ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
এক দফা দাবীতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট নার্সদের মানববন্ধন মাজার-ধর্মীয় স্থান রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ বসুন্ধরা গ্রুপ কর্তৃক স্থানীয় অধিবাসীদের উচ্ছেদ পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে রংপুরে সংবাদ সম্মেলন বিএনপির ভিত্তি, আস্থা, সমর্থন জনগণের মাঝে: শাহজাহান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি ৪ দিনের রিমান্ডে নোয়াখালীতে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি সিলেটে জুমার খুতবা পাঠরত অবস্থায় ইমামের মৃত্যু কর কাঠামোতে বৈষম্য থাকা যাবে না: অর্থ উপদেষ্টা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র সকল কার্যক্রম স্থগিত জোর করে কর আদায় করা হবে না: এনবিআর চেয়ারম্যান

কমেই চলেছে পাটের দাম, সিন্ডিকেটের দখলে হাট

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
  • Update Time : ০৭:১৮:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১২৫ Time View

বিশ্বে পাট সোনালী আঁশের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। সরকার পাট রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও কোনো কিছুই প্রান্তিক পাটচাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না।

পাটের বাজার সিন্ডিকেট দখল করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পাবনার প্রান্তিক কৃষকরা। এখন হতাশাগ্রস্ত কৃষকরা পাট আবাদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

কয়েকদিন ধরে পাট বিক্রির চেষ্টা করে বারবার পিছপা হয়েছেন আব্দুস সালাম। কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে হাটে তোলা পাট নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। এখন লোকসানের হিসাব কষে চিন্তিত তিনি। এই কৃষক বলেন, যতখানি আশা ভরসা নিয়্যা আবাদসুবাদ করি, ওই আবাদের মূল্য পাইনা। খরচাপাতি বেশি অথচ দাম নাই। পাটের মণ সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা হলে আমরা লাভবান হতাম। দাম না বাড়লে পাট চাষ করি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

 

কৃষক আব্দুস সালামের বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়ের বড়মটুকপুর গ্রামে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রতিবেদকের সাথে পাটের বাজার দর নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা তো সরকারের কাছে আগে থেকেই পাটের দাম বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছি। কিন্তু সরকার তো পাটের দাম বাড়ায় না। চারদিকে শুধু সিন্ডিকেট চলছে। এখন সারের দাম বেশি, মজুরিও বেশি। কিন্তু কোথাও পাটের ন্যায্যমূল্য নাই। সরকার যদি ভর্তুকি দেয় তাহলে আমরা কৃষকেরা বাঁচতাম।

মমিনপুরের এই কৃষকের মতো রংপুর জেলার বেশির ভাগ কৃষকের কণ্ঠে পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আক্ষেপ। এদিকে প্রখর রোদ আর খরার কারণে পাট জাগ দিতে না পারায় কোথাও কোথাও ক্ষেতেই পাট শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির পানি নির্ভর চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। আর যারা বাড়তি খরচের ধকল সামলে পাট জাগ শেষে সোনালী আঁশে স্বপ্ন বুনছেন এখন তারাও হতাশ সিন্ডিকেটের মারপ্যাচে।

চলতি মৌসুমে পুরোদমে শুরু হয়েছে পাটকাটা ও আঁশ ছাড়ানোর কাজ। পাট মন্ত্রণালয় থেকে সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা সহযোগিতা দেয়া হলেও রংপুরে দিন দিন কমে যাচ্ছে পাটের আবাদ। আর চলতি বছর স্থানীয় হাটগুলোতে পাটের দাম না থাকায় পুঁজি হারানোর শঙ্কায় কৃষক। খরচের তুলনায় পাটের দাম না থাকায় পাট ছেড়ে তামাক ও ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

