ঢাকা ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা খুন, থানার সামনে বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • Update Time : ১১:০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২২৮ Time View

রাত সাড়ে ১২টার দিকে বংশাল থানা ঘেরাও করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে আরমানিটোলার মাহুতটুলিতে পানির পাম্প গলির নুর বক্স লেনের একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

জোবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও জোবায়েদ হোসেনের সহপাঠীদের তথ্যমতে, জোবায়েদ ওই ভবনের একটি বাসায় এইচএসসির এক ছাত্রীকে পড়াতেন। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ছাত্রীকে নিয়ে গেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অন্য দিনের মতো জোবায়েদ গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে পড়াতে যান। পরে স্থানীয় লোকজন ছয়তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর গায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত জার্সি ছিল। সেখানে তাঁর নামও লেখা ছিল। এটি দেখে লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন দেন।

খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হন। ফরেনসিক টিম আসার পর রাত ১১টার দিকে জোবায়েদের মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিয়ে যায় পুলিশ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে রোববার গভীর রাতে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরাছবি: সংগৃহীত

খবর পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নুর বক্স লেনের ওই বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলকারীরা বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার মোড়, জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ থেকে ওই শিক্ষার্থীর মামাকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ‘আমার ভাই মর্গে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘রাস্তাঘাটে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘বিচার বিচার চাই, জোবায়েদ হত্যার বিচার চাই’, ‘প্রশাসনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাত পৌনে দুইটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভ চলে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ছয় ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও জোবায়েদের হত্যাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। জোবায়েদের হত্যার সঙ্গে শুধু ওই মেয়ে নয়, তার মামা ডা. ওয়াহিদকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনতে হবে। কারণ, তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিলেন। তিনি বলেছেন, জোবায়েদের পালস আছে কি না সেটা চেক করেছেন এবং ৯৯৯–এ কল করে পুলিশকে জানিয়েছেন।

পূর্বপরিকল্পনা করে জোবায়েদকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান ফরহাদ।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। জোবায়েদকে হত্যাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা খুন, থানার সামনে বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
Update Time : ১১:০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে আরমানিটোলার মাহুতটুলিতে পানির পাম্প গলির নুর বক্স লেনের একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।

জোবায়েদ হোসেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

পুলিশ ও জোবায়েদ হোসেনের সহপাঠীদের তথ্যমতে, জোবায়েদ ওই ভবনের একটি বাসায় এইচএসসির এক ছাত্রীকে পড়াতেন। তাঁর লাশ উদ্ধারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই ছাত্রীকে নিয়ে গেছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অন্য দিনের মতো জোবায়েদ গতকাল সন্ধ্যায় সেখানে পড়াতে যান। পরে স্থানীয় লোকজন ছয়তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর গায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসংবলিত জার্সি ছিল। সেখানে তাঁর নামও লেখা ছিল। এটি দেখে লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোন দেন।

খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সেখানে উপস্থিত হন। ফরেনসিক টিম আসার পর রাত ১১টার দিকে জোবায়েদের মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) নিয়ে যায় পুলিশ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোবায়েদ হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে রোববার গভীর রাতে তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরাছবি: সংগৃহীত

খবর পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নুর বক্স লেনের ওই বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলকারীরা বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার মোড়, জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ করেন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ থেকে ওই শিক্ষার্থীর মামাকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ‘আমার ভাই মর্গে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘রাস্তাঘাটে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে?’, ‘বিচার বিচার চাই, জোবায়েদ হত্যার বিচার চাই’, ‘প্রশাসনের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাত পৌনে দুইটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে বিক্ষোভ চলে।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ছয় ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও জোবায়েদের হত্যাকারীদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন। জোবায়েদের হত্যার সঙ্গে শুধু ওই মেয়ে নয়, তার মামা ডা. ওয়াহিদকেও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনতে হবে। কারণ, তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিলেন। তিনি বলেছেন, জোবায়েদের পালস আছে কি না সেটা চেক করেছেন এবং ৯৯৯–এ কল করে পুলিশকে জানিয়েছেন।

পূর্বপরিকল্পনা করে জোবায়েদকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান ফরহাদ।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। জোবায়েদকে হত্যাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’