টঙ্গীতে ট্রেনে কাটা পড়ে গৃহবধূর মৃত্যু,পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড

- Update Time : ০৬:৫৯:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ৫৫ Time View
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তিন দিন ধরে পড়ে রয়েছে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত শামিমা আক্তার সাথীর (২৬) মরদেহ।
গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় গত শুক্রবার সকালে ঘটে যাওয়া এই মৃত্যুর ঘটনাকে আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন নিহতের পরিবার।
নিহত সাথী চাঁদপুর জেলার মতলব থানার নুরুল্লাপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা এবং মৃত শামসুল হকের মেয়ে। তিনি দুই সন্তানের জননী ছিলেন। পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে টঙ্গী পূর্ব থানার স্টেশন রোডের দক্ষিণ নতুনবাজার এলাকার রেললাইনে কাটা পড়ে সাথীর মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং অজ্ঞাতনামা হিসেবে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, এটি আত্মহত্যা নয়। তারা বলছে, সাথীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সাথীর বিয়ে হয় গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন সুরতরঙ্গ রোড এলাকার বাসিন্দা, মৃত শাহ আলমের ছেলে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের শুরু থেকেই স্বামী সাইফুল মাদকাসক্ত ছিলেন এবং প্রায়শই সাথীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য সাথীকে চাপ দেওয়া হতো বলেও অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। সর্বশেষ, গত ২৮ মার্চ ঈদের দুই দিন আগে, সাইফুল যৌতুকের দাবিতে সাথীকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে তিনি ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেন। নিহতের খালাতো বোন নাদিরা মামুন লিপি বলেন, “সাইফুলের মাদকাসক্তির বিষয়টি আমরা আগেই জানতাম। বিয়ের সময় বলা হয়েছিল সে ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ের পর প্রায়ই সাথীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যেত। বহুবার আমরা পারিবারিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রতিবারই সাইফুল ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেছে।”তিনি আরও বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এটি আত্মহত্যা নয়। সাথীকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।”এ বিষয়ে টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, ট্রেন আসতে দেখে অন্যরা সরে গেলেও সাথী লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে লাইনে দাঁড়ান। তবে প্রকৃত কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর।”
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, “সাথীকে ফজরের নামাজের সময় ডাকলে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করছিলেন। সকলে ঘুমিয়ে গেলে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে জানতে পারি, তিনি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন।” যৌতুক এবং মাদকের অভিযোগকে মিথ্যা বলেও দাবি করেছেন তিনি।
ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও নিহতের পরিবার মরদেহ গ্রহণ করেনি। তাদের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত না হত্যার অভিযোগে মামলা নেওয়া হবে, ততক্ষণ তারা মরদেহ নেবেন না।
পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের সুযোগ নেই। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে বারবারই দাবি করা হচ্ছে—সাথীর মৃত্যু আত্মহত্যা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।