ফিলিস্তিন ইস্যুতে জরুরি আরব সম্মেলন ডাকল মিসর

- Update Time : ০৮:১৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৩১ Time View
ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি জরুরি আরব সম্মেলনের আয়োজন করছে মিসর। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি এ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। যেখানে আরব লিগের সদস্যদেশগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। খবর মিডল ইস্ট মনিটরের।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘গুরুতর’ বলা হয়েছে।
এই সম্মেলন এমন সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখল করে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন। তার এই প্রস্তাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। এদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য কোথাও পুনর্বাসনের ধারণা রয়েছে, যা আরব বিশ্বে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষা এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গত সপ্তাহে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র পুনর্বাসন করে এই ভূখণ্ডের দখল নেওয়ার কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, একটি ব্যতিক্রমী পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনা ঘোষণা করে গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করা হবে।
ট্রাম্প জানান, তার প্রশাসন গাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নের নেতৃত্ব দেবে, যা এই অঞ্চলের জনগণের ‘চাকরি ও বাসস্থান’ নিশ্চিত করবে।
কিন্তু তিনি কীভাবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক সময় এই মন্তব্য করছেন, যখন হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে এবং গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানান আলোচনা চলছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ মাসের সংঘাতে গাজার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে; যা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের বিপরীত। কারণ, গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীর নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ধারণা দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক আলোচনার অংশ।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘মনোযোগ দেওয়ার মতো’ বলে উল্লেখ করলেও আরব ও কিছু পশ্চিমা মিত্রদেশ এটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ট্রাম্পের মতে, গাজা পুনর্নির্মাণের আগে সেখানে বসবাসরত লাখো মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত। তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ বলেন, গাজার পুনর্গঠনে বহু বছর লেগে যেতে পারে। তাই ফিলিস্তিনিদের জন্য বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা দরকার।
ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, যদি ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে যায়, তবে সেখানে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ তৈরি করা সম্ভব; যা একদিন বিনিয়োগ ও পর্যটনের কেন্দ্র হয়ে উঠবে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন কি না, তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।
গাজা থেকে বাসিন্দাদের সরানোর রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশগাজা থেকে বাসিন্দাদের সরানোর রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশ
এমনটা হলে দুই রাষ্ট্রনীতির ওপর চূড়ান্ত আঘাত আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপন নিয়ে আগেও আন্তর্জাতিক সমালোচনা হয়েছে, যা অধিকাংশ দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে মনে করে।
সর্বোপরি, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন আলোড়ন তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাস্তবায়ন করা একদিকে যেমন কঠিন, তেমনি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্য এতে আরও নড়বড়ে হয়ে উঠতে পারে।
মূলত ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের পরেই ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘গুরুতর’ উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার ডাক দিয়েছে মিসর। আরব লিগের সদস্যদেশগুলোর নেতারা এই সম্মেলনে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়