কিছু কিছু গুম আছে, যারা বাসায় বসে আছেন: আইনমন্ত্রী
- Update Time : ১০:৩৮:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
- / ৩০৭ Time View
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কিছু কিছু গুম আছে, যারা বাসায় বসে আছেন।
গুমের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, গুম নিয়ে যখন কথা হয়, তখন তারা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। তখন সংবাদপত্র বলা শুরু করল, সরকার তাদের হয়রানি করছে। তখন তাদের পরিবারকে বলা হলো, পুলিশকে জানান। কিন্তু তারা (পরিবার) সাড়া দিল না। এতে তাদের কী করার আছে! তারা তো সহযোগিতা করছে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু গুম আছে, যারা বাসায় বসে আছেন। কিন্তু গুমের অভিযোগ তুলছেন।
ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে রোববার আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইনমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্ততা করেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, ই-জুডিশিয়ারি, ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্টসহ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার ক্রাইম বন্ধে পৃথিবীর বহু দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি সংক্রান্ত আইন রয়েছে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এটি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তারাও আইনটি রাখার কথা বলেছেন। তবে কিছু সংশোধনীর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখন এ আইনে মামলা হলেই যেন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি সেল গঠন করা হয়েছে। মামলা হলে, আগে সেখানে এটি পরীক্ষা করা হবে। প্রাইমা ফেসি কেইস (অপরাধের প্রাথমিক উপাদান) দেখে পরবর্তী কার্যক্রমে আগাতে হবে, যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং কেউ যেন আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ না নিতে পারেন।
জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না। বিচার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বলতে পারবেন না, জামায়াত নিষিদ্ধ। আইনমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বিষয়ে তিনি পিটার হাসকে জানিয়েছেন, এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। সেটা যার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদি বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও এ ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেক্ষেত্রেও তিনি বলবেন, এটি অপমানজনক।
আনিসুল হক বলেন, তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এই ভিসা নীতি যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। আর যদি ইচ্ছেমতো একটি দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, তাহলে তাদের আপত্তি আছে।
তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, ভিসা নীতি নিয়ে সরকার বিচলিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার আছে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই ওই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছেন।
নির্বাচনকালে ছোট সরকার হবে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনকালে একটি ছোট সরকার গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার কাজ করবে। আর সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এর আগে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার।
রাজনীতি করতে হলে খালেদা জিয়াকে সাজা ভোগ করতে হবে
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। অসুস্থতাজনিত কারণে তাঁর সাজা স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হয়ে খালেদা জিয়া এখন রাজনীতি করতে চাইলে তাঁকে আগে সাজার বাকি অংশ ভোগ করতে হবে। এটিই হচ্ছে আইনের বিধান।’
আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ উপবিধি ১-এ শর্ত অনুযায়ী সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়েছে। যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নিবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না।
তিনি যখনই গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন তখনই এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে আবার বাসায় ফিরে এসেছেন। এটাই প্রমাণ করে তিনি অসুস্থ এবং বাংলাদেশেই তার সুচিকিৎসা হওয়ার মতো ব্যবস্থা আছে। এর কোনো পরিবর্তন করার কথা আমি জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমি এই গুজব শুনেছি যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ফাইল নাকি আইন মন্ত্রণালয়ে চলে এসেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি- আমার মন্ত্রণালয়ে এরকম কোনো ফাইল আসে নাই। এবং আমি এটাও বলতে পারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এরকম কোনো ফাইল উঠেছে আমি জানি না।
খালেদা জিয়ার সভা-সমাবেশে যাওয়ার কোন বাধা আছে কিনা এই বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্ত আছেন। কি আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এটার পেছনে তো একটা ইতিহাস আছে। আবেদনটা হচ্ছে- তার ভাই আবেদন করেন- তার বোন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তার প্রেক্ষিতে তাকে যে দুর্নীতির মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। সেই সাজা স্থগিত রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এর ১ ধারায় শর্তযুক্তভাবে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়। এখন তিনি যদি বলেন- সুস্থ তাহলে তাকে তার যে সাজা সেটা খাটার জন্য জেলখানায় যেতে হবে। তিনি যেই মুহূর্তে বলবেন সুস্থ-স্বাভাবিক সেই মুহূর্তে তার অসুস্থতার আবেদনটা আর থাকলো না। আর তিনি যে মুক্ত সেটার প্রমাণ হলো- তিনি যে এভার কেয়ার হাসপাতালে যান তাকে কিন্তু এখন সরকারের অনুমতি নিয়ে যেতে হয় না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। পাশাপাশি পলাতক তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
উচ্চআদালত আরও দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। সরকার সংসদে তাদের দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে এটি বাতিল করেছে। এটি আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পাখি শিকারের শামিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে এ ব্যবস্থা ছাড়াই নির্বাচন হচ্ছে। আমাদের দেশেও নির্বাচন কমিশন এখন শক্তিশালী। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে। কাজেই আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করায় সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল হয়ে যায়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে এমন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে আবার বিরোধী দলে গেলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অতীতের মতো আন্দোলন করতে হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের সরকারের সময়ে যে কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে, তার সবগুলোই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সব নির্বাচনই গ্রহণযোগ্য হয়েছে। ভবিষ্যতে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, আশা করি এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে।’
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? সেগুলোও কি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে আপনি মনে করেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অফকোর্স, ওই নির্বাচনও সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে খারাপ করেছে, এটি তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা। এজন্য সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন দায়ী নয়।’
জামায়াতে ইসলামীকে দীর্ঘ ১০ বছর পর সমাবেশের অনুমতি দেওয়া কতটা আইনসঙ্গত হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আইন সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া বিচার নিষ্পত্তি হয়নি। এমন অবস্থায় জামায়াতকে সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়াটা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।’
মার্কিন ভিসা নীতির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তখন তাকে আমি বলেছি- মার্কিন ভিসা নীতির কারণে অপমানিত হয়েছে বাংলাদেশ। সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করলে আপত্তি নাই। কিন্তু শুধু একটা দলের জন্য ব্যবহার করলে আপত্তি আছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকার এবং সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা।