১ সালে ভারতের সঙ্গে আমাদের যে কানেকটিভিটির বন্ধন রচিত হয়েছিল, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সন্দেহ আর অবিশ্বাসের কারণে আমাদের সে কানেকটিভিটিতে ছেদ পড়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরে সেটি যদি আমরা বন্ধ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের সম্পর্কের আরও উন্নতি হতো। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেটি সম্ভব হয়নি।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সে ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও কিছু কিছু সমস্যা আমাদের মধ্যে আছে। তবে এ সমস্যা থাকলেও আমি মনে করি, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যদি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা যখন সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি এবং নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সংসদে এটি সর্বসম্মতিক্রমে রেটিফাই হয়েছে– তেমনি এসব সমস্যাও সমাধান সম্ভব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি সম্পর্কের সন্দেহের দেয়ালটা না ভাঙতাম, তাহলে এটি সম্ভব হতো না। তাই আমাদের সীমান্তে এত বড় ভারতের সঙ্গে শত্রুতা যদি আমরা অব্যাহত রাখতাম, তাহলে আমরা আরও পিছিয়ে যেতাম।’
‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন আমাদের কানেকটিভিটি, আমাদের বাণিজ্য, আমাদের পরিবহনসহ সবদিক দিয়ে ভারতের যেমন উপকার হয়েছে, তেমনি আমাদেরও উপকার হয়েছে,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ঠিক তেমনি ভারতও তাদের দেশ ব্যবহার করে বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।’
খাগড়াছড়ির বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্ত কাজের উদ্বোধন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা তার বক্তব্যে অবকাঠামো নির্মাণে ভারত ও বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রতি সকল ক্ষেত্রেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বাংলাদেশ মূল্যমান ও প্রকল্পের সংখ্যা উভয় দিক থেকেই ভারতের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার, যাকে রেয়াতি অর্থায়নের আওতায় প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যমানের চুক্তি হয়েছে এবং প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ ২০২২ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
তিনি প্রশংসা করে বলেন, অতিমারির সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে ভারত দ্রুততম ও বৃহত্তম প্রদানকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত এ সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাস্তবায়নে প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০৭ কোটি টাকা। রামগড় থেকে মীরসরাই উপজেলার বারইয়াহাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হলে খাগড়াছড়ির স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে চট্টগ্রামের অঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর রামগড়ে স্থলবন্দরের নির্মাণকাজও শেষের দিকে। সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অচিরেই বারৈয়ারহাট-করেরহাট দিয়ে রামগড় এলাকা চট্টগ্রামের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক জোন হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজাতীয় শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেজন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, তিন পার্বত্য জেলা নারী সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপুসহ প্রমুখ।