আসলে ওরা কি চায়
জাতীয় প্রেসক্লাব নিয়ে এ কী তামাশা!
- Update Time : ০৬:৩৮:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ১০ Time View
গঠণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে লংঘন করে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পূর্ণ একপেশে একটি অতিরিক্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। যা প্রেসক্লাবের ৭০ বছরের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। সভার সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ভিন্ন কোন মতের সদ্যস্যদের বক্তব্য রাখতে না দিয়ে শুধু একটি মতের সদস্যদের বক্তব্য শুনে কণ্ঠভোটে তাদের মনগড়া প্রস্তাবটি পাস করিয়ে নেয়। তাও আবার এই কণ্ঠভোটে অংশ নেয়া অধিকাংশ সদস্যের ভোটাধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়নি এখনো। তারা নবীন সদস্য, এক বছর না গেলে স্থায়ী সদস্য হবার কথা নয়। গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই সদস্যরা সভায় অংশ নিলেও ভোটে অংশ নিতে পারেন না।
সভার শুরুতে দৈনিক নওরোজ সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক শামসুল হক দুররানী দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, মাননীয় সভাপতি আপনি এই সভায় সভাপতিত্ব করতে পারেন না। কারণ আপনি নির্বাচিত সভাপতি নন, নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসাবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আপনি সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
কিন্তু গঠনতন্ত্রের ২৩ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, কেবলমাত্র ক্লাবের নির্বাচিত সভাপতি যে কোন সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তাই এখানে অন্য কাউকে সভাপতি নির্বাচিত করতে হবে। এই কথা বলতে না বলতেই ডিইউজে সভাপতি জামায়াতের রোকন হিসেবে পরিচিত শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে বেশকিছু নবীন সদস্য জনাব দুররানীর দিকে তেড়ে আসে।
একই সঙ্গেঁ ফটো সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদকেও হেনস্তা করতে উদ্যত হয়। জনাব শওকত মাহমুদ গিয়ে আসাদকে উদ্ধার করেন। উচ্ছৃংখল নবীন সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাঈদ খাঁন, মোশারফ হোসেন, খন্দকার আলমগীর প্রমুখ। প্রেসক্লাবের কয়েকজন প্রবীণ সদস্য ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের ইতিহাসে এটি একটি বিরল, অগতান্ত্রিক ও জঘন্য ঘটনা।
যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, স্বৈরাচার হটানোর কথা বলেন, তাদের এই আচরণ তো চরম স্বৈরাচারী ও উদ্ধত্যপূর্ণ। এই জঘন্য ঘটনা প্রেসক্লাবের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়েছে। অনেক সিনিয়র সাংবাদিক অভিমত দেন, হাসান হাফিজ বরাবরই চরম সুবিধাবাদী। তিনি সহ-সভাপতি থাকাকালে দৈনিক খবরের কাগজে যোগদান করেন। ব্যাংক লুটেরা স্বৈরাচারী হাসিনার দোসর এস আলমের টাকায় এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন মোস্তফা কামাল। সভাপতি হবার পর হাসান হাফিজ রাতারাতি যোগদান করেন আরেক মাফিয়া শেখ হাসিনার দোসর বসুন্ধরার মালিক শাহ আলমের পত্রিকায়, যে শাহ আলম শেখ হাসিনার সামনে বলেছিলেন, ‘মরার পরও আমি আপনার সাথে থাকব।’ এই শাহ আলমই ফরিদা ইয়াসমিনকে পেট্রোনাইজ করে প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের দোসরের পত্রিকায় চাকরি করে অন্যকে স্বৈরাচারের দোসর বলা কতটা মানানসই এই প্রশ্ন সকলের।
এছাড়া আমিরুল ইসলাম কাগজীকে বানানো হলো এক নম্বর বক্তা। এই কাগজীইতো শফিকুর রহমান যখন ক্লাব দখল করেন, তখন ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন এবং তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দিলেন বিপ্লবী বক্তব্য। আরেক বিপ্লবী বক্তা সরদার ফরিদ ওই সময় ছিলেন দখলদার কমিটির সদস্য। ৬৫০ মেম্বারের তালিকা হয়েছে এদের হাতেই। ঐ সময় স্বৈরাচারের সহযোগীদের সাথে প্রেসক্লাব দখল করার কারণে আলোচ্য আমিরুল ইসলাম কাগজী ও সরদার ফরিদকে জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরাম থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে তদবীরবাজ কাগজী ও জামাতী সরদার ফরিদ কিভাবে জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামে অন্তর্ভূক্ত হলেন তা রহস্যাবৃত রয়ে গেছে। এই কাগজী ও সাঈদ খানকে জিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক বানানো হয় গত বুধবার। অপরদিকে সর্দার ফরিদ বিটিভিতে গিয়ে মাতব্বর সেজে বসেছেন। সেখানে মাতব্বরী করেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে স্বৈরাচারের আমলে ১৬ বছর চাকুরী না করে এদের দলপতি কাদের গনি চৌধুরী ৪০ লাখ টাকার দামী গাড়ী কিনে ঢাকা শহরের নিকুঞ্জের মত জায়গায় ফ্ল্যাট কিনে রাজার হালে আরাম আয়েশে কাটিয়েছেন। বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীরা জেলে গেলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগীদের সাথে গোপন আঁতাত করে চলা ধুরন্ধর গনির বিরুদ্ধে কোন হামলা মামলা হয়নি।
বসুন্ধরার মালিক পক্ষকে বাঁচানোর কথা বলে সামনে ক্ষমতায় আসছে বিএনপি এই টোপে তারেক রহমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে বসুন্ধরা থেকে কামিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। নিন্দুকেরা বলে, এই টাকার অংক নাকি ৫ কোটি। এখান থেকে আর দু’একজন নেতাও ভাগ পেয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ। শুধু টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হননি, বসুন্ধরা গ্রুপে মোটা অংকের বেতনে লোভনীয় পদও বাগিয়ে নিয়েছেন। ঐ সময় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজও বসুন্ধরা গ্রুপে লোভনীয় চাকুরি বাগিয়ে নেন।
হাসিনার পক্ষে থাকলে যেমন মুক্তিযোদ্ধা তেমনই এখন শুরু হয়েছে আরেক ধান্ধাবাজি। এদের পক্ষে থাকলেই তথাকথিত জাতীয়তাবাদী। এদের কারণে প্রকৃত জাতীয়তাবাদীরা কোনঠাসা। এতে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।