ঢাকা ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাগ্নে-ভাগ্নিকে গলা কেটে হত্যার দায়ে মামার মৃত্যুদন্ড থমথমে রংপুর: কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের দখলে রাজপথ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ মুক্ত ঘোষণা সিলেট শাবি’র হলে হলে আন্দোলকারীদের তল্লাশী, অস্ত্র উদ্ধার,ক্যাম্পাস না ছাড়ার ঘোষণা মোটরসাইকেল নিয়ে দ্বন্দ্বে ঘরে ঢুকে যুবককে গুলি করে হত্যা, গ্রেপ্তার ২ কোটাবিরোধী আন্দোলন: নোয়াখালীতে যুবদল-ছাত্রদলের ৫ নেতা গ্রেপ্তার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়তে নারাজ শিক্ষার্থীরা পুলিশের ওপর হামলা ও আগুন লাগার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে – আর‌পিএম‌পি ক‌মিশনার কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদের দাফন সম্পন্ন আমার ভাই মরলো কেন! প্রশাসন জবাব চাই’ শ্লোগানে উত্তাল গাইবান্ধা

নড়াইলে চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৮:৫৫:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
  • / ৭২ Time View

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত শুটারসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর নেপথ্যের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।

মূলত সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে বিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ ভাড়ায় শুটার এনে গুলি করে কামালকে হত্যা করেন। তবে এই ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্যকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

গ্রেফতার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে এলিট ফোর্স।

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, গত ১০ মে হত্যার শিকার হন চেয়ারম্যান কামাল। ঘটনার সাত দিন পর চারজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য।

গ্রেফতার চারজন হলেন- শুটার সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)। এর মধ্যে দুজন ছাত্র, একজন চালক, আরেকজন শ্রমিক। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

গত ১০ মে মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা ও এলোপাথারি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাস্তায় মারা যান। এই হত্যার ঘটনায় তার বড়ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হন এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামালের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। সে কারণেও এ হত্যাকাণ্ড।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে গ্রেফতার সাজেদুলসহ অন্যরা মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সাজেদুলসহ অন্যরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ওঁৎ পেতে থাকেন। মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই সুযোগ বুঝে সাজেদুল হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন। যার মধ্যে দুই রাউন্ড গুলি কামালের বুকে ও পিঠে লাগে এবং এতে তিনি গুরুতর আহত হন।

র‌্যাব জানায়, সাজেদুলসহ অন্য সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকা, পতেঙ্গা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যান এবং আত্মগোপন করেন। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সাজেদুল, পাভেল ও মামুন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। সাজেদুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রহমত উল্লাহকে নড়াইল থেকে গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজিদ মল্লিক জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। ওই সময় তার হাতে থাকা চার রাউন্ড এমুনিশন ভর্তি গুলি দিয়ে তিন রাউন্ড গুলি করেন। এতে চেয়ারম্যানের হাতে, বুকে ও পাজরে লাগে। পরবর্তী সময়ে এই অস্ত্রটি তিনি নড়াইলের মধুমতি নদীতে ফেলে দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অন্যদের হাতেও অস্ত্র ছিল। তাদের এক লাখ টাকায় ভাড়া করে আনা হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য।

জড়িত সাবেক ইউপি সদস্য কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী কি না বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়টা এখানে মুখ্য নয়, অপরাধটা মুখ্য। আমাদের দেশের প্রত্যেকে কারো না কারো রাজনৈতিক অনুসারী হতে পারি। রাজনৈতিক অনুসরণের সাথে অপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কাছে অপরাধটাই মুখ্য এবং অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

Please Share This Post in Your Social Media

নড়াইলে চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৪ জন গ্রেফতার

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি
Update Time : ০৮:৫৫:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত শুটারসহ চারজনকে গ্রেফতারের পর নেপথ্যের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।

মূলত সাবেক ইউপি সদস্যের সঙ্গে বিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ ভাড়ায় শুটার এনে গুলি করে কামালকে হত্যা করেন। তবে এই ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্যকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

গ্রেফতার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে এলিট ফোর্স।

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, গত ১০ মে হত্যার শিকার হন চেয়ারম্যান কামাল। ঘটনার সাত দিন পর চারজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে খুনের রহস্য।

গ্রেফতার চারজন হলেন- শুটার সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)। এর মধ্যে দুজন ছাত্র, একজন চালক, আরেকজন শ্রমিক। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

শুক্রবার (১৭ মে) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

গত ১০ মে মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা ও এলোপাথারি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাস্তায় মারা যান। এই হত্যার ঘটনায় তার বড়ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র জানান, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা ছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হন এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে। পরে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামালের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। সে কারণেও এ হত্যাকাণ্ড।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম জানান, লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে গ্রেফতার সাজেদুলসহ অন্যরা মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সাজেদুলসহ অন্যরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে ওঁৎ পেতে থাকেন। মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই সুযোগ বুঝে সাজেদুল হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি করেন। যার মধ্যে দুই রাউন্ড গুলি কামালের বুকে ও পিঠে লাগে এবং এতে তিনি গুরুতর আহত হন।

র‌্যাব জানায়, সাজেদুলসহ অন্য সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকা, পতেঙ্গা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যান এবং আত্মগোপন করেন। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সাজেদুল, পাভেল ও মামুন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। সাজেদুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রহমত উল্লাহকে নড়াইল থেকে গ্রেফতার করা হয়।

কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাজিদ মল্লিক জানিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। ওই সময় তার হাতে থাকা চার রাউন্ড এমুনিশন ভর্তি গুলি দিয়ে তিন রাউন্ড গুলি করেন। এতে চেয়ারম্যানের হাতে, বুকে ও পাজরে লাগে। পরবর্তী সময়ে এই অস্ত্রটি তিনি নড়াইলের মধুমতি নদীতে ফেলে দেন। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অন্যদের হাতেও অস্ত্র ছিল। তাদের এক লাখ টাকায় ভাড়া করে আনা হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য।

জড়িত সাবেক ইউপি সদস্য কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী কি না বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়টা এখানে মুখ্য নয়, অপরাধটা মুখ্য। আমাদের দেশের প্রত্যেকে কারো না কারো রাজনৈতিক অনুসারী হতে পারি। রাজনৈতিক অনুসরণের সাথে অপরাধের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের কাছে অপরাধটাই মুখ্য এবং অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।