ঢাকা ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিচারক স্বল্পতায় সারাদেশে ঝুলে আছে ৪৩ লক্ষ মামলা

শামসুল হক দুররানী
  • Update Time : ০৮:৩২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১১ Time View

সারাদেশে ৪৩ লক্ষ মামলা ঝুলে আছে। তার মধ্যে নিম্ন আদালতে ৩৭ লক্ষ, হাইকোর্ট বিভাগে সাড়ে ৫ লক্ষ, আপিল বিভাগে ২৭ হাজার এবং ডেথ রেফারেন্সে ১ হাজারের বেশি মামলা পেন্ডিং রয়েছে। মামলার জট নিরসনে উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিগত স্বৈর সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে নিয়োগকৃত বিচারপতিদের মধ্যে বেশীর ভাগই দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে থেকে নেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে খুব কম সংখ্যক সিনিয়র জেলা জজকে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।

শোনা যাচ্ছে, খুব শিঘ্রই বেশ কিছু বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ থেকে বেশী পরিমাণ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে মামলার জটও যেমন কমবে, তেমনি অনেক পদও খালি হবে। নতুন পদ সৃষ্টি না হলে মামলার জট আরো বাড়বে এবং সেই সাথে বিচার বিভাগে কর্মরত বিচারকরাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে এমন ধারণা পোষণ করেন সংশ্লিষ্ট সকল মহল।

মূল মামলা নিষ্পত্তি হলেও আপিল মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মানুষের শেষ ভরসাস্থল হলো বিচার বিভাগ। জনগণ তার ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু বিচার বিলম্বিত হলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ফললাভ করতে ব্যর্থ হয়।

বিচারপ্রার্থী জনগণ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও বিচারের আশায় আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু সময়মত তারা তাদের অধিকার লাভে ব্যর্থ হলে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের শিকার হতে হয়। ফৌজদারী, দেওয়ানী, পারিবারিক, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আদালত মামলার নিষ্পত্তি করে থাকেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক না থাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না।

প্রতিটি জেলায় একজন জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করে থাকেন। জেলা ও দায়রা জজ পারিবারিক আপীল মামলা, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন মামলায় ভারাক্রান্ত। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের সংখ্যাও অপ্রতুল।

মামলার নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি এবং জনগণের বিচার লাভকে ত্বরান্বিত করতে হলে জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে বর্তমানে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আছেন। নতুন পদ সৃষ্টি করে তাদেরকে পদোন্নতি দিলে বিচার ব্যবস্থায় গতিশীলতা সৃষ্টি হবে। নতুন পদ সৃষ্টি না করলে বিজিএস ৪র্থ ব্যাচ থেকে যে ১০টি ব্যাচে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিবে। ফলে বিচারকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে। অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছে যে, তারা হয়তোবা চাকুরীর শেষ জীবনেও জেলা জজ পর্যায়ে পদোন্নতি লাভ করতে পারবে না। সহকারী জজ হিসেবে যারা সর্বশেষ নিয়োগ পেয়েছেন, তারা অতিরিক্ত জেলা জজ হয়ে অবসরে যেতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। ২০১০ সালে বিজিএস সহকারী জজ-এ যোগদানকারীদের মধ্যে মাত্র ৪০ জন যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। ব্যাচের বাকী শতাধিক বিচারক পদোন্নতির প্রহর গুণছেন।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, নতুন পদ সৃজন করলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। লক্ষ্যণীয় যে, বেশ কিছুকাল থেকে মামলার যে জট শুরু হয়েছে, তা থেকে বাদী-বিবাদীকে হয়রানী থেকে মুক্তি দিতে ৬৪ জেলায় আরো অতিরিক্ত ৬৪টি জেলা জজের পদ সৃষ্টি করতে হবে। জেলা ও দায়রা জজকে মামলার বিচারকার্য থেকে শুরু করে প্রশাসনিক নানাবিধ কর্ম সম্পাদন করতে গিয়ে মামলার রায় বিলম্বিত হচ্ছে। এজন্য জেলা ও দায়রা জজ পৃথক করে ৬৪ জেলায় সমপরিমাণ পদ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে অতিরিক্ত জেলা জজের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ আইনগত সিদ্ধান্ত নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হতে হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিভিন্ন কোয়ারী ফাইলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়। অথচ সেই আইন মন্ত্রণালয়ের জন্য লোকবল বৃদ্ধি এবং নতুন পদ সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল গেলে তা যথাযথভাবে আমলে নেয়া হয় না। অনেক সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ণাঙ্গ দাবী পূরণ না করে যাও যৎসামান্য পদ সৃষ্টির জন্য অনুমোদন দেয়া হয় তাও গিয়ে পড়ে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ সংকটের অজুহাতে জনপ্রশাসন থেকে প্রাপ্ত কোটাকে কর্তন করে অতি নিম্নপর্যায়ে নিয়ে যায়। আবার অনেক প্রস্তাব ঝুলিয়ে রাখে মাসের পর মাস। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যুগ্ম জেলা জজ পদের অনুমোদন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত ১৬২টি যুগ্ম জেলা জজ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। অথচ অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় মাত্র ৫টি অর্থঋণ আদালত সৃজনে সম্মতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৬ জুলাই-২০২৪ তারিখে ২৫টি পদের জন্য রিভিউ প্রেরণ করলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তা নামঞ্জুর করা হয়। ৭টি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ২৮টি পদ সৃজন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ১৫ মে-২০২৪ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক অসম্মতি প্রদান করা হয়। ১০ জুন-২০২৪ তারিখে আইন মন্ত্রণালয় মাত্র ৩টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয়।

