ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনসাধারণের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু অধ্যাপক ইউনূস

মোহাম্মদ আলম
  • Update Time : ০৮:১৫:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২৫ Time View

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিপ্লবী ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার গঠনের শুরুতে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিলো বললেও ভুল বলা হবে না। যতই দিন গড়াচ্ছে জনসাধারণের প্রাপ্তির পারদ ক্রমাগত নিন্মমুখী। তবে সরকারের এক’শ দিন পর এখনো সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশা জিয়ে আছে। তারা মনে করে, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের মাধ্যমে কাঙ্খিত পরিবর্তনের মহাসড়কে দেশকে চালিত করতে সক্ষম হবেন।

প্রধান উপদেষ্টা এক’শ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানসাধারণকে আশার বাণিই শুনিয়েছেন। তবে নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে থাকা রাজনীতিবিদগণ তাদের নেতিবাচক প্রতিকৃয়া ব্যক্ত করতে ছাড়েননি। যদিও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দের কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কারণ কার্যত স্থানীয় পর্যায়ে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যেই ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করছে। দলমত নির্বিশেষে দেশ বিদেশের মানুষ অধ্যাপক ইউনূসের কাছে ভাল কিছু প্রত্যাশা করে। বিপথগামী বাঙালি জাতিকে তিনিই পারবেন সুপথে ফেরাতে, এমন বিশ্বাস ও আস্থা তার উপর আছে।

জাতি হিসাবে বাঙালি চরিত্রে বরাবরই আশাবাদি হওয়ার মত মানসিকতা বিরাজমান। দিগন্তের শেষ বিন্দুতে একঝলকও তাকে আশাবাদি করে। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি বা ঋতু বৈচিত্রই আশা জাগানিয়া। কাঠফাঁটা গ্রীস্মের প্রতিটি প্রহর কাটে প্রশান্তির বর্ষার আশায়। বর্ষার ঝড়-ঝঞ্জায় প্রত্যাশা ফিঁকে হতে হতেই শরতের শুভ্রতায় আলোকিত হয় বাঙালি জীবন। আবার শুস্ক শীতকালের কন্কনে ঠান্ডারাত্রী পার করেই বসন্ত সাজে প্রকৃতি মানুষকে প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রকৃতিগতভাবেই বাঙালি তথা বাংলাদেশি মানুষের আশার প্রদীপ টিম টিম জ্বজল্যমান। নাগরিক জীবনে প্রকৃতির চক্রে সেই আশার সঞ্চার হয়। মানুষ বার বার প্রত্যাশা করতে থাকে। এখন বাংলাদেশের জনসাধারণের নাগরিক প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু অধ্যাপক ইউনূস। মানুষ সুখ-শান্তি চায়। ৫৩ বছর কেটে গেল, কবিতার মতই ‘কেউ কথা রাখেনি’। অধ্যাপক ইউনূসে বাংলার মানুষ শান্তির পথ খুঁজছে। কায়মন বাক্যে সর্বস্তরের প্রার্থনা ইউনূস যেন কথা রাখেন।

প্রশ্ন হচ্ছে! এ দেশের সিংহভাগ জনসাধারণের প্রত্যাশা কি? কি প্রত্যাশা নিয়ে ছাত্র-জনতা, রাজনীতিবিদ, সুশিলসমাজ নারী-পুরুষ আন্দোলনে নেমেছে? কিসে মানুষের শান্তি? জনসাধারণের প্রত্যাশা নিয়ে সরকারের দায় দায়িত্বই বা কি হওয়া উচিত? রাষ্ট্রচিন্তায় এমন হাজারটা প্রশ্ন আসবে। সরল বাক্যে বলতে গেলে মানুষের প্রত্যাশার কোন সীমা নেই। যখন সে একটা অর্জন করে তখন তার প্রত্যাশা হয়ে উঠে একাধিক কেন নয়! এভাবে যত পাই তত চাই তার প্রত্যাশা। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার চুড়ান্ত গন্তব্য ‘অর্থ’। সে অঢেল অর্থের মালিক হতে চায়। তা যে কোন প্রকারে হোক। দেশে প্রচলিত একটা ধারণা ছিল, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা আমলা শ্রেনী ক্ষমতার প্রভাবে অঢেল অর্থের মালিক হন।

বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে কে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেনি। আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় অর্জন (বাস্তবে ব্যর্থতা এবং এটাই তাদের পতনের অন্যতম কারণ) হচ্ছে সব শ্রেনী পেশার মানুষকে অসাধু সিন্ডিকেটে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা। ঘুষ দূর্ণীতির বেড়াজালে জড়ানো। হাসিনা সরকারের ধ্বংশাত্মক নীতি ঠকিয়ে হলেও নিজে খাও অন্যকে খাওয়ার সুযোগ করে দাও, সিন্ডিকেট করে নাও। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা বা চিকিৎসা সেবামূলক পেশা। এইসব পেশায় নিয়োজিত বাঙালি সমাজও নিজেদের মহান পেশাকে পণ্যে পরিণত করেছে। সেবার চাইতে যেন অর্থ উপার্জনই তাদের মূল লক্ষ্য। একইভাবে একজন সবজি বা ডিম বিক্রেতার চাহিদা কতটুকু হওয়া উচিত?

বাড়ি-গাড়ি, নিত্য মাছ-মাংস বা কিতাদুরস্থ পোশাক পরিচ্ছদ। কিন্তু ডিম বা আলু সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা শত কোটি টাকার মালিক কি ভাবে হয়? একই কথা চাল, ডাল, তেলসহ সকল প্রকার ভোগ্য পণ্যের ব্যবসায়ীদের বেলায় ঘটেছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ বা ধর্ম ব্যবসায়ীদেরই শুধু দোষ। বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি বা আইনজীবি থেকে শুরু করে সব শ্রেনীর মানুষ নিজেদের কোন না কোনভাবে সিন্ডিকেটে জড়িয়েছে। সিন্ডিকেটে কোন দল নেই। সিন্ডিকেটে কোন রাজনৈতিক পরিচয়ও গণ্য নয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের সাথে বিএনপি-জাতীয় পার্টিও ভাগিদার। এখানে একটাই লক্ষ্য আরও বেশি টাকা চাই, জমি চাই, ধন দৌলত চাই। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বিতারিত হলেও সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়েছে। শুধুমাত্র সিন্ডিকেট নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের স্থলাভিসিক্ত হয়েছে বিএনপি নেতা। এই যখন পরিস্থিতি তখন পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব। ডিম, আলু, পিঁয়াজের দামইবা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে। দখল, লুণ্ঠনই বা কিভাবে বন্ধ হবে। শরষের ভিতরেই ভুত। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পদক্ষেপ বা সদিচ্ছা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে। অন্যদিকে অপকর্মের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিন্দুমাত্র অনুতাপ অনুশোচনা নেই। এত কিছুর পরও বিএনপি বা জামায়াত দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার বিরোধিতা করছে। এটা ভালো লক্ষণ বৈকি।

এত কথা বললাম, মানুষ হিসাবে নিজেরা পরিবর্তন না হয়ে, শুধু সরকার প্রধানের কাছে সোনার ডিম প্রত্যাশা করলে ভালো ফল আসবে না। ৫৩ বছরে যা হয়নি ৫৩ হাজার বছরেও ভালো হবে না। বঙ্গবন্ধু সরকার প্রধান হিসাবে নিজে মুখে বলেছেন, ‘আমি চোরের খনি পেয়েছি, ভালো হবে না’। ৫৩ বছরে সরকারের কাছাকাছি থাকা এক শ্রেনীর বাংলাদেশি মানুষ প্রত্যাশার সীমা লঙ্ঘন করেছে। একটি সোনা বা তেলের খনির যত গভিরে যাওয়া হয় ততই খনিজ আহরণ যেমন বৃদ্ধি পায়, বাংলাদেশে যতই দিন যাচ্ছে চোরের সংখ্যা আর চুরির ক্ষেত্র বাড়ছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ১৭ বছরে বাংলাদেশের সব শ্রেনী পেশার মানুষের সীমা ছাড়া প্রত্যাশা দেশকে ক্রমশঃ ধ্বংশের দিকে ধাবিত করেছে। দেশের মানুষ হিসেবে অবচেতন মনে সবাই এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি চায়। সব ধর্মের মানুষই অসততা এবং অনৈতিকতা থেকে বাঁচতে চায়।

