সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী রোমানা
জুয়েলের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা সৌদিতে পাচার করতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- Update Time : ০৮:১১:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৫৩ Time View
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। সেই চাঁদার টাকা কামরুল হাসান জুয়েল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সৌদি আরবে পাচার করতেন তিনি। এছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশিদ অবৈধভাবে যে টাকা আয় করতেন সেই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করতেন এই জুয়েল। জুয়েল ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডিবি প্রধানের টাকা পাচারের অন্যতম সহায়তাকারী।
প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০২১ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মডেল-অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে।
এমনকি অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ২৮ বিয়ের অভিযোগও উঠেছিল সেসময়। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে এবার মুখ খুললেন তিনি।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্র্যাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
মূলত, কারাভোগের প্রতিবাদেই এই সংবাদ সম্মেলন করলেন অভিনেত্রী।
বিষয়গুলো এতদিন গোপন থাকলেও এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন এই অভিনেত্রী।
তার দাবি, তিনি কামরুল হাসান জুয়েল নামের সেই ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। জুয়েল তাকে ২০১৯ সালে বিয়ে করলেও নিজ বাসায় কখনও তোলেনি। বাধ্য হয়ে তিনি মায়ের বাড়িতে থাকতেন। পারিবারিক অশান্তি এবং স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার ফলে তিনি তাকে তালাক দেন। জুয়েল বিবাহিত জেনে তিনি তাকে প্রথমবার তালাক দিতে গেলে ডিবি হারুন ২০২১ সালে তাকে গ্রেফতার করে নানা নাটক সাজায়। এরপর আবারও তিনি জুয়েলকে তালাক দেন। এবার সাবেক স্বামী জুয়েল তার নামে মিথ্যা মামলা দেন এবং তিনি দেড় মাস জেল খাটেন। জুয়েলকে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহারের শর্তে মুক্তি মিলে তার। এরপর বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই জুয়েল ও হারুনের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, ডিবি হারুন তাকে গ্রেফতারের পর প্রচার করে, তিনি বহুবিবাহ করেছেন। তিনি বিয়ে করে বিভিন্ন পুরুষকে ফাঁসিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টির স্বপক্ষে গত কয়েক বছরে তিনি ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেননি।
রোমানা বলেন, আমাকে মিথ্যা অভিযোগে সুপরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। সাবেক স্বামী কামরুল ইসলাম জুয়েল সে সময় পুলিশকে ব্যবহার করে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন আমাকে। সে সময়কার ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ফজলে রাব্বীর মদদেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আমাকে।
শুধু তাই নয়, মামলাসহ ২৮টি বিয়ের অপপ্রচার চালিয়েছেন আমার সাবেক স্বামী। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আজও এসব অভিযোগের প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, সে সবেরও কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি জুয়েল।
সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী বলেন, ২০১৯ সালে যখন আমার ক্যারিয়ারে যখন সুসময় তখন জুয়েলকে বিয়ে করি। তিনি আমার দ্বিতীয় স্বামী। আগের বউয়ের কথা গোপন রেখে আমাকে বিয়ে করে। এসব জানার পর দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে অশান্তি ও নির্যাতন। একটা পর্যায়ে তার সঙ্গে সংসার না করার সিদ্ধান্ত নিই। নির্যাতনের জন্য কয়েকবার সাধারণ ডায়েরি করেও কোনো লাভ হয়নি। বিয়ের আগে বলেছিল, অভিনয়ে অসুবিধা নেই। কিন্তু বিয়ের পর জুয়েল আমাকে অভিনয় করতে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর মায়ের বাসায় থাকতাম। একবার আমার প্রথম ঘরের সন্তানকে শুটিং থেকে অপহরণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় হুমকি দিত। দুইবার তাকে ডির্ভোস দিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমাকে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ডির্ভোস তুলে নিলে মামলা তুলে নেবে এমন শর্তও দেওয়া হয়।
রোমানা বলেন, জুয়েলকে সব অপকর্ম করতে সহযোগিতা করত সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন। তাই উপায় না থাকায় একটা পর্যায়ে সমঝোতা করে মামলা তুলে নিই। প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডির্ভোস দিলে আমাকে আটকানোর জন্য মিথ্যা মামলা দেয়। সেজন্য আমাকে গ্রেপ্তার করানোর জন্য ডিবি হারুনকে মোটা অংকের অর্থ দিয়েছিল বলে জানতে পারি। দেড় মাস জেলে থাকার পর, ডির্ভোস দিতে পারব না, সেই শর্তে জামিন করায়।
পরিবারের কথা চিন্তা করে এই শর্তে রাজি হই। ডিভোর্স চলাকালে ভয়-ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে থাকত জুয়েল। আমার সন্তান-পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। পরিবারের কথা ভেবে এতদিন সহ্য করেছি। জেল থেকে ফেরার পর জানতে পারি জুয়েল সৌদি গেছে। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। কিন্তু এতেও রেহাই পাইনি তার কাছ থেকে।
কামরুল ইসলাম জুয়েল আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ার কারণে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো তিনি এতদিন প্রকাশ করতে পারেননি। জুয়েল তাকে বিয়ের আগে কথা দিয়েছিল অভিনয় করাবেন। কিন্তু বিয়ের পর তাকে আর কোনো অভিনয় করতে দেওয়া হয়নি।
রোমানা স্বর্ণা লিখিত বক্তব্য বলেন, জুয়েল আমার দ্বিতীয় স্বামী। তবে আমার নামে মামলাসহ ২৮টি বিয়ে করার কথা রটানো হয়েছিল, যেগুলো ভিত্তিহীন। এই বিয়েগুলোর প্রমাণ আজও দিতে পারেনি এবং আমাকে যেভাবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল তারও প্রমাণ দিতে পারেনি। মূলত আমাকে সম্মানহানি করার জন্যই এসব ভিত্তিহীন তথ্য ছড়ানো হয়। বিভিন্ন সময়ে সাবেক ডিবি প্রধান হারুন জুয়েলের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে হয়রানি করত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালেও কাজ হয়নি। যার কারেণে সবকিছু মুখ বুঝে মেনে নিতে হয়েছিল। অপরাধ না করেও অপরাধী হয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুয়েলকে সহযোগিতা করার কারণ হচ্ছে, আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলত। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করত। এসব কথা আমাকে বলেছিল যখন সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অবৈধ কাজে সহযোগিতা করত। বিনিময় পেত মোটা অংকের টাকা। জুয়েল মূলত হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হারুনের টাকা বিদেশে পাচার হতো জুয়েলের মাধ্যমে। জুয়েল অর্থ পাচার একই সঙ্গে জমি দখল করে দিতো এবং দখল নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মানুষের নামে মিথ্যা হয়রানি মূলক মামলা দিতো। জুয়েল নিজ স্ত্রীকে অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করতেন এবং অমানবিক নির্যাতন করতেন। সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলার জন্য বাসায় আনা এবং তা নিয়ে বাধা প্রদান করলে আমার ওপর অমানবিক অত্যাচার হতো।
রোমানা স্বর্ণা বলেন, আমাদের ডিভোর্স চলাকালীন ভয়ভীতি দেখিয়ে নতুন করে কাবিন ছাড়াই বাসায় এসে থাকত জুয়েল। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখে। সারাক্ষণ সন্তান পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। পরিবারের কথা ভেবে সবকিছু মুখ বুঝে এতদিন সহ্য করেছি। জামিনে বেরিয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি যায়। আমি তখনও গৃহবন্দি। দেড় বছরের মতো এভাবে ছিলাম। তখন জুয়েলের প্রথম স্ত্রীও ওখানে যায়। তখন আমাদের যোগাযোগ একটু কম হতো। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে যাই। তার আগে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছি জানতে পেরে জুয়েল নানাভাবে আমাকে হুমকি দেয়। দেশে আমার পরিবার থাকায় তাদের নানাভাবে হুমকি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও রেহাই পাইনি।
সবশেষে রোমানা বলেন, নানা হুমকি দিত, তাই এতদিন কিছু বলতে পারিনি। সরকার পতনের পর দেশে এসেও কিছু দিন অসুস্থ থাকায় এই বিষয়ে কথা বলিনি। এখনও কোনো মামলা করিনি। তবে শিগগিরই এই বিষয়ে সবাই জানতে পারবেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়