ঢাকা ১০:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পলাশের সুগন্ধিযুক্ত সাগর কলা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

বোরহান মেহেদী, পলাশ( নরসিংদী) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২২১ Time View

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সাগর কলার সুনাম রয়েছে যুগ যুগ ধরে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে। সুগন্ধি যুক্ত এই সুস্বাদু সাগর কলা সবার কাছে সমাদৃত। এখানকার সাগর কলায় আজও বিদ্যমান রয়েছে সেই অমৃতের স্বাদ। যা একবার খেলে মন থাকে বহুদিন। এক কথায় দেশে সুস্বাদু কলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদীর পলাশ উপজেলা। সাগর, চাম্পা বা চাপা, হোমাই, গেরাসুন্দর ও শবরী কলা সহ প্রায় ১০ প্রকার কলার চাষ করা হয় এই এলাকাটিতে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার চাষ করা হয় উপজেলার চরসুন্দর ও জিনারদী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। হারিদোয়া নদের দুই তীর দো’য়াশ বেলে মাটিতে পাঁচশত হেক্টর মজিতে এই কলার আবাদ হয়। উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে সাগর কলাই দখল করে রেখেছে প্রথম স্থান।

পলাশ উপজেলার সবচেয়ে বড় কলার পাইকারী হাট হচ্ছে চরসিন্দুর, তালতলি ও চনরগর্দী। কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি কলার ছড়া বিক্রি করেন এসব বাজারে। এখান থেকে কলা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায় পাইকাররা। এই কলার একটি অংশ রাজধানী ঢাকা হয়ে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের প্রায় ১৬ টি দেশে রপ্তানি করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফল বা ফসলের মধ্যে, গম, ধান ও ভূট্টার পরে কলার স্থান। অর্থাৎ চতুর্থ নাম্বারে। দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন কলার চাহিদা বেড়েই চলছে।

এ ব্যাপারে ৬০ বছর যাবৎ কলা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত পলাশ উপজেলার বারারচর গ্রামের তাজু মিয়া জানান, আমার পূর্ব পুরুষরাও কলা বিক্রির সাথে জড়িত ছিলো। আমরা পাইকারি বাজার থেকে কলা ক্রয় করে তা পাকানোর পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নিয়ে বিক্রি করি।

সুগন্ধি যুক্ত সাগর কলা অমৃতের স্বাদ কেন জানতে চাইলে ৭৫ বছর বয়সী তাজু মিয়া জানান, তুষের আগুনের তাপ দিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কলা পাকাই বলে এতো সুস্বাদু।

গজাড়িয়ার খাসহাওলা গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, ২০ বছর যাবৎ সাগর কলার আবাদ করি, আমার পূর্ব পুরুষরাও কলার আবাদ করতো। কলার আবাদী জমিতে আমরা সবচেয়ে বেশি জৈবসার ব্যাবহার করে থাকি।এখানকার মাটি এটেল এবং দোআঁশ, যার কারণে কলার ফলন খুব ভালো হয়।

চরসিংন্দুরের সবুজ মিয়া জানান, প্রতি বিঘায় ৪শ কলার চারা রোপণ করতে পারি। বিঘা প্রতি খরচ হয়, ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, বিক্রি করতে পারি ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। কলার কাধি বের হওয়ার সাথে সাথে দাগমুক্ত রাখতে  বাসুডিন বা ডিডি পাউডার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেই। এতে করে কলার ছড়ায়  চমক আশে এবং বিক্রিও করা যায় বেশি দামে।

এ ব্যাপারে জিনারদী রেলওয়ে ষ্টেশনের লেবার ইনচার্জ মনির হোসেন জানান, চরসিন্দুর, জিনারদী ও মনোহরদীসহ বিভিন্ন স্থানে কলা ব্যাবসায়ী রয়েছে। এর সাথে জড়িত প্রায় ১০ হাজার দিনমজুর। কলা উৎপাদন ও বিক্রির সাথে তারা জড়িত। ৪০ বছর আগেও কলার গাড়ী নামে একটি রেলগাড়ী ছিল, যে গাড়ি দিয়ে নরসিংদীর কলা ব্যাবসায়ীরা রাজধানী ঢাকায় কলা নিয়ে যেতো।

পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার বলেন, উপজেলায় কলা উৎপাদন নিয়ে আমরা খুবি আশাবাদি। পলাশের মাটি দো’আশ থাকায় এই মাটিতে কলা চাষের জন্য অতি উত্তম। আমরা কলা উৎপাদনে নজর রাখছি। কলা চাষীদের সার ও প্রয়েজনীয় কিটনাশক সরবারহ করছি।  বিশেষ করে পলাশের সুগন্ধী সাগরকলা দেশ ও বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

পলাশের সুগন্ধিযুক্ত সাগর কলা রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

