পাঁচ সাংবাদিককে হেনস্থাকারী সেই এসিল্যান্ড এখনও বদলি হননি; উদ্বিগ্ন সাংবাদিকরা!
- Update Time : ০৫:১২:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
- / ২১৩ Time View
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের (টুপি পরিহিত) বিরুদ্ধে পাঁচ সাংবাদিককে কার্যালয়ে আটকে রেখে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত।
লালমনিরহাটে জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় ৫জন সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকিয়ে রেখে হেনস্থাকারী লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকার এর বদলির আদেশ কাযর্কর করা হয়নি এখনও।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাতে তার বদলির আদেশ দেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার। তাকে লালমনিরহাট সদর উপজেলা থেকে বদলি করা হয় ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায়। কিন্তু তিনি মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত লালমনিরহাট সদর উপজেলায় কর্মরত আছেন। আদেশের পরও এসিল্যান্ডের বদলি দ্রুত কার্যকর না হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাটের কর্মরত সাংবাদিকরা। সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে প্রেসক্লাব লালমনিরহাটে এক জরুরী সভার আয়োজন করে সাংবাদিকরা তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন।
সাংবাদিকরা জানান, এসিল্যান্ডের বদলির আদেশকে কেন্দ্র করে কিছু তরুণ এসিল্যান্ডের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিক সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব তরুণ বিএনপি-জামায়াত ও আহলে হাদীস সমর্থিত পরিবারের সদস্য। এসিল্যান্ডের বদলির আদেশে বলা হয়েছে ‘জনস্বার্থে জারীকৃত এ অবিলম্বে এই আদেশ কাযর্কর করা হবে’ কিন্তু এখনও তা কাযর্কর করা হয়নি। তার বদলি বাতিলের জন্য একটি সুবিধাবাদী পক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাংবাদিকরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে অফিসে জমির খারিজ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য যাওয়া ৫ সাংবাদিকদের আটকিয়ে হেনস্থা করেন এসিল্যান্ড মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকার। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জেলে পাঠানোর প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অফিসের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন। লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে এসিল্যান্ড সাংবাদিক সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করলে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তেজিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই এসিল্যান্ড বিক্ষুদ্ধ হয়ে তার অফিস চত্ত্বরে অবস্থানকারী চ্যানল আইয়ের ক্যামেরা পার্সনের মোটর সাইকেলের কাগজপত্র থাকা সত্বেও তা আটক করে ৫হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মাইটিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার লালমনিরহাট প্রতিনিধি মাহফুজ সাজু জানান, ‘এসি ল্যান্ড ছাড়াই অফিস সহকারীরা ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি করছিলেন। আমি এ ঘটনার ভিডিও রেকর্ড করছিলাম। বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রথমে আমাকে এবং পরে সেখানে উপস্থিত হওয়া অপর চার সাংবাদিককে আটক করা হয়। এ সময় আমাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এসি ল্যান্ড। প্রত্যাহার বা তাৎক্ষণিক বদলি করা কোনো শাস্তি নয়। অভিযুক্ত এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তারা বলেন, এসিল্যান্ড আমাদেরকে অবর্ণনীয়ভাবে হেনস্থা করেছেন। এডিসি রেভিনিউ অফিসের তালা খুলে আমাদের মুক্ত না করলে সেদিন এসিল্যান্ড আমাদেরকে জেলে পাঠিয়ে দিতেন। এসিল্যান্ড সাংবাদিকদের প্রতি ক্ষুদ্ধ-বিক্ষুদ্ধ। তার বদলি দ্রুত কাযর্কর না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি তার বদলি ঠেকাতে নানাভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহবায়ক মোঃ আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন,‘এসিল্যান্ড প্রত্যাহার হওয়ায় আমাদের আংশিক দাবি পূরণ হয়েছে। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তপূর্বক শাস্তির দাবি করছি। আমরা প্রেসক্লাবে জরুরী সভা করেছি। সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’ এসিল্যান্ডের বদলি দ্রুত কাযর্কর ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ সাংবাদিকদের জানান, এসিল্যান্ডের বদলির আদেশ দ্রুত কাযর্কর করা হবে। লালমনিরহাট সদর উপজেলায় যোগদান করতে বলা হয়েছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার এসিল্যান্ডকে। লালমনিরহাটে তার যোগদানে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার এসিল্যান্ডের বদলির আদেশ কাযর্কর করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এ আদেশ অবশ্যই কাযর্কর হবে।