ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে ডাকাতের হাতেই ডাকাত খুন
![](https://nawroj.com.bd/wp-content/uploads/2023/04/LOGO-NAWROJ-2022-icon.png)
- Update Time : ০২:১৫:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
- / ৫৬ Time View
ডাকাতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য আজাহার আজাদ (৩৩) খুন হয়েছে। হত্যার পর তার লাশ গুম করার জন্য সাভারের তুরাগ নদীতে ফেলে দেন ডাকাত দলের সদস্যরা।
সোমবার (১০ জুন) সকালে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলেন ধরেন পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মো. কুদরত-ই-খুদা।
এ সময় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার (সিআরও এন্ড মিডিয়া) জনাব মোঃ আবু ইউসুফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) উপস্থিত ছিলেন।
মো. কুদরত-ই-খুদা জানান, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী ও আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার মো. মজিবর আকন টেক্কা (৪৯) এবং তার দুই সহযোগী রুহুল আমিন লেদু (৪৩) ও মো. সামিম হোসেন (৩৩) এর হাতে চাপাতি ও কাচির আঘাতে নির্মমভাবে খুন হন আজাহার আজাদ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুজু হওয়া মামলার রহস্য উদ্ঘাটন সহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডাকাত সরদার সহ তার দুই সহযোগীকে গত ০৯ মে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা।
মো. কুদরত-ই-খুদা জানান, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে ভিকটিম মো. আজাহার আজাদ (৩৩) তার বড় ভাই মো. শাজাহানের (৩৫) বাসা থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হয়। পরে ভিকটিম বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ভিকটিমের বড় ভাই মো. শাজাহান জানতে পারেন ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন আমিনবাজার হিজলা সাকিনস্থ তুরাগ নদীর পূর্বপাশে নদীতে একটি লাশ ভাসছে। সংবাদ পেয়ে তিনদিন পর ১৭ ডিসেম্বর ভিকটিমের বড় ভাই ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় লাশ তীরে উঠায় এবং তার ছোট ভাই আজাহার আজাদের লাশ বলে শনাক্ত করেন।
তিনি জানান, এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মো. শাজাহান বাদী হয়ে ১৮ ডিসেম্বর সাভার মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানার মামলা নং ৪৪, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
মো. কুদরত-ই-খুদা আরও জানান, সাভার মডেল থানা পুলিশ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভূক্ত হওয়ায়, পিবিআই হেডকোয়াটার্র্স, ঢাকার নির্দেশে ৮ জানুয়ারি ২০১৯ পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পুলিশ সুপার, পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই (নিঃ) মো. শহিদুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মো. শহিদুল ইসলামে নেতৃত্বে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৬ বছর আগের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন সহ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মো. মজিবর আকন টেক্কা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং তার দেয়া তথ্য মতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর দুই আসামিকে একই দিন গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
তাদের দেয়া জবানবন্দী থেকে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার এবং আশুলিয়া থানা এলাকাধীন তুরাগ নদীতে দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি সংগঠন করে আসছিল। ওই মামলার ভিকটিম মো. আজাহার আজাদও ওই ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য ছিল।
২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টার পরে আসামিরা এবং ভিকটিম আজাহার আজাদ এবং তাদের আরও ৪/৫ জন সঙ্গী সহ ডাকাতির উদ্দেশ্যে ট্রলারযোগে তুরাগ নদীর গাবতলী ঘাট এলাকা হতে আশুলিয়া’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কিছুদূর যাওয়ার পরে ভিকটিম আজাহার আজাদের সঙ্গে মজিবর আকন টেক্কা, মজিবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড রুহুল আমিন লেদু’র আগের ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত টাকার ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে রুহুল আমিন লেদু ধারালো বড় কাঁচি (ডাকাতির কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই ট্রলারে রাখা) দিয়ে পিছন থেকে আজাহার আজাদের মাথায় পরপর তিনটি কোপ দেয়।
পরে মো. মজিবর আকন টেক্কা চাপাতি (ডাকাতির কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই ট্রলারে রাখা) দিয়ে আজাহার আজাদের বুকে একটি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে আজাহার আজাদকে তুরাগ নদীতে ফেলে দিয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সরদার মজিবর আকন টেক্কার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত মোট ০৯ টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।