ত্রাস সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাং এর লিডারসহ ২০ জন গ্রেফতার
- Update Time : ০৩:২৭:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
- / ২১৯ Time View
বিগত কয়েক বছর ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ‘কিশোর গ্যাং’ গ্রুপের সদস্য ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
কিশোর গ্যাং বা গ্যাং কালচার উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। মারামারি, ক্ষমতা জাহির করতে প্রকাশ্য অস্ত্রের ব্যবহার, মাদক সেবন, ছিনতাই, প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান সমাজে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এমন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলে অনেক সময় খুন করতেও এরা দ্বিধাবোধ করেনা। রাস্তাঘাটে নারীদের ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানি এসকল সদস্যদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম। এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এবং নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে।
র্যাব-৩ এর গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজধানীর কদমতলী ও হাতিরঝিল এলাকায় কিশোর গ্যাং এর কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। তারা মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদক সেবন, অস্ত্র প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে ধাবিত করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ সন্ধায় র্যাব-৩ রাজধানীর কদমতলী ও হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোরগ্যাং ‘ফয়েজ-আরাফাত’ গ্রুপের ৭ জন, ‘সিয়াম’ গ্রুপের ৪ জন, ‘অনিক’ গ্রুপের ৪ জন এবং ‘কুনিপাড়া স্কোয়াড’ গ্রুপের ৫ জন সহ মোট ২০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত কিশোরগ্যাং সদস্যরা হলো ১। মোঃ ইয়াসিন আরাফাত (১৮), ২। রাশেদ হাজারী (২২), ৩। মোঃ রাসেল ইসলাম ৪। মোঃ তামিম মিয়া (২০), ৫। রাতুল হাসান (১৮), ৬। মমিনুল ইসলাম হৃদয় (২১), ৭। মোঃ রাকিব (২০), ৮। সাইফুল ইসলাম সিয়াম (১৯), ৯। আশিকুল ইসলাম স্বাধীন (১৯), ১০। মোঃ ফয়সাল হোসেন রাব্বি (২০), ১১। মোঃ নাঈম (১৯), ১২। মোঃ হাসান আহমেদ অনিক (২০), ১৩। মোঃ আমিনুল ইসলাম (১৯), ১৪। মোঃ রাফিন (১৮), ১৫। মোঃ আল আমিন (১৮), ১৬। মোঃ রনিউজ্জামান (২০), ১৭। মোঃ রাকিব (২০), ১৮। মোহন মিয়া, ১৯। মোঃ নাঈম মিয়া (২০), ২০। নাহিদ (১৮)। গ্রেফতারকালে তাদের নিকট ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ১ টি শাবল, ৩ টি ছোরা, ১ টি হাসুয়া, ৪ টি চাকু, ২ টি ক্ষুর, ২ টি হেক্সোব্লেড, ২৫ পুরিয়া গাঁজা, ৬ টি মোবাইল এবং চাঁদা উত্তোলনের নগদ ৪৫৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় ফয়েজ-আরাফাত কিশোরগ্যাং গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপটি সন্ত্রাসী মোঃ ইয়াসিন আরাফাত ও তার ফুপাতো ভাই ফয়েজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে এই গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা আরাফাত উক্ত অভিযানে গ্রেফতার হয় এবং ফয়েজ বর্তমানে রিহাব সেন্টারে আছে।
গ্রেফতারকৃত ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, মারধর, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত। এছাড়াও হাতিরঝিল এলাকায় সিয়াম এবং অনিক গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম সিয়াম এবং হাসান আহমেদ অনিক এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর হাতিরঝিল এবং এর আশেপাশের এলাকায় সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যেতো। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতিরঝিল এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল।
রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতারকৃত কুনিপাড়া স্কোয়াড গ্রুপটি হাতিরঝিল ও এর আশপাশের এলাকায় মূলহোতা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। মূলহোতা রনিউজ্জামান অনলাইনভিত্তিক অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেলিগ্রামে নোটকয়েন নামক ফিচার ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অনলাইন জুয়ারিদের সঙ্গে জুয়া খেলতো।
এ গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ চাঁদাবাজি, ছিনতাই এবং বিভিন্ন মানুষকে হুমকি, মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করে আসছে। এছাড়াও তারা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত কিশোরগ্যাং সদস্যরা পেশায় অটো-রিক্সা চালক, ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী, দিনমজুর, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়