২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থান তারই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৭৫, ১৯৯০, ২০০৬-৮, ২০২৪ বার বার গণঅভ্যুত্থান মানে জাতি হিসাবে বাংলাদেশ সভ্য হওয়ার প্রত্যাশা পোষণ করে। খাঁটি পলিবিধৌত এই ভুমির মতই এখানকার মানুষও বস্তুত খাঁটি। কিন্তু কোন সফলতার পথই কুসুমার্স্তীর্ণ নয়। জাতীয় নেতৃত্ব কেন্দ্র করে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি রাষ্ট্রকে বিপথে চালিত করেছে। শাস্ত্রে আছে, ‘দশ চক্রে ভগবান ভুত হয়’। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ৫৩ বছরের ইতিহাস আমলা, চাটুকার, তেলবাজ, দখলবাজ চক্রে সরকারি লুটপাটের ইতিহাস। ৫৩ বছরের ইতিহাস সরকার প্রধান হিসাবে মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনার স্বৈরাচার হিসাবে ধিক্কারের ইতিহাস। জাতি মুক্তি চায়, স্বৈরাচারী শাসন আর দেখতে চায় না।

বাংলার মানুষ অন্তর থেকেই মুক্তি চায়। কিন্তু বার বার ওই স্বৈরাচারের দোসর এবং দুষ্ট চক্র মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। অথবা অমোঘ প্রত্যাশার মোহে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। যদি তাই না হবে, তাহলে ৫ আগষ্টের পর কিভাবে দেশ ব্যাপী সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকে। আমলাতন্ত্রে ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ আসে। পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কথায় কেন ওই চক্র মাঠে নামবে। জাতির জীবনে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মোহমুক্তি কাটাতে একজন মহৎপ্রাণ মানুষ দরকার। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাঙ্খিত সেই ত্রাতা মহামানব নাও হতে পারেন। তবে তিনি একজন ভাল মানুষ এতে কারও কোন সন্দেহ নেই। অধ্যাপক ইউনূস সেই ব্যক্তিত্ব যিনি কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম বিশ্বব্যাপী ইতিবাচকভাবে পরিচিত করেছেন, সমাদৃত করেছেন। সবদিক বিবেচনায় একথা অনস্বীকার্য দেশ পরিচালনায় ইউনূসের সমকক্ষ আর কেহ নেই। তাইই তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অধ্যাপক ইউনূসে জাতি মুক্তির পথের দিশা চায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক’শ দিন পর এ কথা বলাই যায় তারা চেষ্টা করেছে। উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে তর্কবির্তক আছে। এটা থাকবেই। মাত্র তিন মাসেই কয়েকজন উপদেষ্টার দপ্তর পূনবন্টন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও কিছু মন্ত্রণালয় ছেড়েছেন। যখন যেখানে ঝামেলা আসে সেখানে সরকার উদ্যোগী হয়। কিন্তু ওই যে শাস্ত্রের কথা, সফলতার পথ কখনোই কণ্টকমুক্ত হয় না। ইউনূস সরকারের পথে দশ দিক থেকে কাটা বিছানো হচ্ছে। পলাতক শেখ হাসিনা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়া, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ঋণ খেলাপি, ব্যাংক লুটেরা, গণমাধ্যম, ভিন্নমত ইত্যাদি ইত্যাদি। এতসব কঠিন বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া দূরে থাক টিকে থাকাও অনেকের জন্য সম্ভব হতো না। ইউনূস বলেই এখনো পিছপা হননি। দৃঢ় পদক্ষেপে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। রাজনীতিবিদদের প্রত্যাশার চাইতেও একটু বেশি থাকতে চাইছেন।

তারপরও সময় নিয়ে রাজনীতিবদরা আপত্তি করবে না বলেই বিশ্বাস করি। যদি না সরকারের ভিতর থেকে কিংস পার্টি গঠনের পাঁয়তারা চলে। অধ্যাপক ইউনূসের জন্য এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ বিপ্লবী ছাত্রদের রাজনৈতিক আকাঙ্খা কিভাবে সামাল দিবেন। তিনি কি সংস্কারের নামে উপদেষ্টা মাহফুজদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করবেন। সব দলের গ্রহণযোগ্য সংস্কারে মনযোগী হলেই বরং সবার জন্য ভালো। এতে ইউনূস সরকার সব রাজনৈতিক দলের সাপোর্ট পাবেন। সেক্ষেত্রে উপদেষ্টার চেয়ারে বসা কারও মুখ থেকে গৃহযুদ্ধের বাণী প্রচার বন্ধ করতে হবে। সব পক্ষকে এটা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, দেশটা কিন্তু রাজনীতিবিদরাই চালাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তাই হবে। এটা নিশ্চিত করতে হলে সংস্কার কার্যক্রমে লক্ষ্য রাখতে হবে গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেন বাধাগ্রস্থ না হয়।

বাংলাদেশের সব মানুষের প্রত্যাশা কি! তা অধ্যাপক ইউনূস কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করি। সরকারের এক’শ দিন পূর্তিতে দেওয়া ভাষণেই সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সংস্কারের সূচনা করতে বদ্ধ পরিকর। সেই লক্ষ্য অর্জনে যে চার বছর সময় তিনি নিয়েছেন তা কোনভাবেই অযৌক্তিক না। অধ্যাপক ইউনূস এ দেশের একদম নিন্ম স্তরের মানুষের সাথে কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের চাহিদা তার চেয়ে কেই বা ভালো বুঝবে। বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্খা অনুধাবন করতে তিনি ভুল করবেন না বলেই বিশ্বাস করি। একটি পতিত স্বৈরশাসকের কাঠামোতে পরিচালিত সরকার রেখে শুধুমাত্র নির্বাচনমুখি সংস্কারে দেশের কাঙ্খিত মুক্তি অর্জনের পথ হবে না। হয়ত এটা ভেবেই ইউনূস সরকার সমালোচনার মধ্যেও একটু বেশি সময় নিতে চাচ্ছেন। ৫৩ বছরতো কেটে গেছে, যাক না আরও চার বছর। এক’শ দিনে অন্ততঃ এটা বলা যাচ্ছে সরকারের উপদেষ্টা হয়ে তারা দূর্নীতি করছে না। স্বজনপ্রীতি প্রশ্রয় দেয় না।

রাষ্ট্র, সরকার, আইনবিভাগসহ বাংলাদেশের মানুষ এবং সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরে সংস্কারের সূচনা দরকার। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে তা যথেষ্ট না। পরবর্তি সময়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত বিষয় বাস্তবায়নের পথও তৈরী করতে হবে। একটি সামষ্টিক সংস্কার কার্যক্রমের পথ সৃষ্টিই কেবল সমাধান নয়। সেই পথে কার্যক্রম যাতে সঠিক গতিতে এগিয়ে যায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান, আইন-কানুন, সরকার সবইতো ছিলো। সঠিক প্রয়োগের অভাবে একনায়কতান্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছে। দেশ রসাতলে গেছে। সরকার কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করা হোক যেখানে চাইলেও একজন ব্যক্তি স্বৈরাচার হয়ে উঠতে পারবে না।

