ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
৭ বছরে ও সুবর্ণা হত্যার বিচার হয়নি, হুমকির মুখে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু; রংপুরে দুই ক্লিনিককে জরিমানা,ওটি সিলগালা পিআর পদ্ধতি দেশকে আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে – রিজভী তিন দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিল শেকৃবি শিক্ষার্থীরা কুবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ অভিযুক্ত ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ; তদন্ত কমিটি গঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আকাশমনি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ১-১১’র প্রেক্ষাপট তৈরি করে আ.লীগ কর্তৃত্বশীল শাসকরূপে চিহ্নিত হয় : মাওলানা আবদুল হালিম মাদক বিষাক্ত সাপের মতো ব্যক্তি ও সমাজকে নিঃশেষ করে দেয় জুলাই আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ শুরু হয়েছিল রংপুর থেকেই: নাহিদ ইসলাম

কেন বার বার কোরআন অবমাননা হয় সুইডেনে

নওরোজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০৯:০০:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
  • / ৩০২ Time View

ইউরোপের শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে খ্যাতি আছে সুইডেনের। কিন্তু প্রায়ই দেশটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননার ছাপ পাওয়া যায়।

গত বুধবার আবারো দেশটির রাজধানী স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে এমন ঘটনা ঘটান এক ব্যক্তি। এরপর আবারও বিশ্বের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে সুইডেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এরকম ঘটনা এটিই প্রথম নয়। দেশটি মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন অবমাননার জন্য বিশ্বজুড়ে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে।

সুইডিশ রাজধানী স্টকহোমের প্রধান মসজিদের সামনে ঈদুল আজহার দিনে প্রকাশ্যে কোরআন যিনি আগুন দিলেন, তিনি এক ইরাকি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি। তার নাম সালওয়ান মোমিকা।

তিনি পাঁচ বছর আগে অভিবাসী হিসেবে সুইডেনে আসেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন এখন তার সুইডিশ পাসপোর্ট রয়েছে।

সুইডেনের গণমাধ্যম এর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক বলে দাবি করেন। তার ভাষ্য, পশ্চিমা সমাজের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং নারী অধিকারের মতো বিষয়গুলোর সাথে কোরআন সাংঘর্ষিক এবং তাই এটা নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু সুইডেনে প্রকাশ্যে কোরআনের অবমাননার কাজটি তিনিই প্রথম করেননি। এরও আগেও বেশ কয়েক বার সুইডেনে কোরআন পোড়ানো হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে মালমো শহরে স্ট্রাম কুর্স নামের একটি কট্টর ডানপন্থী সংগঠন কোরআন শরিফ পোড়ায় এবং এর জেরে সে দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ চলে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডেনমার্ক ও সুইডেনের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল স্ট্রাম কুর্স অভিবাসন-বিরোধী ও ইসলাম-বিদ্বেষী বলে পরিচিত।

সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন রাসমুস পালুদান নামের একজন উগ্রপন্থী। চলতি বছর জানুয়ারিতে এবং ২০২০ সালেও সুইডেনে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। সুইডিশদের সাথে ইসলামের প্রথম পরিচয় হয় ১৬শ-১৭শ শতকে, যখন দেশটি সামরিক শক্তি অর্জন করছিল।

সুইডিশ সাম্রাজ্যের প্রসারের সাথে সাথে তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিও চরম আকার ধারণ করে। সুইডিশরা যদিও মূলত ক্যাথলিক ছিলেন, কিন্তু ১৬শ শতকে দেশটি একটি লুথেরান প্রটেস্টান্ট দেশে পরিণত হয়। ১৬৬৫ সালে সুইডিশরা তার পিতৃপুরুষের ধর্মমতকে বেআইনি ঘোষণা করেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সে সময় ক্যাথলিক ও মুসলমানদের ‘প্রকৃত খ্রিস্টান ধর্মের’ শত্রু হিসেবে দেখা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে সুইডেনে উদারনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে। দেশটি পরিচালিত হয় ধর্মনিরপেক্ষ আইনের আওতায়।

