ঢাকা ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে নৌকা ডুবে কিশোরের মৃত্যু ফ্যাসিস্টদেরকে আমরা আর ফেরত চাই না : মির্জা ফখরুল আ.লীগের ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা মিরপুরে আগুনে ১৬ জনের লাশ উদ্ধার, তল্লাশি চলছে ১৯ অক্টোবরের মধ্যে এনসিপি প্রতীক না নিলে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি এক ক্লিকে আদালতের রায় সরাসরি জেলখানায় পৌঁছে যাবে: আইন উপদেষ্টা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে একমাত্র শেয়ারধারী পরিচালকের পদত্যাগ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গঠনে ছয় দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার : ‘তিন-শূন্য বিশ্ব’ গড়ার আহ্বান বাংলাদেশ ও বিএনপি : আগামী নির্বাচনে সম্ভাবনার দিগন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুইডেন ও নরওয়ের ৯ তরুণ রাজনীতিবিদের সাক্ষাৎ
ব্যথায় জর্জরিত ‘ব্যথার দান’

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবার সংকট

জাককানইবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:৪১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ২০৮ Time View

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ‘ব্যথার দান’ দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটে জর্জরিত। পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, প্রয়োজনের সময় ‘ব্যথার দানে’ পাওয়া যাচ্ছে না সাধারণ ওষুধ পর্যন্ত। প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিংবা ব্যথানাশক মজুদ না থাকায় বহু সময়েই বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সময় মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে পাওয়া যায় না কোনো চিকিৎসক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র এবং গনমাধ্যম বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মহসিন শাহ বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্থ সেন্টার ‘ব্যাথার দান’ এ বারবার গিয়েও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাইনি, কেবল প্যারাসিটামল, নাপা, সিনাজিনের মতো সাধারণ ওষুধেই সীমাবদ্ধ ছিল সেবা। বেশিরভাগ সময় চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। যদিও অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু চিকিৎসার মান আগের মতোই রয়ে গেছে।”

জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সীমিত সময় খোলা থাকে সেন্টারটি। শুক্রবার ও শনিবার খোলা থাকলেও বাকি সময় বন্ধ। ফলে রাতে বা খুব সকালে কেউ অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না।

সম্প্রতি এমন এক ঘটনায় ভুক্তভোগী হন পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান। ৭ জুলাই নতুন কলাভবনের পাশের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে গুরুতর আহত হলে তাঁকে প্রথমে ‘ব্যথার দান’-এ নেওয়া হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকায় অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝ পথে অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে যাওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫টি বিভাগে ৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও ৩ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় ‘ব্যথার দান’-এ নেই পর্যাপ্ত জনবল কিংবা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। নেই একাধিক চিকিৎসক, নার্স বা টেকনিশিয়ান। যন্ত্রপাতির অভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ে দেখা দেয় জটিলতা।

অ্যাম্বুলেন্স সংকটও রয়েছে চিকিৎসাসেবায় বড় বাধা। পুরো ক্যাম্পাসে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকায় একাধিক শিক্ষার্থী একসঙ্গে অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় অনেক সময়ই হাসপাতালে পৌঁছাতে বিলম্ব ঘটে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গ্রুপে শিক্ষার্থী মমিন ইসলাম সবুজ লেখেন, “গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যথার দানে সেবার মানোন্নয়নের দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি। কিন্তু এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।”

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার ফলে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি একটি প্রতীকী উপস্থিতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারা দাবি করছেন, দ্রুত ‘ব্যথার দান’-এ পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক এবং জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসা সেবা চালু করা হোক।

Please Share This Post in Your Social Media

ব্যথায় জর্জরিত ‘ব্যথার দান’

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবার সংকট

জাককানইবি প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:৪১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ‘ব্যথার দান’ দীর্ঘদিন ধরে নানা সংকটে জর্জরিত। পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, প্রয়োজনের সময় ‘ব্যথার দানে’ পাওয়া যাচ্ছে না সাধারণ ওষুধ পর্যন্ত। প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিংবা ব্যথানাশক মজুদ না থাকায় বহু সময়েই বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সময় মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে পাওয়া যায় না কোনো চিকিৎসক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র এবং গনমাধ্যম বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মহসিন শাহ বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্থ সেন্টার ‘ব্যাথার দান’ এ বারবার গিয়েও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাইনি, কেবল প্যারাসিটামল, নাপা, সিনাজিনের মতো সাধারণ ওষুধেই সীমাবদ্ধ ছিল সেবা। বেশিরভাগ সময় চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। যদিও অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু চিকিৎসার মান আগের মতোই রয়ে গেছে।”

জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সীমিত সময় খোলা থাকে সেন্টারটি। শুক্রবার ও শনিবার খোলা থাকলেও বাকি সময় বন্ধ। ফলে রাতে বা খুব সকালে কেউ অসুস্থ হলে জরুরি চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয় না।

সম্প্রতি এমন এক ঘটনায় ভুক্তভোগী হন পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান। ৭ জুলাই নতুন কলাভবনের পাশের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে গুরুতর আহত হলে তাঁকে প্রথমে ‘ব্যথার দান’-এ নেওয়া হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা না থাকায় অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রথমে ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝ পথে অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে যাওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫টি বিভাগে ৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও ৩ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় ‘ব্যথার দান’-এ নেই পর্যাপ্ত জনবল কিংবা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। নেই একাধিক চিকিৎসক, নার্স বা টেকনিশিয়ান। যন্ত্রপাতির অভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ে দেখা দেয় জটিলতা।

অ্যাম্বুলেন্স সংকটও রয়েছে চিকিৎসাসেবায় বড় বাধা। পুরো ক্যাম্পাসে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকায় একাধিক শিক্ষার্থী একসঙ্গে অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় অনেক সময়ই হাসপাতালে পৌঁছাতে বিলম্ব ঘটে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গ্রুপে শিক্ষার্থী মমিন ইসলাম সবুজ লেখেন, “গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যথার দানে সেবার মানোন্নয়নের দাবি ছিল শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রধান দাবি। কিন্তু এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।”

শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার ফলে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি একটি প্রতীকী উপস্থিতিতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারা দাবি করছেন, দ্রুত ‘ব্যথার দান’-এ পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক এবং জরুরি ভিত্তিতে ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসা সেবা চালু করা হোক।