নওরোজ/এসএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

জনসাধারণের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু অধ্যাপক ইউনূস

মোহাম্মদ আলম
Update Time : ০৮:১৫:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বিপ্লবী ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার গঠনের শুরুতে আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিলো বললেও ভুল বলা হবে না। যতই দিন গড়াচ্ছে জনসাধারণের প্রাপ্তির পারদ ক্রমাগত নিন্মমুখী। তবে সরকারের এক’শ দিন পর এখনো সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশা জিয়ে আছে। তারা মনে করে, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের মাধ্যমে কাঙ্খিত পরিবর্তনের মহাসড়কে দেশকে চালিত করতে সক্ষম হবেন।

প্রধান উপদেষ্টা এক’শ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জানসাধারণকে আশার বাণিই শুনিয়েছেন। তবে নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে থাকা রাজনীতিবিদগণ তাদের নেতিবাচক প্রতিকৃয়া ব্যক্ত করতে ছাড়েননি। যদিও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দের কোন মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। কারণ কার্যত স্থানীয় পর্যায়ে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যেই ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করছে। দলমত নির্বিশেষে দেশ বিদেশের মানুষ অধ্যাপক ইউনূসের কাছে ভাল কিছু প্রত্যাশা করে। বিপথগামী বাঙালি জাতিকে তিনিই পারবেন সুপথে ফেরাতে, এমন বিশ্বাস ও আস্থা তার উপর আছে।

জাতি হিসাবে বাঙালি চরিত্রে বরাবরই আশাবাদি হওয়ার মত মানসিকতা বিরাজমান। দিগন্তের শেষ বিন্দুতে একঝলকও তাকে আশাবাদি করে। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি বা ঋতু বৈচিত্রই আশা জাগানিয়া। কাঠফাঁটা গ্রীস্মের প্রতিটি প্রহর কাটে প্রশান্তির বর্ষার আশায়। বর্ষার ঝড়-ঝঞ্জায় প্রত্যাশা ফিঁকে হতে হতেই শরতের শুভ্রতায় আলোকিত হয় বাঙালি জীবন। আবার শুস্ক শীতকালের কন্কনে ঠান্ডারাত্রী পার করেই বসন্ত সাজে প্রকৃতি মানুষকে প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রকৃতিগতভাবেই বাঙালি তথা বাংলাদেশি মানুষের আশার প্রদীপ টিম টিম জ্বজল্যমান। নাগরিক জীবনে প্রকৃতির চক্রে সেই আশার সঞ্চার হয়। মানুষ বার বার প্রত্যাশা করতে থাকে। এখন বাংলাদেশের জনসাধারণের নাগরিক প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু অধ্যাপক ইউনূস। মানুষ সুখ-শান্তি চায়। ৫৩ বছর কেটে গেল, কবিতার মতই ‘কেউ কথা রাখেনি’। অধ্যাপক ইউনূসে বাংলার মানুষ শান্তির পথ খুঁজছে। কায়মন বাক্যে সর্বস্তরের প্রার্থনা ইউনূস যেন কথা রাখেন।

প্রশ্ন হচ্ছে! এ দেশের সিংহভাগ জনসাধারণের প্রত্যাশা কি? কি প্রত্যাশা নিয়ে ছাত্র-জনতা, রাজনীতিবিদ, সুশিলসমাজ নারী-পুরুষ আন্দোলনে নেমেছে? কিসে মানুষের শান্তি? জনসাধারণের প্রত্যাশা নিয়ে সরকারের দায় দায়িত্বই বা কি হওয়া উচিত? রাষ্ট্রচিন্তায় এমন হাজারটা প্রশ্ন আসবে। সরল বাক্যে বলতে গেলে মানুষের প্রত্যাশার কোন সীমা নেই। যখন সে একটা অর্জন করে তখন তার প্রত্যাশা হয়ে উঠে একাধিক কেন নয়! এভাবে যত পাই তত চাই তার প্রত্যাশা। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার চুড়ান্ত গন্তব্য ‘অর্থ’। সে অঢেল অর্থের মালিক হতে চায়। তা যে কোন প্রকারে হোক। দেশে প্রচলিত একটা ধারণা ছিল, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী বা আমলা শ্রেনী ক্ষমতার প্রভাবে অঢেল অর্থের মালিক হন।

বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে কে অবৈধ অর্থ উপার্জন করেনি। আওয়ামী লীগের সব থেকে বড় অর্জন (বাস্তবে ব্যর্থতা এবং এটাই তাদের পতনের অন্যতম কারণ) হচ্ছে সব শ্রেনী পেশার মানুষকে অসাধু সিন্ডিকেটে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলা। ঘুষ দূর্ণীতির বেড়াজালে জড়ানো। হাসিনা সরকারের ধ্বংশাত্মক নীতি ঠকিয়ে হলেও নিজে খাও অন্যকে খাওয়ার সুযোগ করে দাও, সিন্ডিকেট করে নাও। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা বা চিকিৎসা সেবামূলক পেশা। এইসব পেশায় নিয়োজিত বাঙালি সমাজও নিজেদের মহান পেশাকে পণ্যে পরিণত করেছে। সেবার চাইতে যেন অর্থ উপার্জনই তাদের মূল লক্ষ্য। একইভাবে একজন সবজি বা ডিম বিক্রেতার চাহিদা কতটুকু হওয়া উচিত?

বাড়ি-গাড়ি, নিত্য মাছ-মাংস বা কিতাদুরস্থ পোশাক পরিচ্ছদ। কিন্তু ডিম বা আলু সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা শত কোটি টাকার মালিক কি ভাবে হয়? একই কথা চাল, ডাল, তেলসহ সকল প্রকার ভোগ্য পণ্যের ব্যবসায়ীদের বেলায় ঘটেছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ বা ধর্ম ব্যবসায়ীদেরই শুধু দোষ। বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবি বা আইনজীবি থেকে শুরু করে সব শ্রেনীর মানুষ নিজেদের কোন না কোনভাবে সিন্ডিকেটে জড়িয়েছে। সিন্ডিকেটে কোন দল নেই। সিন্ডিকেটে কোন রাজনৈতিক পরিচয়ও গণ্য নয়।

আওয়ামী লীগ নেতাদের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের সাথে বিএনপি-জাতীয় পার্টিও ভাগিদার। এখানে একটাই লক্ষ্য আরও বেশি টাকা চাই, জমি চাই, ধন দৌলত চাই। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হয়েছে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বিতারিত হলেও সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে রয়েছে। শুধুমাত্র সিন্ডিকেট নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের স্থলাভিসিক্ত হয়েছে বিএনপি নেতা। এই যখন পরিস্থিতি তখন পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব। ডিম, আলু, পিঁয়াজের দামইবা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে। দখল, লুণ্ঠনই বা কিভাবে বন্ধ হবে। শরষের ভিতরেই ভুত। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পদক্ষেপ বা সদিচ্ছা বার বার ধাক্কা খাচ্ছে। অন্যদিকে অপকর্মের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিন্দুমাত্র অনুতাপ অনুশোচনা নেই। এত কিছুর পরও বিএনপি বা জামায়াত দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার বিরোধিতা করছে। এটা ভালো লক্ষণ বৈকি।

এত কথা বললাম, মানুষ হিসাবে নিজেরা পরিবর্তন না হয়ে, শুধু সরকার প্রধানের কাছে সোনার ডিম প্রত্যাশা করলে ভালো ফল আসবে না। ৫৩ বছরে যা হয়নি ৫৩ হাজার বছরেও ভালো হবে না। বঙ্গবন্ধু সরকার প্রধান হিসাবে নিজে মুখে বলেছেন, ‘আমি চোরের খনি পেয়েছি, ভালো হবে না’। ৫৩ বছরে সরকারের কাছাকাছি থাকা এক শ্রেনীর বাংলাদেশি মানুষ প্রত্যাশার সীমা লঙ্ঘন করেছে। একটি সোনা বা তেলের খনির যত গভিরে যাওয়া হয় ততই খনিজ আহরণ যেমন বৃদ্ধি পায়, বাংলাদেশে যতই দিন যাচ্ছে চোরের সংখ্যা আর চুরির ক্ষেত্র বাড়ছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ১৭ বছরে বাংলাদেশের সব শ্রেনী পেশার মানুষের সীমা ছাড়া প্রত্যাশা দেশকে ক্রমশঃ ধ্বংশের দিকে ধাবিত করেছে। দেশের মানুষ হিসেবে অবচেতন মনে সবাই এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্তি চায়। সব ধর্মের মানুষই অসততা এবং অনৈতিকতা থেকে বাঁচতে চায়।