পাটচাষিরা বলছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পাটের আবাদ করেছেন তারা। তবে উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমানোর কারণে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং করাসহ পাটে ভর্তুকি দিতে সরকারের সুনজর প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে সেচের মাধ্যমে পাট জাগ দেওয়ার স্থানগুলোতে পানি জমিয়ে জাগ দিচ্ছেন অনেকেই। এতে বাড়তি খরচের চাপ সইতে হচ্ছে তাদের। পাট জাগে হেরফের হলে এবং পরিষ্কার পানি না থাকলে মানসম্মত পাট পাওয়া সম্ভব হবে না। একারণে কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে সেচ সুবিধায় অথবা রিবোন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়া শেষে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেছেন। বর্তমানে দামের হেরফের থাকলেও পাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের গুদামে নয়তো হাটমুখী হচ্ছেন চাষিরা।

মধ্যআগস্টে মমিনপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের কৃষক হরিশ চন্দ্র পাঁচ হাজার টাকা লোকসানে ছয় মণ পাট বিক্রি করেছেন। এবার লোকসান হওয়ায় আগামী বছর থেকে পাটের পরিবর্তে অন্য ফসল আবাদের কথা ভাবছেন এই কৃষক। এই প্রতিবেদককে হরিশ চন্দ্র বলেন, প্রায় এক বিঘা জমিত পাট গাড়া (রোপন করা) থাকি শুরু করি ধোয়া পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা খরচ হইছে। এবার পাট পাইছি ছয় মণ। কিন্তু বাজারোত পাটের দাম পাই নাই। প্রতিমণ ৮০০ টাকা থাকি ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম। ছয় মণ পাট আবাদ করতে দশ হাজার টাকা খরচ নাগছে আর বিক্রি করছি অর্ধেক দামোত। এই বছর পাটোত মণপ্রতি হাজারের কাছাকাছি লস খাইছি বাহে।

মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ি সেরুডাঙ্গা বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, এক সময় আমাদের এই গ্রামে পাটের খুব আবাদ হতো। এখন লোকসানের কারণে মানুষ পাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাটে খরচ বেশি কিন্তু লাভ নেই। অনেকেই পাটের আবাদ না করে সরিয়া, তামাক,  ‍ভুট্টাসহ শাক-সবজি আবাদ করছে। এগুলো চাষাবাদে লোকসানের সম্ভাবনা নেই।

রংপুর মহানগরীর সরেয়ারতল এলাকার পাটচাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, পাট আবাদ করি আমরা লস খাচ্ছি। একটা মানুষের একদিনের (দিনমজুর) মজুরির দাম ৬০০ টাকার নিচে নয়। অথচ পাটের দাম নেই। শাক-সবজি আবাদ করে লাভের আশা করা যায় কিন্তু পাটে শুধু হাহুতাশ। পাটের আগের অবস্থা ফেরাতে হলে বন্ধ পাটকলগুলো চালু করাসহ পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়া উচিত।

সদর উপজেলার পানবাজার গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রিরোন রেটিং পদ্ধতিতে যন্ত্র দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পাট পচানো অত্যন্ত ঝামেলার কাজ। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ২৫ থেকে ৩০ জন লাগে। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে এক বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে খরচ হয় মাত্র ১৩ হাজার টাকা। এত কিছুর করার পরও যদি পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাহলে মানুষ কেন পাট চাষ করবে?

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাতটার দিকে পীরগাছা উপজেলার পাওটানা হাটে গিয়ে দেখা যায়, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ ও উলিপুর উপজেলা থেকে অনেক পাট চাষি এসেছেন এই হাটে পাট বিক্রি করতে। গত ২ সপ্তাহ আগে এই হাটে মানভেদে প্রতি মণ দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতের পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মানভেদে সেই পাট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার এই হাটে  ৭০০ থেকে এক হাজার মণ পাট বিকিকিনি হয়ে থাকে।

হাটের মাঝখানে তপ্তরোদে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল সাজু ব্যস্ত পাটের ট্রলি বোঝাই করতে। এর ফাঁকে কথা হলে তিনি বলেন, পাটের বাজার বিগত কয়েকটি হাটের তুলনায় আজ নিম্নমুখী। গত কয়েকটি হাটে প্রতিমণ পাট ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। সেই পাট আজকে প্রতিমণে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে খুচরা ব্যবসায়ী ও পাটচাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে পাটের বাজার নিম্নমুখী হলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাজারে টিকে থাকতে পারব না।

