ঢাকা ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৪ বিচারকের বিদায় সংবর্ধনা কিসের পাওয়ারে ট্রিপল মার্ডারের আসামি জহিরুল বাহিরে টঙ্গীর জাভান হোটেলে পুলিশের অভিযানে বিদেশি মদ জব্দ, গ্রেফতার ৭ ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আসামী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার ইরানি দম্পতির ওপর হামলা, কারাগারে ৪ আসামি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাসিক নিষ্পত্তি সভা অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা! ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস! ছিনতাইকারীর কবল থেকে ইরানী দম্পতিকে উদ্ধার করলো সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থাকলে স্থানীয়দের চাকরি থাকবে এটাই শেষ কথা!

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
  • Update Time : ০৪:২১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৮৬ Time View

কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে ২০১২ সালে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। সেখানে উল্লেখ করা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন শিক্ষক কোচিং চালাতে পারবে না। ওই নীতিমালায় আরও বলা আছে, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। তবে ওই শিক্ষার্থীদের নাম, রোল ও শ্রেণি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানাতে হবে। কিন্তু এ নীতিমালা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে কেউ মানছে না। চলছে দিনে ও রাতে কোচিং সেন্টার। এ ব্যাপারে চুপচাপ শিক্ষা অফিস।
নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা অফিস বসে আছে ‘হাত গুটিয়ে’। ফলে এটি এখন ‘কাগুজে নাতিমালা’য় পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিশোরগঞ্জে স্কুল শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন শত শত কোচিং সেন্টার।
সেখানে ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী পড়তে আসছে বেশী।

উপজেলার আশপাশে হাঁটলে কোচিং সেন্টারের বহু সাইনবোর্ড চোখে পড়ে, সেগুলোতে সরকারি, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা চালান। শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার খুলতে পারেন না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে, কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারেন না। নিজে কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতেও পারেন না। তারপরেও চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ টাকা নেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এ অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন।

তবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ কোচিং বাণিজ্যরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে তদারকি করতে উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে আট সদস্যের কমিটি গঠনের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। বাস্তবে এসব কমিটির কার্যকারিতা দেখা যায় না।

নীতিমালা অনুসারে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতনভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন একধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তি হতে পারে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওহীন শিক্ষকের বেলাও একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এমপিওহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও একই শাস্তির কথা বলা রয়েছে নীতিমালায়। তবে ১০ বছরেও একজন শিক্ষককেও কোচিং সেন্টার পরিচালনার দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে দেখা যায়নি।

কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি
কিশোরগঞ্জে রয়েছে সরকারি, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের অনেক কোচিং সেন্টার।
ভিক্টোরি স্টাডি হোম কোচিং সেন্টার,সৃষ্টি বৈকালীন কোচিং সেন্টার,ফ্রেন্ডস টিউটর হোম কোচিং সেন্টার।
এছাড়াও রয়েছে কিশোরগঞ্জ সরকারি কলেজ মোড় হতে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন বাসাবাড়ি হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে হয়ে উঠেছে স্কুলের বিকল্প; অনেকের কাছে শ্রেণিকক্ষের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে ৩০টি এর অধিক কোচিং সেন্টার।
কিশোরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরই এসব কোচিং সেন্টারে বেশি আসতে দেখা যায়।

সৃষ্টি বৈকালীন কোচিং সেন্টারের নামের একটি কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার ৭ম থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়তে এসেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসে সব পড়ানো হয় না, কোচিং করলে সিলেবাস শেষ হয়।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, ক্লাসে এখন তেমন কিছুই পড়ানো হয় না, সেজন্য কোচিংয়ে পড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। অন্য শিক্ষকের কাছে পড়ানোর চেয়ে স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়ানোকে তারা ভালো মনে করেন, কারণ তাতে রেজাল্ট ভালো হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক জানান, কোচিং সেন্টার সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ তারপরেও কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং সেন্টার চালু করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
Update Time : ০৪:২১:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে ২০১২ সালে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। সেখানে উল্লেখ করা আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন শিক্ষক কোচিং চালাতে পারবে না। ওই নীতিমালায় আরও বলা আছে, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। তবে ওই শিক্ষার্থীদের নাম, রোল ও শ্রেণি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানাতে হবে। কিন্তু এ নীতিমালা নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে কেউ মানছে না। চলছে দিনে ও রাতে কোচিং সেন্টার। এ ব্যাপারে চুপচাপ শিক্ষা অফিস।
নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা অফিস বসে আছে ‘হাত গুটিয়ে’। ফলে এটি এখন ‘কাগুজে নাতিমালা’য় পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কিশোরগঞ্জে স্কুল শিক্ষকরা গড়ে তুলেছেন শত শত কোচিং সেন্টার।
সেখানে ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী পড়তে আসছে বেশী।

উপজেলার আশপাশে হাঁটলে কোচিং সেন্টারের বহু সাইনবোর্ড চোখে পড়ে, সেগুলোতে সরকারি, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা চালান। শিক্ষকরা কোচিং সেন্টার খুলতে পারেন না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে, কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারেন না। নিজে কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতেও পারেন না। তারপরেও চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড়শ টাকা নেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ইচ্ছা করলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এ অতিরিক্ত কোচিংয়ের টাকা কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন।

তবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ কোচিং বাণিজ্যরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধে তদারকি করতে উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে আট সদস্যের কমিটি গঠনের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। বাস্তবে এসব কমিটির কার্যকারিতা দেখা যায় না।

নীতিমালা অনুসারে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাঁর এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতনভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন একধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তি হতে পারে। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওহীন শিক্ষকের বেলাও একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এমপিওহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও একই শাস্তির কথা বলা রয়েছে নীতিমালায়। তবে ১০ বছরেও একজন শিক্ষককেও কোচিং সেন্টার পরিচালনার দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে দেখা যায়নি।

কোচিং সেন্টারের ছড়াছড়ি
কিশোরগঞ্জে রয়েছে সরকারি, বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের অনেক কোচিং সেন্টার।
ভিক্টোরি স্টাডি হোম কোচিং সেন্টার,সৃষ্টি বৈকালীন কোচিং সেন্টার,ফ্রেন্ডস টিউটর হোম কোচিং সেন্টার।
এছাড়াও রয়েছে কিশোরগঞ্জ সরকারি কলেজ মোড় হতে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন বাসাবাড়ি হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে হয়ে উঠেছে স্কুলের বিকল্প; অনেকের কাছে শ্রেণিকক্ষের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে ৩০টি এর অধিক কোচিং সেন্টার।
কিশোরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো নামি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরই এসব কোচিং সেন্টারে বেশি আসতে দেখা যায়।

সৃষ্টি বৈকালীন কোচিং সেন্টারের নামের একটি কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার ৭ম থেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়তে এসেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ক্লাসে সব পড়ানো হয় না, কোচিং করলে সিলেবাস শেষ হয়।

কয়েকজন অভিভাবক জানান, ক্লাসে এখন তেমন কিছুই পড়ানো হয় না, সেজন্য কোচিংয়ে পড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। অন্য শিক্ষকের কাছে পড়ানোর চেয়ে স্কুলের শিক্ষকের কাছে পড়ানোকে তারা ভালো মনে করেন, কারণ তাতে রেজাল্ট ভালো হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক জানান, কোচিং সেন্টার সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ তারপরেও কোন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কোচিং সেন্টার চালু করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।