ঢাকা ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রস্তাব মানতে ইউক্রেনকে ট্রাম্পের আল্টিমেটাম, সংকটে জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১২:০৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ Time View

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের শান্তি প্রস্তাব গ্রহণের জন্য ইউক্রেনকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবে নিজেরা মহাসংকটে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের ভিত্তি হতে পারে উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, কিয়েভ যদি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

গতকাল শুক্রবার ফক্স নিউজ রেডিওকে ট্রাম্প বলেন, তাঁর মতে প্রস্তাবটি গ্রহণের জন্য কিয়েভের জন্য উপযুক্ত সময় আগামী বৃহস্পতিবার। ট্রাম্পের এই মনোভাব দুটি সূত্র আগেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছিল।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, শুক্রবার পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁকে (জেলেনস্কিকে) এটি পছন্দ করতেই হবে। তিনি যদি এটি (শান্তি প্রস্তাব) গ্রহণ না করেন, তাহলে জেনে রাখা ভালো—তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই।’ ‘একটা পর্যায়ে তাঁকে (জেলেনস্কিকে) কিছু না কিছু গ্রহণ করতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

গতকাল কিয়েভে নিজের কার্যালয়ের সামনের রাস্তা থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এখন ইতিহাসের এক কঠিন মুহূর্ত পার করছি। ইউক্রেনের ওপর চাপ এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ইউক্রেন এখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি—আমাদের হয়তো সম্মান হারাতে হবে, অথবা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারকে হারাতে হবে।’

জেলেনস্কি বলেন, ‘পরিকল্পনায় যাতে অন্তত দুটি বিষয় নিয়ে কোনো আপস না হয়, তা নিয়ে আমি দিন-রাত লড়াই চালিয়ে যাব। তা হলো, ইউক্রেনের সম্মান ও স্বাধীনতা।’ এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে তিনি প্রস্তুত আছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের ২৮ দফার শান্তিচুক্তি অনুসারে, ইউক্রেনকে নিজেদের পূর্ব দিকের দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এ অঞ্চল যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখনো কিয়েভের সেনাদের হাতে আছে ,তা-ও মস্কোর কাছে ছাড়তে হবে। বিনিময়ে অন্য অঞ্চলে দখলে নেওয়া ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল ছাড়বে রাশিয়া।

প্রস্তাবের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইউক্রেনকে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে ছয় লাখে নিয়ে আসতে হবে। আর ইউক্রেন কখনো ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না।

গতকাল পুতিন নিজেদের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এটা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব) চূড়ান্ত সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

পুতিন বলেন, ‘কিয়েভ যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না চায় এবং তা প্রত্যাখ্যান করে, তবে তাঁরা এবং ইউরোপীয় যুদ্ধংদেহী শক্তিগুলোকে বুঝতে হবে, (সম্প্রতি) কুপিয়ানস্কে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি রণক্ষেত্রের অন্যান্য অংশেও অপরিহার্যভাবে পুনরাবৃত্তি হবে।’ পুতিন এখানে চলতি মাসের শুরুর দিকে রুশ সেনাদের ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহর দখলে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন।

পুতিন জানান, গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের আগে এই শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর আলোচনা হয়েছে। ওয়াশিংটনের অনুরোধে মস্কো কিছু ছাড়ও দিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

প্রস্তাব মানতে ইউক্রেনকে ট্রাম্পের আল্টিমেটাম, সংকটে জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ১২:০৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের শান্তি প্রস্তাব গ্রহণের জন্য ইউক্রেনকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এমন প্রস্তাবে নিজেরা মহাসংকটে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের ভিত্তি হতে পারে উল্লেখ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, কিয়েভ যদি প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

গতকাল শুক্রবার ফক্স নিউজ রেডিওকে ট্রাম্প বলেন, তাঁর মতে প্রস্তাবটি গ্রহণের জন্য কিয়েভের জন্য উপযুক্ত সময় আগামী বৃহস্পতিবার। ট্রাম্পের এই মনোভাব দুটি সূত্র আগেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছিল।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, শুক্রবার পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁকে (জেলেনস্কিকে) এটি পছন্দ করতেই হবে। তিনি যদি এটি (শান্তি প্রস্তাব) গ্রহণ না করেন, তাহলে জেনে রাখা ভালো—তাঁদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই।’ ‘একটা পর্যায়ে তাঁকে (জেলেনস্কিকে) কিছু না কিছু গ্রহণ করতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

গতকাল কিয়েভে নিজের কার্যালয়ের সামনের রাস্তা থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এখন ইতিহাসের এক কঠিন মুহূর্ত পার করছি। ইউক্রেনের ওপর চাপ এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ইউক্রেন এখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি—আমাদের হয়তো সম্মান হারাতে হবে, অথবা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারকে হারাতে হবে।’

জেলেনস্কি বলেন, ‘পরিকল্পনায় যাতে অন্তত দুটি বিষয় নিয়ে কোনো আপস না হয়, তা নিয়ে আমি দিন-রাত লড়াই চালিয়ে যাব। তা হলো, ইউক্রেনের সম্মান ও স্বাধীনতা।’ এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে তিনি প্রস্তুত আছেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের ২৮ দফার শান্তিচুক্তি অনুসারে, ইউক্রেনকে নিজেদের পূর্ব দিকের দনবাস অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এ অঞ্চল যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখনো কিয়েভের সেনাদের হাতে আছে ,তা-ও মস্কোর কাছে ছাড়তে হবে। বিনিময়ে অন্য অঞ্চলে দখলে নেওয়া ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল ছাড়বে রাশিয়া।

প্রস্তাবের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ইউক্রেনকে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে ছয় লাখে নিয়ে আসতে হবে। আর ইউক্রেন কখনো ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না।

গতকাল পুতিন নিজেদের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এটা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব) চূড়ান্ত সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

পুতিন বলেন, ‘কিয়েভ যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না চায় এবং তা প্রত্যাখ্যান করে, তবে তাঁরা এবং ইউরোপীয় যুদ্ধংদেহী শক্তিগুলোকে বুঝতে হবে, (সম্প্রতি) কুপিয়ানস্কে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি রণক্ষেত্রের অন্যান্য অংশেও অপরিহার্যভাবে পুনরাবৃত্তি হবে।’ পুতিন এখানে চলতি মাসের শুরুর দিকে রুশ সেনাদের ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহর দখলে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন।

পুতিন জানান, গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের আগে এই শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে মস্কোর আলোচনা হয়েছে। ওয়াশিংটনের অনুরোধে মস্কো কিছু ছাড়ও দিয়েছে।