ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিটিভিনামা

খোরশেদ-সামছুলের টাকা কামানোর মেশিন বিটিভিতে

নওরোজ রিপোর্ট
  • Update Time : ০৯:২৬:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৯৬ Time View

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি এখনো স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রাহুমুক্ত হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের দোসর কয়েকজন প্রযোজক অতিতের মতই বিটিভিকে টাকা কামানোর মেশিন হিসাবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলতঃ ৬’টায় প্রচারিত দেশ ও জনপদের সংবাদ বলতেই ওইসব অসাধু প্রযোজকদের টাকার খনি।

নওরোজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশ ও জনপদের সংবাদ বা ৬টার সংবাদে প্রযোজকদের মধ্যে অনেকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করে থাকেন । বিটিভির ক্যামেরায় স্যুট করা না বা এ্যাসেইনমেন্ট দেওয়া হয়নি, মোবাইল ফোনে স্যুট করা ফুটেজ চালানো হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের পাতি নেতা বা কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন হোক টাকার বিনিময়ে তারা সেই নিউজটা ৬টার সংবাদে প্রচার করে। প্রযোজকদের মধ্যে- জাহিদুল ইসলাম, মইনুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, সামছুল আলম, মনিরুজ্জামান খান, মনির হোসেন। সম্প্রতি ৬টার সংবাদে টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের সংবাদ প্রচার করায় সিনিয়র নির্বাহী প্রযোজক মইনুল ইসলামকে শোকজ দেওয়া হয়েছে এবং চুক্তিভিত্তিক ভিডিও এডিটর আবদুল মতিন কে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

প্রযোজক মনিরুজ্জামান খান অত্যন্ত চালাক প্রকৃতির লোক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের একই এলাকার হওয়ায় তাকে অনৈতিকভাবে বিটিভির কাভারেজ দিয়েছেন এবং নিজেও তাকে দিয়ে অনেক সুবিধা আদায় করেছেন। আবদুল মালেক এলজিইডি সচিব থাকাকালীন তাকে দিয়ে মনিরুজ্জামান খানের বাড়ির রাস্তা পাকা করেন এবং আরো সুবিধা নিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামে বদলি অবস্থায় রিসোর্টে ভিলা ভাড়া করে প্রায় মাসখানেক পরিবার নিয়ে সেখানে থেকেছেন। বাড্ডা আনন্দনগরে নিজের টাকায় কিনেছেন দুইটি ফ্ল্যাট। তাছাড়া ইউনিসেফের বিভিন্ন ফরমায়েশি সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে হাতিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তার এত সম্পদের উৎস কি? তা উন্মোচন করা দরকার বলে জানিয়েছেন বিটিভিতে কর্মরত তারই অন্য সহকর্মী।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মানুষ যখন পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছে সেই সময়ে প্রযোজক সিদ্দিকুর রহমান, খোরশেদ আলম আকাশ এবং মোঃ সামছুল আলম আফতাবনগরে ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাদের টাকা কোথা থেকে এলো? তা খতিয়ে দেখা দরকার।

প্রধান উপদেষ্টার সংবাদ বিটে কাজ করার মত রিপোর্টার হিসাবে কাজ করার যোগ্যতা না থাকলেও তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই দুই প্রযোজক। পিটিসি দেওয়ার ক্ষেত্রে বার বার ভুল করলেও জাতিসংঘের মত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টেও ভ্রমণ করেছেন প্রযোজক সামছুল আলম। সংবাদ উপস্থাপনায় এত ত্রুটি থাকার পরও তার ভয়েজে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। অথচ কোনো রিপোর্টারের ভয়েজে যদি সামান্য পরিমান আঞ্চলিকতা প্রকাশ পায় তাহলে তাকে রিপোর্টে ভয়েজ দিতে দেওয়া হয় না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, সামসুল আলম এবং খোরশেদ আলম-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নিউজ ৬টার সংবাদে প্রচার করেছে এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। অলিখিত নিয়ম প্রচার আছে যে, বিটিভির বার্তা শাখার অন্য প্রযোজকের অনুষ্ঠান থেকেও তাদেরকে দুই হাজার আটশ টাকা দিতে হয়। অন্যথায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়না।

