চিকেন নেক এলাকায় অনুপ্রবেশ রুখতে সতর্ক মমতা

- Update Time : ১০:০৫:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ৩৮ Time View
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে চিকেন নেক এলাকায় অনুপ্রবেশ রুখতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বার্তা দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনদিনের সফরে উত্তরবঙ্গ গিয়ে মমতা বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলো খুবই স্পর্শকাতর। সীমান্ত এলাকায় সজাগ থাকতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে যেন আশ্রয় না নিতে পারে।
উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে বুধবার (২১ মে) আটটি জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
বুধবার সফরের শেষদিনে শিলিগুড়ির প্রশাসনিক ভবন উত্তর কন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে এই কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক, পুলিস সুপার-সহ শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
বৈঠক থেকে কর্মকর্তাদের ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে বাংলায় যাতে কোনো ‘সন্ত্রাসী’ আশ্রয় নিতে না পারে, সেজন্য উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও সাব-ইন্সপেক্টরদের (আইসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তরকন্যা প্রেক্ষাগৃহে বৈঠকের শুরুতেই মমতা ব্যানার্জী বলেন, সীমান্ত এলাকা খুব স্পর্শকাতর। শিলিগুড়ি সর্বদা চিকেন নেক, যা উত্তর-পূর্বের গেটওয়ে। এই সব বিচার-বিবেচনা করে তিনদিন ধরে আমরা এখানে রয়েছি। আমাদের সরকারের চিফ সেক্রেটারিও বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখছেন। আগে পুলিশ তিন-চারবার গিয়ে এলাকায় ঘুরতো। এখন ঘোরেই না। যত বেশি পুলিশের ভ্যান ঘুরবে, মানুষ জানবে প্রশাসন সতর্ক আছে।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘আমি শুনেছি অনেক বাইরের লোক কেউ আসাম থেকে, কেউবা অন্য জায়গা থেকে বিভিন্ন এলাকায় ঢুকছে। আমাদের দলের সমর্থকের কাছ থেকে, সরকারি কর্মকর্তাদের থেকেও বিভিন্ন তথ্য নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি পুলিশকে বলবো সাবধান হোন। বাইরে থেকে কেউ যাতে আশ্রয় নিতে না পারে, তেমনি মিথ্যা কথা বলে যারা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকবেন।
তিনি আরোও বলেন, বর্ডারে বিএসএফ কাজ করছে বলে আপনারা চোখ-কান বন্ধ রাখবেন এটা হয় না। পাড়ার ক্লাবগুলোকেও হাতে রাখুন। যতদিন যেখানে থাকবেন, কাজ ভালো করে করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে অন্য রাজ্যের মানুষ ঢুকে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে চলে যাচ্ছে, এমন অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাইরে থেকে এসে অনেকে ভোটার কার্ড ও আধার কার্ডের তথ্য নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমাদের দলের অনেকের সঙ্গে এটা হয়েছে। সাবধান থাকতে হবে, বাইরে থেকে এসে কোনো সন্ত্রাসী বা গুপ্তচর যেন শেল্টার নিতে না পারে। কেউ যেন মিথ্যা কথা বলে আমাদের জনগণের তথ্য হাতিয়ে নিতে না পারে।
উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসনিক পদে থাকা সবাইকে সর্তক করে মমতা বলেন, আপনারা নিজের এলাকাকে সতর্ক থাকুন, যাতে কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি না হয়। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহারের সাথে চার-পাঁচটা দেশের সীমান্ত রয়েছে। তাই আপনাদের এলাকাগুলো বেশি স্পর্শকাতর। ফলে আপনাদের কাজটা খুব মন দিয়ে করতে হবে।
সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা ও প্ররোচনামূলক খবর খবর ছড়ানোর বিরুদ্ধেও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইদানিং কিছু মিডিয়ার একাংশ ও সোশ্যাল মিডিয়ার কেউ কেউ উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমের একাংশ ভুয়া ও মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছে, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। রাজস্থানের ছবি নিয়ে বাংলা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে, আবার বাংলাদেশের ছবি দিয়ে বাংলা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কয়েকদিন আগে দেখলাম, প্রতিবেশী একটি দেশকে হুমকি দেওয়ার খবর দেখাচ্ছে। এটা প্রচার করা উচিত ছিল না। উত্তেজনা বাড়বে, সীমান্তে অশান্তি বাড়বে। আর তাতে সমস্যায় পড়বে সাধারণ মানুষ। শান্তি বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।
এরপর মমতা ব্যানার্জী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও এসপিকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়ে বলেন, ডিএম ও এসপি সবাইকে বলছি- নিজেদের এলাকায় সতর্ক থাকুন। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং-কালিম্পং-কোচবিহার-উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের চারপাশে সীমান্ত রয়েছে। তাই আপনাদের মন দিয়ে কাজ করতে হবে।