টিউলিপের সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত : ড. ইউনূস

- Update Time : ০৪:৫০:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৩৯ Time View
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, লন্ডনে টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যবহৃত সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত ও যদি প্রমাণ হয় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে লুটপাটের মাধ্যমে এটি অর্জিত হয়েছে, তাহলে সেই সম্পদ দেশে ফেরত পাঠানো উচিত।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস টিউলিপের ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে টিউলিপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্রদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি ব্যাডেনোচ টিউলিপকে বরখাস্ত করতে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সরকার দলীয় সংসদ সদস্যদের কয়েকজনও বিনা মূল্যের ফ্ল্যাট পাওয়া নিয়ে টিউলিপের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
টিউলিপ ব্রিটেনের লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য। তিনি ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। অথচ খোদ তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, ড. ইউনূসের অভিযোগের সূত্র ধরে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনোচ ট্রেজারি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা বলেন, কিয়ার স্টারমারের উচিত শিগগির টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করা।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার তার বন্ধুকে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, কিন্তু সেই মন্ত্রী নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। কেমি তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, টিউলিপ এখন সরকারের মনোযোগ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার বিষয়ে পরিণত হয়েছেন। সরকারের উচিত তাদেরই তৈরি করা অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধানে মনোযোগ দেওয়া।
টিউলিপকে বরখাস্ত করার যুক্তি হিসেবে কেমি উল্লেখ করেন, তার সঙ্গে শেখ হাসিনার শাসনামলের যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের (অন্তর্বর্তী) সরকার। এরই মধ্যে টিউলিপ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (ইনডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অব মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস) লউরি ম্যাগনাসকে একটি চিঠি লিখেছেন তিনি। চিঠিতে মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন টিউলিপ সিদ্দিক।
তিনি লউরি ম্যাগনাসকে লিখেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে আমি গণমাধ্যমে খবরের বিষয়বস্তু হয়েছি। আমার আর্থিক বিষয় ও বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে আমার পরিবারের যোগসূত্র নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে, যার বেশির ভাগই ভুল।
তিনি আরও লেখেন, আমি স্পষ্টভাবে বলছি, কোনো ভুল করিনি। তবে সন্দেহ এড়ানোর জন্য আমি চাই, আপনি স্বাধীনভাবে এগুলো তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করুন।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সূত্রদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিককে পদত্যাগে বাধ্য করা হতে পারে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, টিউলিপের বিকল্প কে হবেন, তা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠরা। এরই মধ্যে সিটি মিনিস্টার টিউলিপের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে কয়েকজন প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছেন বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্তে নাম এসেছে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে এবং যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপি ও মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভা অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল।
অভিযোগ উঠেছে, রাশিয়ার সঙ্গে ২০১৩ সালে যখন রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়, তখন এতে মধ্যস্থতা করেন টিউলিপ। যদিও ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের কোনো সরকারি দায়িত্বে ছিলেন না। অন্যদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক ছাড়াও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও বোন শেখ রেহেনার বিরুদ্ধেও।
সূত্র: সানডে টাইমস
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়