ঢাকা ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাসস-এ ভয়াবহ দুর্নীতি-অনিয়ম

নওরোজ রিপোর্ট 
  • Update Time : ১০:৩৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৯ Time View

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এ কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক গত ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আইন ও বিধি বহিভূতভাবে “প্রধান বার্তা সম্পাদক” ও “প্রধান প্রতিবেদক” “প্রধান বার্তা সম্পাদক (বাংলা)” ও “প্রধান প্রতিবেদক (বাংলা)”-সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে যোগদান করেছেন। আশ্চর্য ঘটনা !!! ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক (এমডি)-কে উপেক্ষা করে বেআইনি ও এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে পুরনো তারিখে (ব্যাক ডেট) এসব চিঠি দিয়েছেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান। অথচ পদায়ন ও নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের এখতিয়ার শুধুমাত্র বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের (এমডি)।

উল্লেখ্য, সরকার নিযুক্ত বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ নিজেই ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কাজে যোগদান করেছেন। উল্লেখিত পদায়ন ও নিয়োগপত্রে এমডি মাহবুব মোর্শেদ স্বাক্ষর করেননি বলে জানা গেছে। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র জমা বা পদত্যাগের ঘোষনা স্বত্ত্বেও বাসস-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মুহাম্মদ আনিসুর রহমান এসব চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাকে সরকার বা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয় বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক পদে কোন নিয়োগদান করে নি।

অর্থাৎ তিনি বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক (এমডি) পদে পূর্নাঙ্গ তো দূরের কথা সরকার তাকে ‘চলতি দায়িত্বে’ বা ‘অতিরিক্তি দায়িত্বে বা ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসাবেও নিযুক্ত করেননি। সার্ভিস রুল (গেজেট) ভুক্ত এসব পদে নিয়োগদানের ক্ষমতা শুধুমাত্র পূর্নাঙ্গ একজন এমডি’র। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কোন ধরনের নিয়োগ- পদায়ন- পদোন্নতি (বা গ্রেডআপ) ও বরখাস্ত (চাকুরিচ্যুতি) করতে পারেন না, তার এ ধরনের কোন এখতিয়ার নাই। একটি মজার বিষয় হলো- বাসস-এ উল্লেখিত বিভিন্ন পদে ইতিপূর্বে কর্মরতদের অদ্যবধি অব্যাহতি দেওয়া হয় নি। তাহলে বৈধ ও অবৈধ মিলে বাসস-এ উর্ধ্বতন পদসমূহে দুইজন করে সাংবাদিক কর্মরত আছেন।

যদি তর্কের খাতিরে বা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নতুন এমডি মাহবুব মোর্শেদ অবৈধ চিঠিগুলোকে বৈধতা দিয়ে নতুন করে চিঠি ইস্যু করেন, তাহলেও সেটা অপরাধকে দূর করবে না। অপরাধ কখনো তামাদি হয়না। যেকোন অবৈধ ও বেআইনি কাজকে বৈধতা দিলে তাতে অপরাধকেই জয়যুক্ত করা হয়। পতিত স্বৈরাচারের দূরাত্মার এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বেআইনি সব পদোন্নতি ও পদায়ন বাতিল করা হোক।

এ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ও বেআইনি পন্থায় বাসস-এ বিভিন্ন পদের নিয়োগ বাতিল করে এ দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

