বেক্সিমকোর ঋণ কেলেঙ্কারিতে শাস্তি পাবেন ব্যাংকাররাও: শ্রম উপদেষ্টা

- Update Time : ০৬:১২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৬১ Time View
নিয়মের বাইরে গিয়ে বেক্সিমকোকে ঋণ দেওয়ায় জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও ‘আইনের আওতায়’ আনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানান। আগামীকাল থেকে বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ প্রতিটি ব্যাংকের যারা যারা এই টাকা দেওয়ায় জড়িত, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে এবং মামলা হবে।
“সবাই ব্যঙের ছাতার মতো পোশাক কারখানা খুলেছে; ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। তার রপ্তানি আছে কি নাই, সেটা ব্যাংকগুলোও দেখে নাই।”
উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন, “একটা ব্যাংক হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিল! সে দেখবে না, কী আছে, কী নাই? বাংলাদেশ ব্যাংকের লোক ছিল না? হোয়ার আর দ্য ব্যাংকার্স?”
বেক্সিমকোর নামি-বেনামি প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকগুলোর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “কালকের মিটিংয়ে আমরা কঠোরভাবে বলেছি, শুধু বেক্সিমকো নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। এই টাকাগুলো দিল কে? এত ভয়! চাইল আর ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দিলেন!
“অর্থ মন্ত্রণালয় তদন্ত করবে। ব্যাংকের অফিসার হোক, কর্মকর্তা হোক আর কর্মচারী হোক; তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “মনে করার কারণ নেই যে, লোকজন বিদেশে চলে গেছে। বিদেশে যারা গেছে, তারা হয়ত দেশে এসে মামলা মোকাবেলা করবে। অন্যথায় তারা বিদেশে থেকে নন গ্রাটা হবে।
“দরকার হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব। আমরা এভাবে তাদের ছেড়ে দিতে পারি না, যারা এতগুলো শ্রমিকের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।”
শ্রম উপদেষ্টা জানান, আগামী ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের লে অফ করা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। এ পাওনা পরিশোধে সরকারকে খরচ করতে হবে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, আর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় তহবিলের বিভিন্ন হিসাব থেকে দেওয়া হবে ২০০ কোটি টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপের পাওনাদারদের মধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ৩১ হাজার ৬৭৯ জন। আর কর্মচারী হচ্ছেন ১ হাজার ৫৬৫ জন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বেক্সিমকো শিল্প পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এই ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধিসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের রিসিভার। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
শ্রম উপদেষ্টা জানান, আগামীকাল শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হবে। ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
শ্রম উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, বেক্সিমকো শিল্প পার্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০০৮-২০২৪ পর্যন্ত জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদানের জন্য দায়ী ও জড়িত কর্মকর্তা, ব্যাংকের বোর্ড সদস্য, কোম্পানি বোর্ড সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) সংশ্লিষ্ট অন্য সবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হবে।
বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত ১৩ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। পরে শেয়ার বিক্রিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়।