এছাড়া ১৩টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সৃজন ১৩জন যুগ্ম জেলা জজসহ ৭৮টি পদ, ৩টি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, কক্সবাজার, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলায় ৩জন জেলা জজসহ ২৮টি পদ, চট্টগ্রাম জেলায় ৩টি অতিরিক্ত চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ১০টি মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সৃজন, মাদক সংক্রান্ত স্বতন্ত্র আদালত সৃজনের জন্য ৩০জন অতিরিক্ত জেলা জজ, ২৪জন অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ, ৬৬জন যুগ্ম জেলা জজ, ৩২জনসহ ১৫২টি পদ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১০২টি, যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ২০টি, বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) ১০টিসহ মোট ৯২৪টি পদ, ৫৪টি ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল সৃজনের জন্য ৫৪জন জেলা জজসহ ৩২৪টি পদ এবং সারাদেশে সহকারী জজ হিসেবে ২১৪টি পদ সৃজনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। ঐ সব প্রস্তাব এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

বিচারক স্বল্পতায় সারাদেশে ঝুলে আছে ৪৩ লক্ষ মামলা

শামসুল হক দুররানী
Update Time : ০৮:৩২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

সারাদেশে ৪৩ লক্ষ মামলা ঝুলে আছে। তার মধ্যে নিম্ন আদালতে ৩৭ লক্ষ, হাইকোর্ট বিভাগে সাড়ে ৫ লক্ষ, আপিল বিভাগে ২৭ হাজার এবং ডেথ রেফারেন্সে ১ হাজারের বেশি মামলা পেন্ডিং রয়েছে। মামলার জট নিরসনে উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বিগত স্বৈর সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে নিয়োগকৃত বিচারপতিদের মধ্যে বেশীর ভাগই দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে থেকে নেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে খুব কম সংখ্যক সিনিয়র জেলা জজকে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।

শোনা যাচ্ছে, খুব শিঘ্রই বেশ কিছু বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ থেকে বেশী পরিমাণ বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে মামলার জটও যেমন কমবে, তেমনি অনেক পদও খালি হবে। নতুন পদ সৃষ্টি না হলে মামলার জট আরো বাড়বে এবং সেই সাথে বিচার বিভাগে কর্মরত বিচারকরাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে এমন ধারণা পোষণ করেন সংশ্লিষ্ট সকল মহল।

মূল মামলা নিষ্পত্তি হলেও আপিল মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় বিচারপ্রার্থী জনগণকে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মানুষের শেষ ভরসাস্থল হলো বিচার বিভাগ। জনগণ তার ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু বিচার বিলম্বিত হলে বিচারপ্রার্থী জনগণ ফললাভ করতে ব্যর্থ হয়।

বিচারপ্রার্থী জনগণ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান ও বিচারের আশায় আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু সময়মত তারা তাদের অধিকার লাভে ব্যর্থ হলে অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের শিকার হতে হয়। ফৌজদারী, দেওয়ানী, পারিবারিক, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আদালত মামলার নিষ্পত্তি করে থাকেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক না থাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না।

প্রতিটি জেলায় একজন জেলা ও দায়রা জজ দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তি করে থাকেন। জেলা ও দায়রা জজ পারিবারিক আপীল মামলা, স্পেশাল ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন মামলায় ভারাক্রান্ত। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের সংখ্যাও অপ্রতুল।