বিড়ালের গলায় ঘন্টা পরাবে কে?
“৬ আগস্ট রাতের গণপদোন্নতি”র নামে অনিয়ম ও জালিয়াতি দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগের ঘোষনা দেন। কিন্তু এরই মধ্যে সরকার ও মন্ত্রীসভা বিহীন দেশে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে রাতের বেলা নিজের বাসায় বসে চল্লিশটির বেশি গণপদোন্নতি (গ্রেডআপ) ও পদবী (পদায়ন) প্রদান করেছেন বাসস-এর সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদ। সব আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে অনৈতিক ভাবে রাতের আধাঁরে তিনি এসব অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করেন। পুরনো তারিখ দিয়ে (ব্যাক ডেট) তিনি সেদিনের তালিকার অধিকাংশ ব্যক্তিকে ভুতাপেক্ষ দুই গ্রেড থেকে তিনটি গ্রেড পর্যন্ত ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছেন। ০৬ আগস্ট রাতে ওইসব “গ্রেড-আপ” প্রাপ্ত ব্যক্তিদের একযোগে সবাইকে বিশেষ সংবাদদাতা/ বার্তা সম্পাদক পদে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ বাসস এ অতগুলো সংবাদদাতা/ বার্তা সম্পাদক পদ নাই। এ সব পদন্নোতিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি মাসেই ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে এবং ব্যাপক রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে।

অপরাধের চিহ্ন রেখে গেছেন আবুল কালাম আজাদ। ৬ আগস্ট রাতে সকল নীতি-নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি কয়েক বছর পিছনের তারিখে ওইসব একাধিক ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছেন। রেজিস্ট্রার খাতায় এসব চিঠির ডেলিভারি ডেট দেখা যেতে পারে। স্মারক নম্বরেও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আরও মজার বিষয় হচ্ছে-এসব একাধিক গ্রেডের পদোন্নতি প্রাপ্তদের বেতন চালু হবে আগস্ট থেকে। প্রমান হিসাবে, বাসস-এর জুলাই ২০২৪ মাসের এবং আগস্ট ২০২৪ মাসের বেতন-শিট দেখতে পারেন। পতিত স্বৈরাচারের দূরাত্মার এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বেআইনি সব পদোন্নতি ও গ্রেডআপ বাতিল করা হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

বাসস-এ ভয়াবহ দুর্নীতি-অনিয়ম

নওরোজ রিপোর্ট 
Update Time : ১০:৩৮:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এ কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক গত ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আইন ও বিধি বহিভূতভাবে “প্রধান বার্তা সম্পাদক” ও “প্রধান প্রতিবেদক” “প্রধান বার্তা সম্পাদক (বাংলা)” ও “প্রধান প্রতিবেদক (বাংলা)”-সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে যোগদান করেছেন। আশ্চর্য ঘটনা !!! ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক (এমডি)-কে উপেক্ষা করে বেআইনি ও এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে পুরনো তারিখে (ব্যাক ডেট) এসব চিঠি দিয়েছেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান। অথচ পদায়ন ও নিয়োগপত্রে স্বাক্ষরের এখতিয়ার শুধুমাত্র বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের (এমডি)।

উল্লেখ্য, সরকার নিযুক্ত বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ নিজেই ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে কাজে যোগদান করেছেন। উল্লেখিত পদায়ন ও নিয়োগপত্রে এমডি মাহবুব মোর্শেদ স্বাক্ষর করেননি বলে জানা গেছে। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের পদত্যাগপত্র জমা বা পদত্যাগের ঘোষনা স্বত্ত্বেও বাসস-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মুহাম্মদ আনিসুর রহমান এসব চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাকে সরকার বা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রনালয় বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক পদে কোন নিয়োগদান করে নি।

অর্থাৎ তিনি বাসস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক (এমডি) পদে পূর্নাঙ্গ তো দূরের কথা সরকার তাকে ‘চলতি দায়িত্বে’ বা ‘অতিরিক্তি দায়িত্বে বা ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসাবেও নিযুক্ত করেননি। সার্ভিস রুল (গেজেট) ভুক্ত এসব পদে নিয়োগদানের ক্ষমতা শুধুমাত্র পূর্নাঙ্গ একজন এমডি’র। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কোন ধরনের নিয়োগ- পদায়ন- পদোন্নতি (বা গ্রেডআপ) ও বরখাস্ত (চাকুরিচ্যুতি) করতে পারেন না, তার এ ধরনের কোন এখতিয়ার নাই। একটি মজার বিষয় হলো- বাসস-এ উল্লেখিত বিভিন্ন পদে ইতিপূর্বে কর্মরতদের অদ্যবধি অব্যাহতি দেওয়া হয় নি। তাহলে বৈধ ও অবৈধ মিলে বাসস-এ উর্ধ্বতন পদসমূহে দুইজন করে সাংবাদিক কর্মরত আছেন।