২০২৪ এর গণ অভ্যুত্থান তারই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৭৫, ১৯৯০, ২০০৬-৮, ২০২৪ বার বার গণঅভ্যুত্থান মানে জাতি হিসাবে বাংলাদেশ সভ্য হওয়ার প্রত্যাশা পোষণ করে। খাঁটি পলিবিধৌত এই ভুমির মতই এখানকার মানুষও বস্তুত খাঁটি। কিন্তু কোন সফলতার পথই কুসুমার্স্তীর্ণ নয়। জাতীয় নেতৃত্ব কেন্দ্র করে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তি রাষ্ট্রকে বিপথে চালিত করেছে। শাস্ত্রে আছে, ‘দশ চক্রে ভগবান ভুত হয়’। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ৫৩ বছরের ইতিহাস আমলা, চাটুকার, তেলবাজ, দখলবাজ চক্রে সরকারি লুটপাটের ইতিহাস। ৫৩ বছরের ইতিহাস সরকার প্রধান হিসাবে মুজিব, জিয়া, এরশাদ, খালেদা, হাসিনার স্বৈরাচার হিসাবে ধিক্কারের ইতিহাস। জাতি মুক্তি চায়, স্বৈরাচারী শাসন আর দেখতে চায় না।

বাংলার মানুষ অন্তর থেকেই মুক্তি চায়। কিন্তু বার বার ওই স্বৈরাচারের দোসর এবং দুষ্ট চক্র মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। অথবা অমোঘ প্রত্যাশার মোহে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। যদি তাই না হবে, তাহলে ৫ আগষ্টের পর কিভাবে দেশ ব্যাপী সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকে। আমলাতন্ত্রে ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ আসে। পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কথায় কেন ওই চক্র মাঠে নামবে। জাতির জীবনে এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মোহমুক্তি কাটাতে একজন মহৎপ্রাণ মানুষ দরকার। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কাঙ্খিত সেই ত্রাতা মহামানব নাও হতে পারেন। তবে তিনি একজন ভাল মানুষ এতে কারও কোন সন্দেহ নেই। অধ্যাপক ইউনূস সেই ব্যক্তিত্ব যিনি কর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাম বিশ্বব্যাপী ইতিবাচকভাবে পরিচিত করেছেন, সমাদৃত করেছেন। সবদিক বিবেচনায় একথা অনস্বীকার্য দেশ পরিচালনায় ইউনূসের সমকক্ষ আর কেহ নেই। তাইই তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। অধ্যাপক ইউনূসে জাতি মুক্তির পথের দিশা চায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক’শ দিন পর এ কথা বলাই যায় তারা চেষ্টা করেছে। উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে তর্কবির্তক আছে। এটা থাকবেই। মাত্র তিন মাসেই কয়েকজন উপদেষ্টার দপ্তর পূনবন্টন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও কিছু মন্ত্রণালয় ছেড়েছেন। যখন যেখানে ঝামেলা আসে সেখানে সরকার উদ্যোগী হয়। কিন্তু ওই যে শাস্ত্রের কথা, সফলতার পথ কখনোই কণ্টকমুক্ত হয় না। ইউনূস সরকারের পথে দশ দিক থেকে কাটা বিছানো হচ্ছে। পলাতক শেখ হাসিনা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়া, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ঋণ খেলাপি, ব্যাংক লুটেরা, গণমাধ্যম, ভিন্নমত ইত্যাদি ইত্যাদি। এতসব কঠিন বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া দূরে থাক টিকে থাকাও অনেকের জন্য সম্ভব হতো না। ইউনূস বলেই এখনো পিছপা হননি। দৃঢ় পদক্ষেপে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। রাজনীতিবিদদের প্রত্যাশার চাইতেও একটু বেশি থাকতে চাইছেন।

