ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আ’লীগ নেতার তাণ্ডব, সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল

- Update Time : ১০:৪৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০২৩
- / ৯৯ Time View
ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত দীর্ঘদেহী একজন নেতা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠছেন। উঠতে উঠতে মাথায় নেতাদের স্টাইলে কয়েকবার হাতও দিচ্ছেন। এ সময় তিনি ছিলেন খালি হাতে। উঠে দরজা দিয়ে একটি কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করলেন।
কিছু সময় ভেতরে থাকার পর হাতে তিনটি ক্যামেরা, সেই হাতের বগলে সিসিটিভির হার্ডডিক্স ও ল্যাপটপ, ডান হাতে একটি মনিটর নিয়ে ওই সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন। পরে রাস্তায় আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মোটরসাইকেলে করে তিনি চলে যাচ্ছেন।
ঘটনাটি বরগুনার বামনা উপজেলার খোলপটুয়া বাজারে মেসার্স মা ব্রিকসের অফিস কক্ষে হামলা-ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালানোর আগে ও পরে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়া ফুটেজের।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাত ৭টা ৪৪ মিনিটে বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার একাই এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরের সকল সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত হামলার ভিডিও প্রমাণ তিনি নষ্ট করলেও ওই ভবনটির পাশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই নেতার হামলায় সম্পৃক্ততার কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে শুধু ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগই নয়, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে গালাগালসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় মেসার্স মা ব্রিকস কর্তৃপক্ষ বামনা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মোস্তফা ফকির।
মেসার্স মা ব্রিকসের হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার অফিসে আসেন।
তিনি এসেই মা ব্রিকসের মালিক মোস্তফা ফকির কোথায় আছে জানতে চান। তিনি ঢাকায় রয়েছেন শুনেই তাকে ও তার অফিসকর্মী মো. মহসীনকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন। পরে একটি লোহার পাইপ দিয়ে টেবিল-চেয়ার, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর শুরু করেন। টেবিলের ড্রয়ারে থাকা প্রায় ১০ লাখ টাকাসহ তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরা, ক্যামেরার হার্ডডিস্ক, একটি মনিটর নিয়ে চলে যান। পরে ঘটনাটি মালিককে জানানোর পর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
মেসার্স মা ব্রিকসের মালিক মো. মোস্তফা ফকির বলেন, ‘আমি রুহিতা বিষখালী নদীর তীরের কিছু জমি ফেরদৌস তালুকদারের কাছ থেকে ক্রয় করি। ক্রয়সূত্রে ওই জমির জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা বায়না হিসেবে তাকে প্রদান করি। দীর্ঘদিন ধরে তাকে জমির দলিল রেজিস্ট্রি দিতে বললেও তিনি তা দিচ্ছেন না। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয় তার সাথে। ওই জমির বিভিন্ন কাগজপত্র ও টাকা প্রদানের প্রমাণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও ভিডিও গায়েব করার জন্য তিনি এই হামলার ঘটনা ঘটাতে পারেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওই আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যা প্রচার করা হচ্ছে তা ভুয়া ও বানোয়াট। আমি আইনের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ করব ইনশাআল্লাহ।’
বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি মামলা দায়ের করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’