যদি তর্কের খাতিরে বা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নতুন এমডি মাহবুব মোর্শেদ অবৈধ চিঠিগুলোকে বৈধতা দিয়ে নতুন করে চিঠি ইস্যু করেন, তাহলেও সেটা অপরাধকে দূর করবে না। অপরাধ কখনো তামাদি হয়না। যেকোন অবৈধ ও বেআইনি কাজকে বৈধতা দিলে তাতে অপরাধকেই জয়যুক্ত করা হয়। পতিত স্বৈরাচারের দূরাত্মার এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বেআইনি সব পদোন্নতি ও পদায়ন বাতিল করা হোক।

এ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ও বেআইনি পন্থায় বাসস-এ বিভিন্ন পদের নিয়োগ বাতিল করে এ দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

বিড়ালের গলায় ঘন্টা পরাবে কে?
“৬ আগস্ট রাতের গণপদোন্নতি”র নামে অনিয়ম ও জালিয়াতি দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ পদত্যাগের ঘোষনা দেন। কিন্তু এরই মধ্যে সরকার ও মন্ত্রীসভা বিহীন দেশে ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে ৬ আগস্ট ২০২৪ তারিখে রাতের বেলা নিজের বাসায় বসে চল্লিশটির বেশি গণপদোন্নতি (গ্রেডআপ) ও পদবী (পদায়ন) প্রদান করেছেন বাসস-এর সাবেক এমডি আবুল কালাম আজাদ। সব আইন ও বিধি-বিধান লঙ্ঘন করে অনৈতিক ভাবে রাতের আধাঁরে তিনি এসব অফিসিয়াল চিঠি ইস্যু করেন। পুরনো তারিখ দিয়ে (ব্যাক ডেট) তিনি সেদিনের তালিকার অধিকাংশ ব্যক্তিকে ভুতাপেক্ষ দুই গ্রেড থেকে তিনটি গ্রেড পর্যন্ত ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছেন। ০৬ আগস্ট রাতে ওইসব “গ্রেড-আপ” প্রাপ্ত ব্যক্তিদের একযোগে সবাইকে বিশেষ সংবাদদাতা/ বার্তা সম্পাদক পদে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ বাসস এ অতগুলো সংবাদদাতা/ বার্তা সম্পাদক পদ নাই। এ সব পদন্নোতিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রতি মাসেই ব্যাপক ব্যয় বৃদ্ধি হয়েছে এবং ব্যাপক রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে।

অপরাধের চিহ্ন রেখে গেছেন আবুল কালাম আজাদ। ৬ আগস্ট রাতে সকল নীতি-নিয়ম লঙ্ঘন করে তিনি কয়েক বছর পিছনের তারিখে ওইসব একাধিক ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়েছেন। রেজিস্ট্রার খাতায় এসব চিঠির ডেলিভারি ডেট দেখা যেতে পারে। স্মারক নম্বরেও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আরও মজার বিষয় হচ্ছে-এসব একাধিক গ্রেডের পদোন্নতি প্রাপ্তদের বেতন চালু হবে আগস্ট থেকে। প্রমান হিসাবে, বাসস-এর জুলাই ২০২৪ মাসের এবং আগস্ট ২০২৪ মাসের বেতন-শিট দেখতে পারেন। পতিত স্বৈরাচারের দূরাত্মার এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বেআইনি সব পদোন্নতি ও গ্রেডআপ বাতিল করা হোক।