বিটিভিনামা
বিটিভিতে মুন্সী ফরিদুজ্জামানের দৌড় কতদূর!
- Update Time : ০৭:১৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪
- / ৮৩ Time View
স্বাধীনতার ৫৩ বছরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বিটিভি তার স্বকিয়তা অর্জন করতে পারেনি। যখন যে ক্ষমতায় থেকেছে বিটিভিকে পারিবারিক প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে বিটিভি বেহায়াপনার সকল সীমা অতিক্রম করেছে। বিটিভির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা উপরের ইচ্ছামাফিক ব্যবহৃত হয়েছেন। বিনিময়ে নিজেরা কোটি কোটি টাকা লোপাট করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলে বিটিভিতে বহাল তবিয়তে তার দোসর মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামান।
জানা গেছে, মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে যেমন খুশি তেমন স্টাইলে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ইচ্ছাই শেষ কথা। হাছান মাহমুদ কোন কারণে হাসলে যেমন সংবাদ আবার ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে কাঁদলেও সংবাদ। এমনকি হাছান মাহমুদের কথিত বান্ধবীর তুচ্ছ ঘটনাও ফলাও করে প্রচার করা হয়। এমন অপেশাদার সাংবাদিকতা এর আগে বিটিবিতেও কখনো হয়নি। মুন্সী ফরিদুজ্জামান মুখ্য বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চাটুকারিতার চুড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে। তার নির্দেশের বাইরে টু শব্দ করার সাহস কারও ছিলো না।
বিটিভির মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামানের ক্ষমতার উৎস কি? বিটিভিতে তা এখন আলোচিত বিষয়। যে লোকটি আওয়ামী লীগের ১৬ বছর একচেটিয়া বিটিভিতে খবরদারি করেছে। সরকার পরিবর্তন হলেও কোন যাদুর কাঠির বলে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। অবশ্য কানাঘুষা আছে মক্ষীরানী সাদিয়া আফরিনের মতো ললনা হাতে থাকলে সবকিছুই সম্ভব। মুন্সী ফরিদুজ্জামান ললনাদের লিলা দেখিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের বদ স্বভাব মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। হেয় করে কথা বলা ছিল যার নিত্যদিনের অভ্যাস।
হাছান মাহমুদ বিটিভির সংবাদ নিয়ে কোনভাবেই খুশি ছিলেন না। তিনি চাইতেন সরকার প্রধানের পরই তার সংবাদ প্রচার করতে হবে। কিন্তু সবক্ষেত্রে এমনটা করা হতো না। পরে চাটুকার মুন্সী ফরিদুজ্জামানকে মুখ্য বার্তা সম্পাদক করা হয়। তারপর থেকে মুন্সি ফরিদুজ্জামান ড. হাছান মাহমুদের চাহিদা অনুযায়ী সংবাদের সময় বাড়াতে থাকেন এবং হাছান মাহমুদ যেভাবে নির্দেশনা দিতেন সেভাবেই বিটিভিতে তার সংবাদ প্রচার হতো। মুন্সি ফরিদুজ্জামান সরাসরি ড. হাছান মাহমুদের নিউজ এর বিষয়ে সার্বিক দেখাশোনা করতেন।
এদিকে মুন্সী ফরিদুজ্জামান ড. হাছান মাহমুদের জন্য সার্বক্ষণিক তিনজন রিপোর্টার অ্যাসাইন করে তার প্রিয়ভাজন হয়ে উঠেন। ড. হাছান মাহমুদের কাভারেজ এর জন্য সার্বক্ষণিক একটি গাড়ি, এডিটিং প্যানেল এবং ব্যাকপ্যাক এর নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছেন মুন্সী ফরিদুজ্জামান। নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখার জন্য মুন্সী ফরিদুজ্জামান বিটিভিতে ড. হাছান মাহমুদের প্রতিদিন দুইটা তিনটা প্রোগ্রামের নিউজ প্রচার করেছেন। সবার সাথে গল্প করতেন তিনি মুখ্য বার্তা সম্পাদকের চেয়ারে না থাকলে নাকি ড. হাছান মাহমুদের সংবাদ ঠিকমতো প্রচার হতো না। এজন্যই পরিচালক বার্তা হিসেবে তাকে প্রমোশন দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত তিনি ড. হাছান মাহমুদের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
বিটিভির সংবাদ পাঠিকাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরোটা সময় জুড়েই বিটিভিতে একক আধিপত্য ও সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়া এবং হাছান মাহমুদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে সমাদৃত সংবাদ পাঠিকা সাদিয়া আফরিনের মধ্যস্থতায় হাছান মাহমুদ এর আরো কাছাকাছি চলে যান ফরিদুজ্জামান। এই সাদিয়া আফরিনের অজানা অনেক ঘটনার অনেক তথ্য দৈনিক নওরোজ এর কাছে এসেছে।
এ বিষয় আমরা পরবর্তী সংখ্যায় সংবাদ প্রকাশ করব। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হাছান মাহমুদের আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত কর্মী এবং দোসর এখন বিটিভির মুখ্য বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। বিটিভিকে বাতাবি লেবু এবং সরকারের তেলবাজি করা লেজুর ভিত্তিক গণমাধ্যম বানানোর পেছনে মুন্সি ফরিদুজ্জামান এর দায় কোন অংশেই কম নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলের পর দর্শকের চাহিদা ছিল বিটিভি বৈষম্যমুক্ত হবে, বিটিভি গণমানুষের কথা বলবে। কিন্তু শরষের ভিতরে ভুত থাকলে ভাল কিছু যেমন আসা করা দুরাশা মাত্র। বিটিভির ফরিদুজ্জামানরাও শরষের ভুতের মত। যতদিন ফরিদুজ্জামানদের কবল থেকে বিটিভি মুক্ত না হবে ততদিন বৈষম্য থেকেই যাবে। এ বিষয়ে জানতে মুন্সী ফরিদুজ্জামানের টেলিটক নাম্বারে যাগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। (চলবে)