বোরহান মেহেদী, পলাশ( নরসিংদী) প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:৫৪:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার সাগর কলার সুনাম রয়েছে যুগ যুগ ধরে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে। সুগন্ধি যুক্ত এই সুস্বাদু সাগর কলা সবার কাছে সমাদৃত। এখানকার সাগর কলায় আজও বিদ্যমান রয়েছে সেই অমৃতের স্বাদ। যা একবার খেলে মন থাকে বহুদিন। এক কথায় দেশে সুস্বাদু কলার জন্য বিখ্যাত নরসিংদীর পলাশ উপজেলা। সাগর, চাম্পা বা চাপা, হোমাই, গেরাসুন্দর ও শবরী কলা সহ প্রায় ১০ প্রকার কলার চাষ করা হয় এই এলাকাটিতে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলার চাষ করা হয় উপজেলার চরসুন্দর ও জিনারদী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। হারিদোয়া নদের দুই তীর দো’য়াশ বেলে মাটিতে পাঁচশত হেক্টর মজিতে এই কলার আবাদ হয়। উৎপাদন ও রপ্তানির ক্ষেত্রে সাগর কলাই দখল করে রেখেছে প্রথম স্থান।

পলাশ উপজেলার সবচেয়ে বড় কলার পাইকারী হাট হচ্ছে চরসিন্দুর, তালতলি ও চনরগর্দী। কৃষকরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি কলার ছড়া বিক্রি করেন এসব বাজারে। এখান থেকে কলা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায় পাইকাররা। এই কলার একটি অংশ রাজধানী ঢাকা হয়ে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের প্রায় ১৬ টি দেশে রপ্তানি করা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফল বা ফসলের মধ্যে, গম, ধান ও ভূট্টার পরে কলার স্থান। অর্থাৎ চতুর্থ নাম্বারে। দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে দিন দিন কলার চাহিদা বেড়েই চলছে।

এ ব্যাপারে ৬০ বছর যাবৎ কলা ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত পলাশ উপজেলার বারারচর গ্রামের তাজু মিয়া জানান, আমার পূর্ব পুরুষরাও কলা বিক্রির সাথে জড়িত ছিলো। আমরা পাইকারি বাজার থেকে কলা ক্রয় করে তা পাকানোর পরে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নিয়ে বিক্রি করি।

সুগন্ধি যুক্ত সাগর কলা অমৃতের স্বাদ কেন জানতে চাইলে ৭৫ বছর বয়সী তাজু মিয়া জানান, তুষের আগুনের তাপ দিয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কলা পাকাই বলে এতো সুস্বাদু।

গজাড়িয়ার খাসহাওলা গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, ২০ বছর যাবৎ সাগর কলার আবাদ করি, আমার পূর্ব পুরুষরাও কলার আবাদ করতো। কলার আবাদী জমিতে আমরা সবচেয়ে বেশি জৈবসার ব্যাবহার করে থাকি।এখানকার মাটি এটেল এবং দোআঁশ, যার কারণে কলার ফলন খুব ভালো হয়।

চরসিংন্দুরের সবুজ মিয়া জানান, প্রতি বিঘায় ৪শ কলার চারা রোপণ করতে পারি। বিঘা প্রতি খরচ হয়, ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, বিক্রি করতে পারি ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। কলার কাধি বের হওয়ার সাথে সাথে দাগমুক্ত রাখতে  বাসুডিন বা ডিডি পাউডার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছিটিয়ে দেই। এতে করে কলার ছড়ায়  চমক আশে এবং বিক্রিও করা যায় বেশি দামে।

এ ব্যাপারে জিনারদী রেলওয়ে ষ্টেশনের লেবার ইনচার্জ মনির হোসেন জানান, চরসিন্দুর, জিনারদী ও মনোহরদীসহ বিভিন্ন স্থানে কলা ব্যাবসায়ী রয়েছে। এর সাথে জড়িত প্রায় ১০ হাজার দিনমজুর। কলা উৎপাদন ও বিক্রির সাথে তারা জড়িত। ৪০ বছর আগেও কলার গাড়ী নামে একটি রেলগাড়ী ছিল, যে গাড়ি দিয়ে নরসিংদীর কলা ব্যাবসায়ীরা রাজধানী ঢাকায় কলা নিয়ে যেতো।

পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আয়েশা আক্তার বলেন, উপজেলায় কলা উৎপাদন নিয়ে আমরা খুবি আশাবাদি। পলাশের মাটি দো’আশ থাকায় এই মাটিতে কলা চাষের জন্য অতি উত্তম। আমরা কলা উৎপাদনে নজর রাখছি। কলা চাষীদের সার ও প্রয়েজনীয় কিটনাশক সরবারহ করছি।  বিশেষ করে পলাশের সুগন্ধী সাগরকলা দেশ ও বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।