ঢাকা ১০:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি

গ্যাস সংকটে চার মাস ধরে শাহজালাল সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

মো .মুহিবুর রহমান, সিলেট
  • Update Time : ০৭:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • / ৬২ Time View

গ্যাস সংকটের কারণে চার মাস ধরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় সার কারখানা শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (এসএফসিএল) উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকায় দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানায় সার উৎপাদনে দৈনিক গ্যাস প্রয়োজন ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না থাকায় গত ১২ মার্চ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ১৩ মার্চ গ্যাস সংকটের কারণে সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়।  দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে বিকল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুন ওই সার কারখানার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ উৎপাদনে যায় কারখানাটি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগের দিন (১২ মার্চ) পর্যন্ত সার উৎপাদন করা হয় ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন। কারখানা বন্ধ থাকায় দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

কারখানা সূত্রে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের ১৩ মার্চ কারখানার ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বিগত ১১৯ দিনে সরকার কারখানা থেকে ৫২৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কবে ফের কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।

কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, গত এক মাস আগে মাত্র দু’দিনের  জন্য কারখানা চালু হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় যন্ত্রাংশে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকলে মেশিনের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাবে।

কারখানায় সার উৎপাদন বন্ধ থাকায় হতাশায় শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাকুল ইসলাম সাব্বিরের কার্যালয়ে সার কারখানা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় করেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাকুল ইসলাম সাব্বির জানান, সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে কারখানার বিভিন্ন কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি অকেজো হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

শাহাজালাল সার কারখানা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ মুন্না জানান, গ্যাস সংকটের কারণে শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রায় চার মাস ধরে সার কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা হতাশায় আছেন। যারা দৈনিক মজুরীতে কারখানায় কর্মরত তারা কষ্টে দিনপাত কাটাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সিলেট শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ। অথচ সিলেটের কৈলাশটিলায় ৮নং কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই কূপ থেকে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। সিলেটে গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শাহজালাল সার কারখাসা বন্ধ থাকায় দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল চন্দ্র ঘোষ এর সাথে বারবার চেষ্টা করে ও যোগাযোগ করা যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি

গ্যাস সংকটে চার মাস ধরে শাহজালাল সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

মো .মুহিবুর রহমান, সিলেট
Update Time : ০৭:৪৯:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

গ্যাস সংকটের কারণে চার মাস ধরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় সার কারখানা শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের (এসএফসিএল) উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানা বন্ধ থাকায় দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কারখানায় সার উৎপাদনে দৈনিক গ্যাস প্রয়োজন ৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না থাকায় গত ১২ মার্চ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ১৩ মার্চ গ্যাস সংকটের কারণে সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়।  দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে বিকল হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, ৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুন ওই সার কারখানার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ৬ মার্চ উৎপাদনে যায় কারখানাটি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগের দিন (১২ মার্চ) পর্যন্ত সার উৎপাদন করা হয় ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮১২ মেট্রিক টন। কারখানা বন্ধ থাকায় দৈনিক সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

কারখানা সূত্রে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের ১৩ মার্চ কারখানার ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে বিগত ১১৯ দিনে সরকার কারখানা থেকে ৫২৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কবে ফের কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।

কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, গত এক মাস আগে মাত্র দু’দিনের  জন্য কারখানা চালু হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকায় যন্ত্রাংশে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকলে মেশিনের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাবে।

কারখানায় সার উৎপাদন বন্ধ থাকায় হতাশায় শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাকুল ইসলাম সাব্বিরের কার্যালয়ে সার কারখানা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় করেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাকুল ইসলাম সাব্বির জানান, সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে কারখানার বিভিন্ন কেমিক্যাল, ক্যাটালিস্ট, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি অকেজো হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

শাহাজালাল সার কারখানা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমদ মুন্না জানান, গ্যাস সংকটের কারণে শাহজালাল সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রায় চার মাস ধরে সার কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা হতাশায় আছেন। যারা দৈনিক মজুরীতে কারখানায় কর্মরত তারা কষ্টে দিনপাত কাটাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সিলেট শহর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে ফেঞ্চুগঞ্জ। অথচ সিলেটের কৈলাশটিলায় ৮নং কূপে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই কূপ থেকে দৈনিক ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। সিলেটে গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শাহজালাল সার কারখাসা বন্ধ থাকায় দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে শাহজালাল সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল চন্দ্র ঘোষ এর সাথে বারবার চেষ্টা করে ও যোগাযোগ করা যায়নি।