ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
বিনা শর্তে মাফ চাইলাম, তারপরও বাকি থাকল কোনটা বুঝি না: জামায়াত আমির লালবাগে রিয়াজ উদ্দিন মনির সমর্থনে র‍্যালি রায় ছিঁড়ে পছন্দের বিচারকের কাছে পুন: বিচারের জন্য পাঠালেন শরীয়তপুরের জেলা জজ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আলোচনা সভা ও র‍্যালি ব্যর্থ প্রশাসনের প্রতীক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা : ব্যারিস্টার ফুয়াদ ভেঙে ফেলা হচ্ছে ‘মিনিস্টার বাড়ি’ সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ তিন দফা দাবিতে ৯ম দিনের অনশন, অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিক্ষকরা জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক পিআর নিয়ে নাহিদের বালখিল্য বক্তব্য জাতি আশা করে না: জামায়াত

বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি, সিইসিকে জানালেন মঈন খান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৩:৩৯:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩২০ Time View

নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান

প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে তাঁদের জানিয়েছেন বলেও জানান আবদুল মঈন খান।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আবদুল মঈন খান এ কথাগুলো বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথাগুলো বলেন।

আবদুল মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলের অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রহসনের শিকার হয়েছেন, তা সবারই জানা। এই বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন। কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয়।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়; বরং তাদের মধ্যে যারা অতীতে চাপ বা ভয়ের কারণে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অন্তরে গণতান্ত্রিক। যখন তারা বুঝবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন এটি উৎসবমুখর একটি ঘটনায় রূপ নেবে।’

আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়; জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই, ১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, আর ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি, যেন তারা একটি উদাহরণ স্থাপন করে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে—বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।’ মঈন খান মনে করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত, তবু একটি দিনে সারা দেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও ৩ লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’

আবদুল মঈন খান বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে, যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে সেই নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।

একই সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপি আগেই নির্বাচনী সংস্কারসংক্রান্ত তাদের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন যদি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

শেষে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব বুঝতে পারে, বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া প্রমুখ এ সময় মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনে চায় না বিএনপি, সিইসিকে জানালেন মঈন খান

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৩:৩৯:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

প্রশাসন ও সরকারি বিতর্কিত কর্মকর্তারা যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছে বলে তাঁদের জানিয়েছেন বলেও জানান আবদুল মঈন খান।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে আবদুল মঈন খান এ কথাগুলো বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি এ কথাগুলো বলেন।

আবদুল মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে প্রশাসনকে একটি রাজনৈতিক দলের অনুগতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা যে প্রহসনের শিকার হয়েছেন, তা সবারই জানা। এই বাস্তবতার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে যুক্ত না হতে পারেন। কমিশন যেন এমন একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে, যেখানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হয়।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘অতীতের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা বাস্তবসম্মত নয়; বরং তাদের মধ্যে যারা অতীতে চাপ বা ভয়ের কারণে অন্যায় করেছে, তাদের এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ অন্তরে গণতান্ত্রিক। যখন তারা বুঝবে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, তখন এটি উৎসবমুখর একটি ঘটনায় রূপ নেবে।’

আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কোনো ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থ নয়; জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ১৭ বছরের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পর, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আমরা চাই, ১৮ কোটি মানুষ যেন সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করতে পারে, সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে, আর ১২ কোটি ভোটার যেন নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছি, যেন তারা একটি উদাহরণ স্থাপন করে, যাতে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝতে পারে—বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে এগোচ্ছে।’ মঈন খান মনে করেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। যদিও কমিশনের নিজস্ব জনবল সীমিত, তবু একটি দিনে সারা দেশে প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র ও ৩ লাখ বুথে নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১০ লাখ জনবল প্রয়োজন। এই জনবল সরকারের প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আসে। ফলে এই বিশাল কাঠামো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে কি না, তা এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’

আবদুল মঈন খান বলেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন ভূমিকা নিতে হবে, যাতে জনগণ বিশ্বাস করে যে তাদের কোনো দলীয় স্বার্থ নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি দৃশ্যমানভাবে সেই নিরপেক্ষতার বার্তা দিতে পারে, তাহলে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ তৈরি হবে।

একই সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপি আগেই নির্বাচনী সংস্কারসংক্রান্ত তাদের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন যদি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আসন্ন নির্বাচন হবে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক।

শেষে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা চাই, এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনুক, যাতে বিশ্ব বুঝতে পারে, বাংলাদেশ সত্যিই গণতন্ত্রের পথে ফিরছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া প্রমুখ এ সময় মঈন খানের সঙ্গে ছিলেন।