ব্যবসায়ীর বাড়িতে সরকারি অর্থায়নে অর্থায়নে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ !
![](https://nawroj.com.bd/wp-content/uploads/2023/04/LOGO-NAWROJ-2022-icon.png)
- Update Time : ০৩:০৭:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪
- / ৬৬ Time View
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে পাবলিক পাকা টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তিস্তার চরাঞ্চল পল্লীমারী বাজারে পাবলিক প্লেসে টয়লেট নির্মাণের বদলে, একই গ্রামের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে এ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে পাবলিক টয়লেট সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
পল্লীমারী বাজারের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আশির দশকের পরে মূল তিস্তা নদী ভাটির দিকে চলে যায়। এরপর চরপল্লীমারী গ্রামে স্থানীয়দের বসবাস বাড়তে থাকে। গড়ে উঠে পল্লীমারী নামে একটি বাজার, সরকারি প্রাথমিক স্কুল ও মাধ্যমিক স্কুল। চরাঞ্চল গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে পাকারাস্তা সহ বিভিন্ন অবোকাঠামো নির্মাণ করে সরকার। আর বাজারে পাবলিক টয়লেট না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের। মলমূত্রের বেগ হলে ক্রেতা বিক্রেতাদের ধান, পাট ও ভুট্টা খেতের আড়ালে কিংবা খোলা মাঠে যেতে হয়।
এ অবস্থায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে উপজেলা পরিষদ পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মানের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই অর্থবছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দরপত্র করে এবং ঠিকাদারের মাধ্যমে পল্লীমারী বাজারে নলকূপ এবং পানির পাম্পসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট পাবলিক টয়লেটের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে। তবে টয়লেট পাবলিক প্লেসে নির্মাণ না করে, একই গ্রামের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়ির ভিতরে এ টয়লেট নির্মাণ করে দেয় উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর বাড়ির গেট বন্ধ থাকায় বাজারের ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা এর সুফল পাচ্ছে না।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী চরপল্লীমারী বাজারে গালামাল, মুদিদোকান, সার-কীটনাশক, চায়ের দোকান সহ অন্তত ২০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্থানীয় দোকানদাদের ভাষ্য মতে, কৃষি নির্ভর এলাকা হওয়ায় সকাল থেকে দুপুর এবং বিকেল থেকে গভীররাত পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকে। বাজারের আশপাশ কোথাও নেই মলমূত্র ত্যাগের ব্যবস্থা। বাজারের পাশে একটি বাড়ির ভিতরে পাকা পাবলিক টয়লেট আছে। সেটিও বাড়ীর মালিক টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। বাজারের কিংবা বাহিরের কেউ পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে পারে না।
বাজারের মুদি দোকানদার আব্দুর আজিজ ও আমরুল ইসলাম বলেন, বাজারটি গড়ে ওঠার প্রায় এক যুগ হয়েছে। কিন্তু পাবলিক টয়লেট ও সুুপিয় পানির ব্যবস্থা নেই। আর পাবলিক টয়লেট না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় তাঁদের এবং ক্রেতাদের। বিশেষ করে বাহির থেকে কেউ এলাকায় আসলে টয়লেট না থাকায় মলমূত্রের বেগ হলে তাঁদের বিব্রতকর পরিস্থিতির পড়তে হয়।
পল্লীমারী গ্রামের গ্রামের কৃষক ও বাজারে আসা ক্রেতা ওবায়দুল হক বলেন, সুুপিয় পানি ও মলমূত্র ত্যাগের জন্য বাজারে একটা পাবলিক টয়লেটের খুবই প্রয়োজন। উপজেলা পরিষদ ও প্রশ্ধাসঢ়;সন এর উদ্যোগ নিবেন।
পল্লীমারী গ্রামের কৃষক বাজারে আসা ক্রেতা ইলিয়াস মিয়া বলেন, অনেকদিন আগে শুনেছি বাজারে একটা পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। আজোও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রায় দুই বছর আগে সরকারি লোকজন এসে বাজারের পাশে একজন ব্যবসায়ীর বাড়ীর ভিতরে নলকূপ এবং পানির পাম্প সহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট টয়লেটের নির্মাণ করে দিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীর বাড়ীর ভিতরে যদি সরকারি অর্থায়নে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়ে থাকে। তাহলে পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি এলাকাবাসীর।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা প্রকৌশল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও তার ভাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে খুশি করতে দুই প্রতিনিধির আস্থাভাজন ব্যক্তির বসতবাড়ির ভিতরে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে দিয়েছে। ফলে বাজারের দোকানদার এবং ক্রেতারা কেউই ব্যবসায়ীর বসতবাড়ীর ভিতরে সেই টয়লেট ব্যবহার করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জেমী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছর এডিপির বরাদ্দে পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাবকারী ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান। তারই বড় ভাই হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারন করে দিয়েছে। আমরা সেখানেই নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছি। এডিপির অর্থায়নে প্রকল্প নির্ধারণ ও অনুমোদনে উপজেলা প্রকৌশলীর কোন পাওয়ার নাই।
তিনি আরও বলেন, পল্লীমারী বাজারে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় পর চূড়ান্ত বিল পরিশোধের আগে কাজের গুনগতমান পরিদর্শনে গিয়ে নির্ধারিত জায়গা নিয়ে তিনি নিজেও বিব্রত হন।