প্রধান শিক্ষকের উদ্যোগে বদলে গেছে একটি বিদ্যালয়

- Update Time : ১২:৪৩:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৪৩ Time View
নব্বইয়ের দশকেও সেখানে ছিল না মানসম্পন্ন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পড়ালেখার বদলে আড্ডা আর টিভি দেখে সময় কাটতো শিশু-কিশোরদের। সেই চিত্র এখন আর নেই।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়-এই চিত্র বদলে দেয়ার কারিগর। ২০০০ সালে ছেলে মেয়েদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় প্রতিষ্ঠাতা শাহ আলমের হাত ধরে।
ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০০৩ সালে যোগদান করেন তানজিনা আক্তার লাইজু। তার যোগদান পর থেকে বদলে গেছে বিদ্যালয়টির চিত্র। যিনি শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই নয়, জীবনে চলার প্রয়োজনীয় সব জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন। বিদ্যালয়টিকে শতভাগ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই বিদ্যালয়টির রূপকারের নাম তানজিনা আক্তার লাইজু। তিনি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টিকে উন্নত করতে কাজ শুরু করেন। গত পাঁচ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হারও নিয়ে এসেছেন শূন্যের কোঠায়। এ ছাড়াও বেড়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং জেএসসি পরীক্ষার ফলেও এসেছে সাফল্য। বিদ্যালয়টি শুরুতে টিনের চালা এখন বিদ্যালয়টি করা হয়েছে পাকাঁ করণ। নিজের সন্তান মনে করে পাঠদান করানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
মাগুড়া ইউনিয়ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গত তিন বছরে জেএসসি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে ছাত্ররা। শতভাগ পাস ছাড়াও এ প্লাস পেয়েছে ১ জন ছাত্র। ২০২০ সালে এই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ৭৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৮ জন পাস করেছে।
এর আগে ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় ৩৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৬ পাস করেছে। ২০২১ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৮৪ জন। পাসের হার ১০০%। এ প্লাস পেয়েছে ১ জন ছাত্র।
জানা গেছে, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন ও অনুসরণ, সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের উন্নয়ন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষ ও আধুনিক বিজ্ঞানাগার ও বই-সমৃদ্ধ লাইব্রেরি, এসএমএস সিস্টেম চালু, ডায়নামিক ওয়েবসাইট চালুকরণ।
৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরশি আক্তার বলে, ‘আমাদের শিক্ষকরা অনেক প্রশিক্ষণই দেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞানসহ নানান বিষয়ে প্রতিযোগিতায় জ্ঞানার্জনে আমাদের সহযোগিতা করা হয়।’
সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বাবলী আক্তার বলে, ‘বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হয়। এখানে ভর্তি হওয়ার পর জানতে পেরেছি স্যাররা নিজের সন্তানের মতো ক্লাস করান। এতে আমার পড়ালেখা বুঝতে সুবিধা হচ্ছে।’
সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়া, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা। শতভাগ ডিজিটাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে আমাদের বিদ্যালয় সফলতা অর্জন করবে। সাহিত্য চর্চা, খেলাধুলা, আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এই বিদ্যালয়টিতে ঘাটতি রয়েছে একটি ডিজিটাল ল্যাবের। সে কারনে ডিজিটাল শিক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
প্রধান শিক্ষক তানজিনা আক্তার লাইজু বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরুর পর মনের ইচ্ছা ছিল একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ। ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা প্রদান, পাঠ্যবইয়ের বাইরে থেকে জ্ঞান আহরণ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পারদর্শী করতে শিক্ষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়সীমার বাইরেও তারা কাজ করছেন। কিছু বিষয়ে সমস্যা রয়েছে, যেগুলোতে সরকারিভাবে পদক্ষেপ ও পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। এগুলোর সমাধান হলে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে যাবো।