ঝড়ের প্রভাবে প্রবল বর্ষণ
বন্যায় বিপর্যস্ত এশিয়ার চার দেশ, মৃত্যু ৯ শতাধিক
- Update Time : ১২:৪৩:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ১৭ Time View
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস দেখা দিয়েছে, যাতে ঝরেছে ৯ শতাধিক প্রাণ; নিখোঁজ রয়েছে শত শত মানুষ।
সিএনএন লিখেছে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে পৃথককারী মালাক্কা প্রণালিতে এ সপ্তাহে বিরল ক্রান্তীয় ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বর্ষণে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিপর্যস্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা আক্রান্ত হয়েছে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ে, যার প্রভাবে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে ভারতের দক্ষিণ উপকূলেও।
কর্মকর্তাদের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, বৈরী আবহাওয়ায় ইন্দোনেশিয়ায় ৪৩৫ জন, শ্রীলঙ্কায় ৩৩৪ জন, থাইল্যান্ডে ১৬২ জন এবং মালয়েশিয়ায় দুজন মারা গেছেন।
ইন্দোনেশিয়া
ঘূর্ণিঝড় শেন-ইয়ারের প্রভাবে বন্যা ও ভূমিধসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সুমাত্রায় পৌঁছাতে ইন্দোনেশিয়ার উদ্ধারকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকাল রোববারের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইতোমধ্যে সেখানে অন্তত ৪৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৩০৩। এর বাইরে আরও ৪০৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন সবুজ রেইনফরেস্ট, সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ও বিপন্ন ওরাংওটাংয়ের আবাসস্থল সুমাত্রায় হেলিকপ্টার থেকে ত্রাণ ফেলা হচ্ছে।
সুমাত্রার উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আচেহ’র বিরেউন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “বন্যার সময় সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি কাপড় বাঁচাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার বাড়িটাই ধসে পড়ে গেল।”
বন্যার পানির শব্দে রাতে ঘুম ভাঙে উত্তর আচেহর বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সি মাউলিদিনের। তখন তিনি পরিবার নিয়ে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন।
“ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, সব জিনিসপত্র নষ্ট, ঘরের ভেতরে কাদা।”
বৃষ্টির পানিতে উত্তর সুমাত্রা প্রদেশের নদীগুলো মঙ্গলবার উপচে পড়ে; এরপর থেকে উদ্ধারকর্মীরা আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভিডিওতে দেখা যায়, রাবারের নৌকা দিয়ে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
সুমাত্রায় খাদ্য ও পানির সংকটে অনেকেই চুরি করতে বাধ্য হচ্ছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র ফেরি ওয়ালিন্তুকান বলেন, “ত্রাণ পৌঁছানোর আগেই লুটপাট হয়েছে। মানুষ জানত না সাহায্য আসবে, তারা অনাহারে পড়ার ভয় পাচ্ছিল।”
থাইল্যান্ড
প্রণালির ওপারে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে শনিবার পর্যন্ত অন্তত ১৬২ জন মারা গেছেন।
এ বিপর্যয়ে ভুক্তভোগী হয়েছে অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ, রোগীদের এয়ারলিফট করা হচ্ছে এবং ডুবে যাওয়া অঞ্চলে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জরুরি সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে।
গেল শনিবার হাট ইয়াই শহরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ার সময় আমফর্ন কেওফেংক্রো তার পরিবারের আট সদস্য নিয়ে সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তারা উপরের তলায় আশ্রয় নেন এবং ৪৮ ঘণ্টা টেবিল, ওয়াশিং মেশিন ও জানালার কিনারায় বসে কাটান।
তিনি বলেন, “আমরা শুধু বাঁচার কথা ভাবছিলাম।”
পানি সরে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঘরদোর পরিষ্কার করছেন।
আমফর্ন কেওফেংক্রো বলেন, “বানের পানি এড়াতে মাঝে মাঝে আমরা জানলা দিয়ে বাইরে পা রাখতাম।”
এবার হাট ইয়াই শহরে যেরকম ভারি বৃষ্টি ঝরেছে তা গেল ৩০০ বছরে দেখা যায়নি। মঙ্গলার বানের পানি ৮ ফুট পর্যন্ত উপরে উঠে আসে এবং একটি মাতৃসদন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ কবে ফিরবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। সরকারি সংস্থাগুলো উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি চিকিৎসা ও জরুরি সহায়তা দিচ্ছে। ভয়াবহ বন্যার কারণে মঙ্গলবার শঙ্খলা অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। শুক্রবার সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ আফ্রিকার দশ পর্যটককে উদ্ধার করা হয়।
সেখানকার এক মুখপাত্র বলেন, “পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, বন্যার পানি অনেকটা নেমে গেছে। তবে কিছু এলাকায় এখনো বন্যা রয়েছে।’
শ্রীলঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় দিতওয়ার ফলে সৃষ্ট কাদার স্রোত ও বন্যায় শ্রীলঙ্কায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দুর্গত হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৩৩৪ জন মারা গেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ লাখের বেশি মানুষ। ২৫ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে এক লাখ ৪৭ হাজার মানুষ।
৭৮ হাজার মানুষকে স্কুলে তৈরি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন মল্লিকা কুমারী নামের এক নারী।
তিনি বলেন, “টিভিতে সতর্কতা দেখেছিলাম, কিন্তু নদী এত দ্রুত উপচে পড়বে ধারণা করতে পারিনি। কিছুই নিতে পারিনি।”
হুড়োহুড়িতে তিনি তার বিড়ালকে ফেলে যান, পরে তাকে নৌবাহিনী উদ্ধার করে।
১৯১ জন এখনও নিখোঁজ, রাজধানী কলম্বোর আশপাশের বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে। অনেকে পানিতে ডোবা বাড়ির উপরের তলায় থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মালয়েশিয়া
ঘূর্ণিঝড় শেন-ইয়ারে ভূমিধসের তথ্য দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, সেখানে অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৩৪ হাজার মানুষকে আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তরের পেরলিসে বৃদ্ধ দম্পতি গন কাসিম ও তার স্বামী বন্যায় আটকা পড়েন। পরে তাদের এক সন্তান উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান।
গণ বলেন, “যেন সাগরের মতো পানি ছিল।”
জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি দক্ষিণ এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া।
আবহাওয়াবিদরা রয়টার্সকে বলেছেন, ফিলিপিন্সে টাইফুন কোটো এবং মালাক্কা প্রণালিতে অস্বাভাবিক ঘূর্ণিঝড় শেন-ইয়ারের প্রভাবে বর্তমানে চরম আবহাওয়া তৈরি হয়েছে।
এ মাসে ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যায় বহু মানুষ মারা গেছে। ফিলিপিন্সে এক সপ্তাহে দুটি প্রাণঘাতী টাইফুন কালমায়েগি ও ফুং-ওং শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়েছে; বাস্তুচ্যুত করেছে ১৪ লাখের বেশি মানুষকে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা সিএনএনকে বলেন, এই গ্রীষ্মে অঞ্চলটিতে নজিরবিহীন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়



































































