প্রধান উপদেষ্টা বিটের সংযুক্ত থাকা অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাহী প্রযোজক বার্তা শামসুল আলম বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ না করেই গ্রন্থনাকারী হিসেবে নাম লিখিয়ে অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। প্রযোজকরা সংবাদের কাজে গুরুত্ব না দিয়ে প্রোগ্রাম বানাতে ব্যস্ত। বেশিরভাগ প্রযোজক বিভিন্ন প্রোগ্রাম প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। নামে বেনামে তারা শিল্পী সম্মানীর টাকা তুলে নিচ্ছেন। রিপোর্টারদের সংগ্রহ করা সংবাদ দিয়ে তারা প্রোগ্রাম বানিয়ে টাকা ইনকাম করছে। তারা সংবাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে এডিটরদের দিয়ে প্রোগ্রাম তৈরি করে। এডিটররাও সামান্য কিছু টাকার আশায় সংবাদের কাজকে অবহেলা করে সংবাদের মান ক্ষুন্ন করছে। একজন প্রযোজক যেখানে সরকার থেকে বেতন পাচ্ছেন তারপরও সে কিভাবে সরকার বা বিটিভির জন্য প্রোগ্রাম বানিয়ে আলাদাভাবে টাকা উপার্জন করেন।

অতি সম্প্রতি প্রযোজক শামসুল আলম ও খোরশেদ আলম আকাশকে একসাথে অনেক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে! বিটিভির নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রধান উপদেষ্টার বিটে এটাচ থাকা ওই দুইজনকে একইসাথে প্রোগ্রাম ম্যানেজারের এর দায়িত্ব গেওয়া হয়েছে! তারা দুইজন একসাথে প্রধান উপদেষ্টার বিট, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিট, প্রামাণ্য চিত্রের গ্রন্থনা ও সবশেষে প্রোগ্রাম ম্যানেজার! এত দায়িত্ব কিভাবে সম্ভব?

এতদিন বার্তা বিভাগে লুটপাট করেছেন এখন পুরো বিটিভিতে লুটপাটের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে! আর এসব কিছুই তাসমিনা, পবন ও মুন্সীর প্রত্যক্ষ মদদে! এই তোঘলকি কান্ড বিটিভি আর ক’দিন হজম করে যাবে? দেশের সম্পদ লুটপাটের এ অরাজকতার অবসান কবে হবে?

Please Share This Post in Your Social Media

বিটিভিনামা

খোরশেদ-সামছুলের টাকা কামানোর মেশিন বিটিভিতে

নওরোজ রিপোর্ট
Update Time : ০৯:২৬:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি এখনো স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রাহুমুক্ত হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের দোসর কয়েকজন প্রযোজক অতিতের মতই বিটিভিকে টাকা কামানোর মেশিন হিসাবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলতঃ ৬’টায় প্রচারিত দেশ ও জনপদের সংবাদ বলতেই ওইসব অসাধু প্রযোজকদের টাকার খনি।

নওরোজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশ ও জনপদের সংবাদ বা ৬টার সংবাদে প্রযোজকদের মধ্যে অনেকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করে থাকেন । বিটিভির ক্যামেরায় স্যুট করা না বা এ্যাসেইনমেন্ট দেওয়া হয়নি, মোবাইল ফোনে স্যুট করা ফুটেজ চালানো হয়। কোনো রাজনৈতিক দলের পাতি নেতা বা কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন হোক টাকার বিনিময়ে তারা সেই নিউজটা ৬টার সংবাদে প্রচার করে। প্রযোজকদের মধ্যে- জাহিদুল ইসলাম, মইনুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, সামছুল আলম, মনিরুজ্জামান খান, মনির হোসেন। সম্প্রতি ৬টার সংবাদে টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের সংবাদ প্রচার করায় সিনিয়র নির্বাহী প্রযোজক মইনুল ইসলামকে শোকজ দেওয়া হয়েছে এবং চুক্তিভিত্তিক ভিডিও এডিটর আবদুল মতিন কে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