কিন্তু বর্তমান সময়ে সুইডিশদের মনোভাবে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে বলে মনে করছেন সুইডেনের ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর মুস্তাফা। তিনি বলছেন, সুইডেনে ইসলাম বিদ্বেষ ক্রমশই বাড়ছে। আর সেটার বহিঃপ্রকাশ শুধু ইন্টারনেটে নয়, বাস্তবে মুসলমানদের জীবনে প্রতিনিয়ত তা ঘটছে। কোরআন পোড়ানোর সর্বশেষ ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি নানা ধরনের বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাটে মুসলমান নারীদের হেনস্থা, মুসলিমদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া এবং মসজিদের ওপর চোরা হামলার ঘটনা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টি মূলত উগ্র ডানপন্থী দল, যারা একসময় নাৎসি ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করতো। মাত্রা কম হলেও এরা এখনও বর্ণবাদী এবং মাইগ্র্যান্ট-বিরোধী। ফলে যেসব কট্টর ডানপন্থী দলকে একসময় ‘ফ্রিঞ্জ’ বা প্রান্তিক গোষ্ঠী বলে মনে করা হতো তারাই এখন রাজনীতির ময়দানে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এসব ডানপন্থী দল পরিকল্পিতভাবে সুইডিশ সমাজে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ‘ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ, তারা সেটা ভাঙতে চায়। জুডি সাফেইন বার্কলে পলিটিক্যাল রিভিউর এক নিবন্ধে লিখছেন, শুধু সুইডেন না বরং বিশ্বজুড়েই ইসলাম-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশেষ করে সিরিয়া এবং ইরাকের মতো দেশের মুসলিমরা যারা নিজ দেশে যুদ্ধাপরাধ এবং আর্থিক সংকটের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন দেশে কট্টর জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সাথে যুক্ত হয়েছে ‘জেনোফোবিয়া’ বা বিদেশির সম্পর্কে আতঙ্ক। মানুষ নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয়, জীবিকা এবং এমনকি নিরাপত্তা হারানোর ভয়ে এখন ‘অন্যদের’ সাহায্য করতে অস্বীকার করছে। এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে সুইডেনের ঘটনাও একই রকম।

Please Share This Post in Your Social Media

কেন বার বার কোরআন অবমাননা হয় সুইডেনে

নওরোজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০৯:০০:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

ইউরোপের শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে খ্যাতি আছে সুইডেনের। কিন্তু প্রায়ই দেশটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননার ছাপ পাওয়া যায়।

গত বুধবার আবারো দেশটির রাজধানী স্টকহোমের একটি মসজিদের বাইরে এমন ঘটনা ঘটান এক ব্যক্তি। এরপর আবারও বিশ্বের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে সুইডেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এরকম ঘটনা এটিই প্রথম নয়। দেশটি মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন অবমাননার জন্য বিশ্বজুড়ে বারবার খবরের শিরোনামে এসেছে।

সুইডিশ রাজধানী স্টকহোমের প্রধান মসজিদের সামনে ঈদুল আজহার দিনে প্রকাশ্যে কোরআন যিনি আগুন দিলেন, তিনি এক ইরাকি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি। তার নাম সালওয়ান মোমিকা।

তিনি পাঁচ বছর আগে অভিবাসী হিসেবে সুইডেনে আসেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন এখন তার সুইডিশ পাসপোর্ট রয়েছে।

