নতুন আইন সচিব যোগদানের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে মন্ত্রনালয়
- Update Time : ০৬:৩০:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৫৪ Time View
আইন মন্ত্রনালয়ে লিয়াকত আলী মোল্লা আইন সচিব হিসেবে যোগদানের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে মন্ত্রনালয়ের সকল কার্যক্রম। নেয়া হচ্ছেনা অভিযুক্ত দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম ও থমকে গেছে। নিয়োগ বাণিজ্য ঘুষ দুর্নীতি নারী নির্যাতন ও নারী কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেও নেয়া হচ্ছেনা কোন ব্যবস্থা।
বর্তমান আইনসচিব জনাব লিয়াকত আলী মোল্লা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে গোমস্তাপুর থানার মামলা নাম্বার-২ (২/১২/২০১৯ তারিখে) জিআর নং-২৯৪/১৯ (গোমস্তাপুর) ১০ কেজি পরিমাণ হেরোইন সহ গ্রেফতারকৃত আসামী হিরা ওরফে হিরো ওরফে প্রিন্স খানকে ২৬/২/২০২০ তারিখে ফৌজদারি মিস ৩৬৬/২০২০ মোকদ্দমায় জামিন প্রদান করেন।
এরআগে অপর আরো একটি হেরোইন মামলায় ৩কেজি২০০গ্রাম হেরোইন ও ৩২ প্যাকেট ইয়াবাসহ গ্রেফতারকৃত আসামী শফিকুল ইসলাম ওরফে লাদেনকে ৫/১১/১৮ ইং তারিখে জামিন দেন আলোচ্য জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। যার জি আর নং-৪৪৩/১৬ (চাঁপাই) ফৌজদারি মিসকেস নং-১৪৭৭/১৮ আদেশ নং-২ তারিখ ৫/১১/২০১৮।
এভাবে মাদক মামলার বহু আসামীকে নির্দ্বিধায় জামিন দিয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জজ কোর্ট প্রাঙ্গণের দোকান-পাট, হোটেল ও গ্যারেজ ভাড়া বাবদ প্রাপ্ত ১৪ লক্ষ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন তৎকালীন জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা।
এছাড়া, কোর্টের নতুন ভবনের নথি সংরক্ষণের জন্য সরবরাহকৃত নতুন ৩০টি লোহার র্যাক (যার একেকটির ওজন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি ) গোপনে রাতের আঁধারে তৎকালীন নায়েব নাজির মাহবুব আলমের যোগসাজশে মাহবুব ফার্নিচার মার্টের নিকট চড়া মূল্যে বিক্রি করে দেয়। র্যাক বিক্রির টাকাও তিনি সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ।
১০ কেজি হেরোইন সহ গ্রেফতারকৃত আসামী দীর্ঘদিন জেলে আটক মর্মে অজুহাত দেখিয়ে ৪২ দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পাত্র হয়ে উঠেন লিয়াকত আলী।
এনিয়ে, ২০২০ সালের ২ মার্চ নওরোজ এ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে শাস্তিমূলক বদলী হিসেবে রাজশাহী মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে বদলী করা হয়।
পরবর্তীতে “জয় বাংলা” গান গেয়ে স্বৈরাচার হাসিনা ও সাবেক আইন মন্ত্রী আনিসুল হককে খুশি করে ঢাকার নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান হন তিনি। এরপর তিনি মানিকগঞ্জের জেলা জজ হিসেবে পদায়ন পান।
অতঃপর ৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর ভোল পাল্টিয়ে নিজেকে বিএনপির লোক হিসেবে জাহির করে বিচারপতি হবার জন্য প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে ভাইবা বোর্ডে উপস্থিত হন। কিন্তু তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক, ঘুষ-দুর্নীতি সহ অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে বিচারপতির হওয়া থেকে বাদ করে দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত ভাইভা বোর্ড।
এতেও তিনি থেমে থাকেন নি। অবশেষে, খোদ আইন মন্ত্রনালয়ের আইন সচিবের মত গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই জেলা জজ, যে ১০ কেজি হেরোইন মামলার আসামিকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জামিন দিয়েছিলেন সেই মূল আসামীকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে সাজা প্রদান করেন তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরবর্তী জেলা জজ আদিব আলী।
তিনি সেই আদিব আলী যার জন্মস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জে। পৈতৃক বাসস্থান ভিটে মাটি আত্মীয় স্বজন সবাই বসবাস করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
তার পিতার কর্মস্থল পার্শ্ববর্তী জেলায় হবার সুবাদে ওই জেলার পরিচয়েই তিনি নিজ জেলায় পরপর ৪বার পদায়ন নেন। যুগ্ম জেলা জজ থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলা জজ ও জেলা জজ হিসেবে তিনি প্রায় এক যুগের মত চাকরি করেছেন নিজ জেলাতেই।
নিজ এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করে আদালতে উকিল থেকে শুরু করে নিকট আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন অবলীলাক্রমে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথমার্ধে বিশাল অংকের নিয়োগ বাণিজ্য ও নানা দুর্নীতির অভিযোগে আদিব আলীকে ওএসডি করা হয়। মন্ত্রণালয়ে তাকে ওএসডি করার পর তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক প্রসিডিং শুরুর প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থায় তারই ঘনিষ্ট বন্ধু লিয়াকত আলী মোল্লা আইন মন্ত্রণালয়ের আইন সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন। লিয়াকত আলী মোল্লার সচিব হিসেবে যোগদানের পর থেমে গেছে আদিব আলীর বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত কার্যক্রম।
লিয়াকত আলী মোল্লাকে নিয়ে নওরোজ এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর আইন উপদেষ্টাও বিব্রত বোধ করেন, জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৩ এর প্রধান মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান।
তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, “উপদেষ্টা স্যার সচিবালয়ে তার কক্ষে উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তাকে বলেন সচিবকে নিয়ে কেনো নওরোজে এতো লেখালেখি হচ্ছে? আপনারা মানা করতে পারেন না?”
তিনি এও বলেন, “আমি সচিব স্যারের সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জে তার অধীনে চাকরি করেছি। স্যার সম্পূর্ণ নির্দোষ। এসব জামিন বাণিজ্য স্যার করেন নি, করেছেন তার স্ত্রী। ভাবিকেই দেখতাম চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে জামিন টামিন করাতে।”
মনিরুজ্জামানের এই সরল স্বীকারোক্তি কি প্রমান করেনা যে তিনি (সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা) ধোঁয়া তুলসী পাতা নন?
সুধী পাঠক, আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর জানতে চোখ রাখুন নওরোজের আগামী পর্বে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়







































































































































































































