ঢাকা ০৪:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন কমিশনের ৪২ কোটি টাকার যন্ত্র এখন ভাঙারি

জাতীয় ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১৬৩ Time View

রাতের ভোটের কারিগরখ্যাত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার আমলে ৪২ কোটি টাকায় একটি বিশেষ যন্ত্র বা পাসওয়ার্ড মেশিন কেনা হয়েছিল, যা কোনো কাজে আসেনি। অযত্ন-অবহেলায় এখন সেটি ভাঙারিতে পরিণত হচ্ছে।

ভোটগ্রহণের কাজে ব্যবহারের জন্য কেনা যন্ত্রটির নাম কার্ড পাসওয়ার্ড বা স্মার্টকার্ড প্রি-পারসোনালাইজেশন অ্যান্ড পারসোনালাইজেশন সিস্টেম অ্যান্ড মেশিন। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেটি কেনে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অর্থ বরাদ্দ ছাড়া এ যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে অন্ধকারে। তারা স্বীকার করেছেন—অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কেনা মেশিনটি ইসির জন্য এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। এর আগে মেয়াদ না বাড়ানো এ প্রকল্পের জিনিসপত্র থেকে সব যন্ত্রাংশ বুঝে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সাড়ে ৪২ কোটি টাকার মেশিনটি বিএমটিএফ থেকে বুঝে নেয় ইসি। কিন্তু এসব জিনিসপত্রের পেছনে মাসে মাসে বড় অঙ্কের টাকা গচ্ছা দিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

সারা দেশে গুদাম ভাড়া নিয়ে মেশিনগুলো সংরক্ষণের পেছনে এ অর্থ ব্যয় পাশাপাশি ইভিএমে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য কেনা দুর্লভ এই মেশিনের অবস্থাও শোচনীয়। অরক্ষিত ও অযত্নে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে ফেলে রাখা হয়েছে। এর যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে এখন পরিত্যক্ত ঘোষণার অপেক্ষায় আছে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, যন্ত্রটি চালানোর মতো জনবল নেই ইসির। যারা এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ আছেন, তারাও এ সম্পর্কে অজ্ঞ। এ কারণে টাকা উসুল করার জন্য অন্য কাজে এটি ব্যবহার করাও অনিশ্চিত। কর্মকর্তারা জানান, অধিক মূল্যের এ মেশিন কার্যকর রাখার জনবল নেই। কীভাবে চালাতে হয় তাও কেউ জানে না। এটি চালানোর পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল বিএমটিএফের কবজায়। তারা কী করেছে না করেছে, আমরা কেউ জানি না।

জানা গেছে, তিনটি কাজে পাসওয়ার্ড কার্ড মেশিন ব্যবহারের সুযোগ ছিল। এর একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট কার্ড (আইসিসি বা আইসি কার্ড), সিকিউর ডিজিটাল কার্ড (এসডি কার্ড) এবং পোলিং কার্ড। কার্ডগুলো যেকোনো ভোটে ইভিএম মেশিনে তথ্য লোড-আনলোডের কাজে ব্যবহার হতো।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক উপসচিব জানান, যাচাই-বাছাই ছাড়াই ইভিএমের কার্ড ম্যানেজমেন্ট মেশিনটি কেনা হয় সাড়ে ৪২ কোটি টাকায়। বলা যায়, ওই টাকার পুরোটাই রাষ্ট্রের গচ্ছা।

Please Share This Post in Your Social Media

নির্বাচন কমিশনের ৪২ কোটি টাকার যন্ত্র এখন ভাঙারি

জাতীয় ডেস্ক
Update Time : ০৪:৪১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

রাতের ভোটের কারিগরখ্যাত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার আমলে ৪২ কোটি টাকায় একটি বিশেষ যন্ত্র বা পাসওয়ার্ড মেশিন কেনা হয়েছিল, যা কোনো কাজে আসেনি। অযত্ন-অবহেলায় এখন সেটি ভাঙারিতে পরিণত হচ্ছে।

ভোটগ্রহণের কাজে ব্যবহারের জন্য কেনা যন্ত্রটির নাম কার্ড পাসওয়ার্ড বা স্মার্টকার্ড প্রি-পারসোনালাইজেশন অ্যান্ড পারসোনালাইজেশন সিস্টেম অ্যান্ড মেশিন। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সেটি কেনে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অর্থ বরাদ্দ ছাড়া এ যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা ছিল না। বর্তমান কমিশনের কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে অন্ধকারে। তারা স্বীকার করেছেন—অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কেনা মেশিনটি ইসির জন্য এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত করেছে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। এর আগে মেয়াদ না বাড়ানো এ প্রকল্পের জিনিসপত্র থেকে সব যন্ত্রাংশ বুঝে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সাড়ে ৪২ কোটি টাকার মেশিনটি বিএমটিএফ থেকে বুঝে নেয় ইসি। কিন্তু এসব জিনিসপত্রের পেছনে মাসে মাসে বড় অঙ্কের টাকা গচ্ছা দিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

সারা দেশে গুদাম ভাড়া নিয়ে মেশিনগুলো সংরক্ষণের পেছনে এ অর্থ ব্যয় পাশাপাশি ইভিএমে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য কেনা দুর্লভ এই মেশিনের অবস্থাও শোচনীয়। অরক্ষিত ও অযত্নে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে ফেলে রাখা হয়েছে। এর যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে এখন পরিত্যক্ত ঘোষণার অপেক্ষায় আছে।

নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, যন্ত্রটি চালানোর মতো জনবল নেই ইসির। যারা এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ আছেন, তারাও এ সম্পর্কে অজ্ঞ। এ কারণে টাকা উসুল করার জন্য অন্য কাজে এটি ব্যবহার করাও অনিশ্চিত। কর্মকর্তারা জানান, অধিক মূল্যের এ মেশিন কার্যকর রাখার জনবল নেই। কীভাবে চালাতে হয় তাও কেউ জানে না। এটি চালানোর পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল বিএমটিএফের কবজায়। তারা কী করেছে না করেছে, আমরা কেউ জানি না।

জানা গেছে, তিনটি কাজে পাসওয়ার্ড কার্ড মেশিন ব্যবহারের সুযোগ ছিল। এর একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট কার্ড (আইসিসি বা আইসি কার্ড), সিকিউর ডিজিটাল কার্ড (এসডি কার্ড) এবং পোলিং কার্ড। কার্ডগুলো যেকোনো ভোটে ইভিএম মেশিনে তথ্য লোড-আনলোডের কাজে ব্যবহার হতো।

বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক উপসচিব জানান, যাচাই-বাছাই ছাড়াই ইভিএমের কার্ড ম্যানেজমেন্ট মেশিনটি কেনা হয় সাড়ে ৪২ কোটি টাকায়। বলা যায়, ওই টাকার পুরোটাই রাষ্ট্রের গচ্ছা।