সুইডেনের গণমাধ্যম এর বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক বলে দাবি করেন। তার ভাষ্য, পশ্চিমা সমাজের গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার এবং নারী অধিকারের মতো বিষয়গুলোর সাথে কোরআন সাংঘর্ষিক এবং তাই এটা নিষিদ্ধ করা উচিত। কিন্তু সুইডেনে প্রকাশ্যে কোরআনের অবমাননার কাজটি তিনিই প্রথম করেননি। এরও আগেও বেশ কয়েক বার সুইডেনে কোরআন পোড়ানো হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে মালমো শহরে স্ট্রাম কুর্স নামের একটি কট্টর ডানপন্থী সংগঠন কোরআন শরিফ পোড়ায় এবং এর জেরে সে দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ চলে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডেনমার্ক ও সুইডেনের কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল স্ট্রাম কুর্স অভিবাসন-বিরোধী ও ইসলাম-বিদ্বেষী বলে পরিচিত।

সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন রাসমুস পালুদান নামের একজন উগ্রপন্থী। চলতি বছর জানুয়ারিতে এবং ২০২০ সালেও সুইডেনে একই রকম ঘটনা ঘটেছে। সুইডিশদের সাথে ইসলামের প্রথম পরিচয় হয় ১৬শ-১৭শ শতকে, যখন দেশটি সামরিক শক্তি অর্জন করছিল।

সুইডিশ সাম্রাজ্যের প্রসারের সাথে সাথে তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিও চরম আকার ধারণ করে। সুইডিশরা যদিও মূলত ক্যাথলিক ছিলেন, কিন্তু ১৬শ শতকে দেশটি একটি লুথেরান প্রটেস্টান্ট দেশে পরিণত হয়। ১৬৬৫ সালে সুইডিশরা তার পিতৃপুরুষের ধর্মমতকে বেআইনি ঘোষণা করেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সে সময় ক্যাথলিক ও মুসলমানদের ‘প্রকৃত খ্রিস্টান ধর্মের’ শত্রু হিসেবে দেখা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাথে সাথে সুইডেনে উদারনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে। দেশটি পরিচালিত হয় ধর্মনিরপেক্ষ আইনের আওতায়।

কিন্তু বর্তমান সময়ে সুইডিশদের মনোভাবে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে বলে মনে করছেন সুইডেনের ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ওমর মুস্তাফা। তিনি বলছেন, সুইডেনে ইসলাম বিদ্বেষ ক্রমশই বাড়ছে। আর সেটার বহিঃপ্রকাশ শুধু ইন্টারনেটে নয়, বাস্তবে মুসলমানদের জীবনে প্রতিনিয়ত তা ঘটছে। কোরআন পোড়ানোর সর্বশেষ ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি নানা ধরনের বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তাঘাটে মুসলমান নারীদের হেনস্থা, মুসলিমদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া এবং মসজিদের ওপর চোরা হামলার ঘটনা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টি মূলত উগ্র ডানপন্থী দল, যারা একসময় নাৎসি ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাস করতো। মাত্রা কম হলেও এরা এখনও বর্ণবাদী এবং মাইগ্র্যান্ট-বিরোধী। ফলে যেসব কট্টর ডানপন্থী দলকে একসময় ‘ফ্রিঞ্জ’ বা প্রান্তিক গোষ্ঠী বলে মনে করা হতো তারাই এখন রাজনীতির ময়দানে প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এসব ডানপন্থী দল পরিকল্পিতভাবে সুইডিশ সমাজে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ‘ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ, তারা সেটা ভাঙতে চায়। জুডি সাফেইন বার্কলে পলিটিক্যাল রিভিউর এক নিবন্ধে লিখছেন, শুধু সুইডেন না বরং বিশ্বজুড়েই ইসলাম-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশেষ করে সিরিয়া এবং ইরাকের মতো দেশের মুসলিমরা যারা নিজ দেশে যুদ্ধাপরাধ এবং আর্থিক সংকটের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন দেশে কট্টর জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সাথে যুক্ত হয়েছে ‘জেনোফোবিয়া’ বা বিদেশির সম্পর্কে আতঙ্ক। মানুষ নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয়, জীবিকা এবং এমনকি নিরাপত্তা হারানোর ভয়ে এখন ‘অন্যদের’ সাহায্য করতে অস্বীকার করছে। এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে সুইডেনের ঘটনাও একই রকম।