চীন–জাপানে ছড়াচ্ছে এইচএমপিভি ভাইরাস; বাংলাদেশে প্রয়োজন সতর্কতা
- Update Time : ০৬:৩৭:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৪০ Time View
করোনার পর কোনো ভাইরাসের নাম শুনলেই ভয়ে চুপসে যান অনেকে। করোনার সেই ভয়াবহতা আর নেই। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কার কথা প্রায়ই বলছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই শঙ্কার মধ্যেই নতুন এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলো। অদ্ভুত নামের ভাইরাসটি বর্তমান সময়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নতুন এই ভাইরাসের নাম দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন আর জাপানে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।। বিশেষজ্ঞদের অনেকের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। যদিও কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা এখনই দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এইচএমভির প্রাদুর্ভাব ভাবাচ্ছে তাঁদের।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল হেড বলেন, ‘আরও একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এখনো কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, সেটি নিশ্চিত না বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিজ এক্স।’
হাম, কলেরা, বার্ড ফ্লু ও স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে।চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, করোনার সময়ে হাসপাতালে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও। একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ ছাড়িয়েছে সাত লাখেরও বেশি মানুষের মধ্যে।
মাইকেল হেড বলেন, ‘আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে। মানুষের মৃত্যুহার পৌঁছাবে সর্বোচ্চে।
ভাইরাসটি বিশেষ করে ছোট শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে ৷ চিনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারকারী সিসিটিভি (China Central Television) জানিয়েছে যে ডিসেম্বরের শেষের দিকে ১৪ বছর এবং তার কম বয়সি শিশুদের মধ্যে এই রোগটি দেখা গিয়েছিল ৷ ভাইরাসটি শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ৷
> এইচএমপিভির উপসর্গগুলো কী?
এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট।
এইচএমপিভির ইনকিউবেশন পিরিয়ড বা উন্মেষপর্ব সাধারণত তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে হয়। তবে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে লক্ষণগুলো বিভিন্ন সময়কালের জন্য স্থায়ী হয়।
জ্বর, নাক বন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠান্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী সময় এই ভাইরাসের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
> কীভাবে ছড়ায়?
এইচএমপিভি অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতোই ছড়ায়। যার মধ্যে রয়েছে-
১. কাশি এবং হাঁচি থেকে নিঃসরণ।
২. হাত মেলানো বা স্পর্শ করা।
৩. সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করা এবং তারপর মুখ, নাক বা চোখ হাত দিয়ে স্পর্শ করা।
বেজিং-এর ইউআন হাসপাতালের শ্বাসযন্ত্র ও সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক লি টংজেং বলেন, “ভাইরাসটি শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে । সংক্রমিত বস্তু স্পর্শ করেও ভাইরাস ছড়াতে পারে ৷”
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা: বিশেষজ্ঞরা মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন ৷
অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ব্যবহার না করা: এই ভাইরাসের জন্য বর্তমানে কোনও নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ নেই ৷ সাংহাই হাসপাতালের একজন শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরামর্শ ছাড়া এইচএমপিভির চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন ।
এদিকে, চিনে হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাবের খবরের মধ্যে, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি ‘সাধারণ কাশি, সর্দি এবং অন্য যে কোনও শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতো’ এবং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই । এইচএমপিভি চিনে ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতো যা সর্দি, কাশির মতো সমস্যা সৃষ্টি করে, এতে ভয় পাওয়ার দরকার নেই ।
> হোমিও মেডিসিনঃ-লক্ষণ সাদৃশ্যে প্রাথমিক ভাবে যেইসব মেডিসিন এইচএমপিভি জন্য আসতে পারে রাসটক্স,সারসেনিয়া পুরপুরিয়া,বাইয়োনিয়া,ভ্যাকসিনাম,ম্যাল্যান্ডরিনাম,পালসেটিলা,এন্টিমক্রুড,সালফার,থুজা,ভেরিওলিনাম,মারকুরিয়াস সল,সাইলিসিয়া,ব্রায়োনিয়া এল্ব সহ আরো অনেক ঔষধ লক্ষণের উপর আসতে পারে তাই নিজে নিজে ব্যবহার না করে সঠিক চিকিৎসা পাইতে হইলে অভিজ্ঞ চিকিৎকের পরামর্শ নিন।
পরিশেষে বলতে চাই,এইচএমপিভি এলোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোনো চিকিৎসা নেই। তবে যেকোনো ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মতই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়।আর হোমিওপ্যাথি সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করলে সাধারণত রোগীরা এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন । আমি সবাইকে অনুরোধ করব, যদি এই রোগের লক্ষণ বাংলাদেশে দেখতে পান তাহলে দ্রুত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসা নিলে দ্রুত সময়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
লেখক,
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ।
কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
চেম্বার : অলংকার শপিং কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম।
ইমেইল,[email protected]
মোবা.০১৮২২৮৬৯৩৮৯