তারপরও সময় নিয়ে রাজনীতিবদরা আপত্তি করবে না বলেই বিশ্বাস করি। যদি না সরকারের ভিতর থেকে কিংস পার্টি গঠনের পাঁয়তারা চলে। অধ্যাপক ইউনূসের জন্য এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ বিপ্লবী ছাত্রদের রাজনৈতিক আকাঙ্খা কিভাবে সামাল দিবেন। তিনি কি সংস্কারের নামে উপদেষ্টা মাহফুজদের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করবেন। সব দলের গ্রহণযোগ্য সংস্কারে মনযোগী হলেই বরং সবার জন্য ভালো। এতে ইউনূস সরকার সব রাজনৈতিক দলের সাপোর্ট পাবেন। সেক্ষেত্রে উপদেষ্টার চেয়ারে বসা কারও মুখ থেকে গৃহযুদ্ধের বাণী প্রচার বন্ধ করতে হবে। সব পক্ষকে এটা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, দেশটা কিন্তু রাজনীতিবিদরাই চালাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তাই হবে। এটা নিশ্চিত করতে হলে সংস্কার কার্যক্রমে লক্ষ্য রাখতে হবে গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেন বাধাগ্রস্থ না হয়।

বাংলাদেশের সব মানুষের প্রত্যাশা কি! তা অধ্যাপক ইউনূস কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করি। সরকারের এক’শ দিন পূর্তিতে দেওয়া ভাষণেই সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সংস্কারের সূচনা করতে বদ্ধ পরিকর। সেই লক্ষ্য অর্জনে যে চার বছর সময় তিনি নিয়েছেন তা কোনভাবেই অযৌক্তিক না। অধ্যাপক ইউনূস এ দেশের একদম নিন্ম স্তরের মানুষের সাথে কাজ করেছেন। খেটে খাওয়া মানুষের চাহিদা তার চেয়ে কেই বা ভালো বুঝবে। বাংলাদেশের মানুষের আশা আকাঙ্খা অনুধাবন করতে তিনি ভুল করবেন না বলেই বিশ্বাস করি। একটি পতিত স্বৈরশাসকের কাঠামোতে পরিচালিত সরকার রেখে শুধুমাত্র নির্বাচনমুখি সংস্কারে দেশের কাঙ্খিত মুক্তি অর্জনের পথ হবে না। হয়ত এটা ভেবেই ইউনূস সরকার সমালোচনার মধ্যেও একটু বেশি সময় নিতে চাচ্ছেন। ৫৩ বছরতো কেটে গেছে, যাক না আরও চার বছর। এক’শ দিনে অন্ততঃ এটা বলা যাচ্ছে সরকারের উপদেষ্টা হয়ে তারা দূর্নীতি করছে না। স্বজনপ্রীতি প্রশ্রয় দেয় না।

রাষ্ট্র, সরকার, আইনবিভাগসহ বাংলাদেশের মানুষ এবং সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরে সংস্কারের সূচনা দরকার। যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে তা যথেষ্ট না। পরবর্তি সময়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত বিষয় বাস্তবায়নের পথও তৈরী করতে হবে। একটি সামষ্টিক সংস্কার কার্যক্রমের পথ সৃষ্টিই কেবল সমাধান নয়। সেই পথে কার্যক্রম যাতে সঠিক গতিতে এগিয়ে যায় তাও নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধান, আইন-কানুন, সরকার সবইতো ছিলো। সঠিক প্রয়োগের অভাবে একনায়কতান্ত্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়েছে। দেশ রসাতলে গেছে। সরকার কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করা হোক যেখানে চাইলেও একজন ব্যক্তি স্বৈরাচার হয়ে উঠতে পারবে না।

নওরোজ/এসএইচ