মামলার নিষ্পত্তির হার বৃদ্ধি এবং জনগণের বিচার লাভকে ত্বরান্বিত করতে হলে জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ বিভিন্ন পদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে বর্তমানে অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আছেন। নতুন পদ সৃষ্টি করে তাদেরকে পদোন্নতি দিলে বিচার ব্যবস্থায় গতিশীলতা সৃষ্টি হবে। নতুন পদ সৃষ্টি না করলে বিজিএস ৪র্থ ব্যাচ থেকে যে ১০টি ব্যাচে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিবে। ফলে বিচারকদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে। অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছে যে, তারা হয়তোবা চাকুরীর শেষ জীবনেও জেলা জজ পর্যায়ে পদোন্নতি লাভ করতে পারবে না। সহকারী জজ হিসেবে যারা সর্বশেষ নিয়োগ পেয়েছেন, তারা অতিরিক্ত জেলা জজ হয়ে অবসরে যেতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। ২০১০ সালে বিজিএস সহকারী জজ-এ যোগদানকারীদের মধ্যে মাত্র ৪০ জন যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। ব্যাচের বাকী শতাধিক বিচারক পদোন্নতির প্রহর গুণছেন।

অভিজ্ঞ মহলের মতে, নতুন পদ সৃজন করলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে। লক্ষ্যণীয় যে, বেশ কিছুকাল থেকে মামলার যে জট শুরু হয়েছে, তা থেকে বাদী-বিবাদীকে হয়রানী থেকে মুক্তি দিতে ৬৪ জেলায় আরো অতিরিক্ত ৬৪টি জেলা জজের পদ সৃষ্টি করতে হবে। জেলা ও দায়রা জজকে মামলার বিচারকার্য থেকে শুরু করে প্রশাসনিক নানাবিধ কর্ম সম্পাদন করতে গিয়ে মামলার রায় বিলম্বিত হচ্ছে। এজন্য জেলা ও দায়রা জজ পৃথক করে ৬৪ জেলায় সমপরিমাণ পদ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে অতিরিক্ত জেলা জজের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বপূর্ণ আইনগত সিদ্ধান্ত নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হতে হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিভিন্ন কোয়ারী ফাইলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়। অথচ সেই আইন মন্ত্রণালয়ের জন্য লোকবল বৃদ্ধি এবং নতুন পদ সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফাইল গেলে তা যথাযথভাবে আমলে নেয়া হয় না। অনেক সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ণাঙ্গ দাবী পূরণ না করে যাও যৎসামান্য পদ সৃষ্টির জন্য অনুমোদন দেয়া হয় তাও গিয়ে পড়ে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ সংকটের অজুহাতে জনপ্রশাসন থেকে প্রাপ্ত কোটাকে কর্তন করে অতি নিম্নপর্যায়ে নিয়ে যায়। আবার অনেক প্রস্তাব ঝুলিয়ে রাখে মাসের পর মাস। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যুগ্ম জেলা জজ পদের অনুমোদন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত ১৬২টি যুগ্ম জেলা জজ পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। অথচ অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় মাত্র ৫টি অর্থঋণ আদালত সৃজনে সম্মতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ১৬ জুলাই-২০২৪ তারিখে ২৫টি পদের জন্য রিভিউ প্রেরণ করলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তা নামঞ্জুর করা হয়। ৭টি অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ২৮টি পদ সৃজন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি ১৫ মে-২০২৪ তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক অসম্মতি প্রদান করা হয়। ১০ জুন-২০২৪ তারিখে আইন মন্ত্রণালয় মাত্র ৩টি পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয়।

এছাড়া ১৩টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সৃজন ১৩জন যুগ্ম জেলা জজসহ ৭৮টি পদ, ৩টি মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, কক্সবাজার, যশোর ও ময়মনসিংহ জেলায় ৩জন জেলা জজসহ ২৮টি পদ, চট্টগ্রাম জেলায় ৩টি অতিরিক্ত চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও ১০টি মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সৃজন, মাদক সংক্রান্ত স্বতন্ত্র আদালত সৃজনের জন্য ৩০জন অতিরিক্ত জেলা জজ, ২৪জন অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ, ৬৬জন যুগ্ম জেলা জজ, ৩২জনসহ ১৫২টি পদ, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১০২টি, যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ২০টি, বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) ১০টিসহ মোট ৯২৪টি পদ, ৫৪টি ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনাল সৃজনের জন্য ৫৪জন জেলা জজসহ ৩২৪টি পদ এবং সারাদেশে সহকারী জজ হিসেবে ২১৪টি পদ সৃজনের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। ঐ সব প্রস্তাব এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।