প্রযোজক মনিরুজ্জামান খান অত্যন্ত চালাক প্রকৃতির লোক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনের একই এলাকার হওয়ায় তাকে অনৈতিকভাবে বিটিভির কাভারেজ দিয়েছেন এবং নিজেও তাকে দিয়ে অনেক সুবিধা আদায় করেছেন। আবদুল মালেক এলজিইডি সচিব থাকাকালীন তাকে দিয়ে মনিরুজ্জামান খানের বাড়ির রাস্তা পাকা করেন এবং আরো সুবিধা নিয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামে বদলি অবস্থায় রিসোর্টে ভিলা ভাড়া করে প্রায় মাসখানেক পরিবার নিয়ে সেখানে থেকেছেন। বাড্ডা আনন্দনগরে নিজের টাকায় কিনেছেন দুইটি ফ্ল্যাট। তাছাড়া ইউনিসেফের বিভিন্ন ফরমায়েশি সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে হাতিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তার এত সম্পদের উৎস কি? তা উন্মোচন করা দরকার বলে জানিয়েছেন বিটিভিতে কর্মরত তারই অন্য সহকর্মী।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে মানুষ যখন পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেই হাঁপিয়ে যাচ্ছে সেই সময়ে প্রযোজক সিদ্দিকুর রহমান, খোরশেদ আলম আকাশ এবং মোঃ সামছুল আলম আফতাবনগরে ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাদের টাকা কোথা থেকে এলো? তা খতিয়ে দেখা দরকার।

প্রধান উপদেষ্টার সংবাদ বিটে কাজ করার মত রিপোর্টার হিসাবে কাজ করার যোগ্যতা না থাকলেও তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই দুই প্রযোজক। পিটিসি দেওয়ার ক্ষেত্রে বার বার ভুল করলেও জাতিসংঘের মত গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টেও ভ্রমণ করেছেন প্রযোজক সামছুল আলম। সংবাদ উপস্থাপনায় এত ত্রুটি থাকার পরও তার ভয়েজে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। অথচ কোনো রিপোর্টারের ভয়েজে যদি সামান্য পরিমান আঞ্চলিকতা প্রকাশ পায় তাহলে তাকে রিপোর্টে ভয়েজ দিতে দেওয়া হয় না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, সামসুল আলম এবং খোরশেদ আলম-এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাই হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নিউজ ৬টার সংবাদে প্রচার করেছে এবং তারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। অলিখিত নিয়ম প্রচার আছে যে, বিটিভির বার্তা শাখার অন্য প্রযোজকের অনুষ্ঠান থেকেও তাদেরকে দুই হাজার আটশ টাকা দিতে হয়। অন্যথায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়না।

প্রধান উপদেষ্টা বিটের সংযুক্ত থাকা অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে নির্বাহী প্রযোজক বার্তা শামসুল আলম বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাজ না করেই গ্রন্থনাকারী হিসেবে নাম লিখিয়ে অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। প্রযোজকরা সংবাদের কাজে গুরুত্ব না দিয়ে প্রোগ্রাম বানাতে ব্যস্ত। বেশিরভাগ প্রযোজক বিভিন্ন প্রোগ্রাম প্রযোজক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। নামে বেনামে তারা শিল্পী সম্মানীর টাকা তুলে নিচ্ছেন। রিপোর্টারদের সংগ্রহ করা সংবাদ দিয়ে তারা প্রোগ্রাম বানিয়ে টাকা ইনকাম করছে। তারা সংবাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে এডিটরদের দিয়ে প্রোগ্রাম তৈরি করে। এডিটররাও সামান্য কিছু টাকার আশায় সংবাদের কাজকে অবহেলা করে সংবাদের মান ক্ষুন্ন করছে। একজন প্রযোজক যেখানে সরকার থেকে বেতন পাচ্ছেন তারপরও সে কিভাবে সরকার বা বিটিভির জন্য প্রোগ্রাম বানিয়ে আলাদাভাবে টাকা উপার্জন করেন।

অতি সম্প্রতি প্রযোজক শামসুল আলম ও খোরশেদ আলম আকাশকে একসাথে অনেক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে! বিটিভির নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রধান উপদেষ্টার বিটে এটাচ থাকা ওই দুইজনকে একইসাথে প্রোগ্রাম ম্যানেজারের এর দায়িত্ব গেওয়া হয়েছে! তারা দুইজন একসাথে প্রধান উপদেষ্টার বিট, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিট, প্রামাণ্য চিত্রের গ্রন্থনা ও সবশেষে প্রোগ্রাম ম্যানেজার! এত দায়িত্ব কিভাবে সম্ভব?

এতদিন বার্তা বিভাগে লুটপাট করেছেন এখন পুরো বিটিভিতে লুটপাটের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে! আর এসব কিছুই তাসমিনা, পবন ও মুন্সীর প্রত্যক্ষ মদদে! এই তোঘলকি কান্ড বিটিভি আর ক’দিন হজম করে যাবে? দেশের সম্পদ লুটপাটের এ অরাজকতার অবসান কবে হবে?