ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে ভোটাধিকার ফিরে পাবে বঞ্চিতরা

- Update Time : ০২:৩২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৫৫ Time View
সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা যন্ত্রণাকাতর জনগণ ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম ডব্লিউইএফ‘র প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের শেষের দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা জানিয়েছেন। এরপর থেকেই আনন্দের জোয়াড়ে ভাসছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও এক কথায় পুরো দেশ। কেননা, দীর্ঘ ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে তারা ফেয়ার নির্বাচন দেখে না। আর জে জে ভোটারদের মনে ক্ষত যেন একটু বেশি। তারা জীবনে একটি বার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলেন না। এখন তাদের জন্যও আসছে ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনায় পছন্দের নেতা নির্বাচনের সুবর্ণ সুযোগ।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ওই দিনই তার ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে যেন তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়। ঐকমত্য কমিশনের কাজই হবে এটা নিয়ে কাজ করা’। কথা থেকে যায়, তাড়াতাড়ি নয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে হলে প্রায় ৬ মাস সময় পায় এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সম্প্রতি এই সরকারের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের, সংবিধান সংশোধনে নির্বাচিত সরকারের দাবি তো আছেই। এই সরকারে যারা আছেন, তারাই আবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন। দেশের জনগণ ভোট দিলে এতে কোনো বাধা আছে, আমরা তা মনে করি না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের কাছে আলোচনার সময় মনে হয়েছে যে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির দাবি সরকারের কাছে গ্রাহ্য হয়েছে এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী কী হবে সেটি এখন সরকারকেই ঠিক করতে হবে। সালাউদ্দিন বলেন, রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার এটি পরিষ্কার করতে পারে। তাহলে বুঝতে পারবো যে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে আমরা আগেই বলেছি স্বল্পমেয়াদে জরুরি সংস্কার বাস্তবায়নের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের আগে কতটা সংস্কার করা প্রয়োজন আর নির্বাচনের পর কতটা হবে- সেটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করাই হবে পরবর্তী ধাপের কাজ। জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হলে সংস্কার বিষয়ক আলোচনা কমে আসবে। না হলে সংস্কার না নির্বাচন এমন সংশয়-সন্দেহের গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে নষ্ট হবে মহামূল্যবান সময়। বাড়বে দূরত্ব।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, পনেরই ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম বৈঠকে বসবেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। একটি আশার খবর এটি। আমরাও আশা করি ওয়াল্ড গভর্ণমেন্ট সামিট শেষ করে এসে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম বৈঠকটি সফলভাবে সম্পন্ন করবেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন এখন ভোটার হালনাগাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যদিও এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টাও বলেছিলেন, চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
৫৬% কোটার কারণে আমি বিসিএসে বঞ্চিত হয়েছিলাম বলে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি কোটা সংস্কারের জন্য হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। রিটের পরে শত শত রিপোর্ট করে আন্দোলনকে চাঙ্গা করেছিলাম। সেই আন্দোলনের রেশ ধরে হলো জুলাই বিপ্লব। আমরা ইনকিলাব পরিবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করেছি। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেশের ১৫ থেকে ২০টি রাজনৈতিক দল আমার নাম প্রস্তাবাকারে পাঠালেও বিবেচিত হয়নি। কারণ, আমার বয়স কম। আইনের ২ নম্বর ধারায় বয়স ৫০ এর কথা উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠেছে, যে দেশে রাষ্ট্রপতি হতে ৩৫ বছর আর প্রধানমন্ত্রী হতে ২৫ বছর লাগে, সেদেশে নির্বাচন কমিশনার হতে কেন ৫০ লাগবে? সংস্কার কমিটি করে আইন সংস্কার না করেই বা ফ্যাসিস্টের আমলের আইন অনুযায়ী কেন নিয়োগটা করা হলো? কেন বিশেষ বিবেচনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের রূপকার হিসেবে তাকে নেয়া হলো না? ইত্যাদি ইত্যাদি। বার বার বঞ্চিত হলেও আমার মনের শক্তি দিয়ে বলছি, দেশটা যদি ভালো চলে, না পাওয়ার বেদনা আমি ভুলে যাব, ইনশায়াল্লাহ।
প্রসঙ্গক্রমে আমরা মনে করি, প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত শেষ করে সরকার ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচন দিয়ে দেবে। কারণ, যে আশা আকাঙ্খা নিয়ে এ সরকার শপথ নিয়েছে, বিএনপি-জামাতের প্রতিনিয়ত বাহাসে তাদের আশার পরিধি ক্রমশঃ ক্ষীণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের হুমকি ধামকির বিপরীতে এসব টেকেল করা ও দেশটাকে সুন্দরভাবে ঢেলে সাজাতে দায়িত্ব দিয়ে যেতে চান বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, নাগরিক কমিটিসহ সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে। জেন জে নামের তরুণ প্রজন্ম পাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মহা আনন্দ। আমরা ডিসেম্বর মাসে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক্ষায় থাকলাম।