গতবছর এই হাটে প্রতিমণ পাট টোসা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার সেই দাম কমে আসাতে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থেকে আসা ক্ষুদ্র পাটচাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পনেরো বছর ধরে ব্যবসা করছি। এরমধ্যে গত কয়েক বছর ধরে পাটে খুব বেশি লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম যদি প্রতিমণে ২ হাজার ৬০০ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কৃষকরা লাভবান হতো।

পাটের দাম কম হওয়ায় বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের পাশাপাশি সরকারকেও দুষছেন নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ রয়েছে। আগের মতো এখন আর পাটের আমদানি-রপ্তানি নেই। সরকার নির্ধারিত কোনো মূল্য না থাকায় চাষিরা উৎপাদন খরচের তুলনায় পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। একারণে তারা পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়ানোসহ পাটজাত পণ্যসামগ্রীর ব্যবহার বাড়লে পাটের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

দাম কমানোসহ সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে পাট চাষিদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মিল মালিকদের পাট কেনার আগ্রহ না থাকায় গত বছর বেশি দামে কিনে রাখা অনেক পাট ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুদ রয়েছে। এ বছর নতুন পাট বাজারে আসলেও তাঁরা ভালো দাম হাঁকছেন না। তাই বেশি দাম পাট কিনে রাখার মতো সাহস পাচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। মিল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীদের থেকে সাড়া পেলে তবেই পাটের দাম আবারও বাড়বে বলেও দাবি করেন তারা।

পাওটানার হাটে কথা হয় সুকুমার সরকার নামে এক পাট ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে পাটের ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে তারা প্রতিমণ পাট জাত, মান ও রঙ ভেদে ১৮০০-২৪০০ টাকা দরে কিনছেন। বিদেশে পাট যাচ্ছে না তাই তারা পাট কিনে গুদামজাত করে রাখছেন। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা পাট তারা জুটমিলে বিক্রি করতে পারবেন কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ বড় বড় ব্যবসায়ী ও মালিকরা একধরণের সিন্ডিকেট করে পাট কিনে থাকে। এছাড়া পাটকল বন্ধ থাকাসহ সরকারের অনীহার কারণে এই খাতের সুদিন হারিয়ে যাচ্ছে। সোনালী পাটের আঁশ এখন চাষিরা শ্বাসকষ্ট বাড়িয়েছে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৩৭ হেক্টর। তবে কৃষকেরা ৫২ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ২.৫৬ মেট্রিকটন। প্রায় ৭৫ হাজার কৃষক পাট চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

অন্যদিকে রংপুর জেলায় এবার পাট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে। তীব্র তাপদহ, অনাবৃষ্টি, রোদ এবং খরা থাকলেও বেশ কয়েকটি উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার রংপুর অঞ্চলে ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এদিকে উন্নত মানের বীজ সরবরাহের পাশাপাশি অনাবৃষ্টিতে পাট জাগ দেয়ার দুশ্চিন্তা এড়াতে রিবোন রেটিং ও ভালোমানের পাট চাষ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে পাটের ন্যায্যমূল্যের বাজার নিশ্চিতকরণে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সরকারের কৃষিবিভাগ।

রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পাট যে মৌসুমে হয় ওই মৌসুমেই অন্য ফসলে তুলনামূলক ভাবে বেশি আয় করা সম্ভব হয়। অনেকে লাভের হিসাব করে পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

পাটের ব্যবহার বা পাটজাত পণ্যের উৎপাদন সংকোচিত হয়ে আসছে বলে মনে করেন তিনি। এই কৃষিবিদ বলেন, পাটের সুতা থেকে তৈরি পণ্যের আশানুরুপ ব্যবহার বাড়েনি। এখনও কৃত্রিম ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য এবং ব্যাগের ব্যবহার রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাটজাতীয় পণ্যের বাজার প্রসারিত হয়নি বলা যায়। অন্যদিকে পাট চাষ থেকে শুরু পাট জাদ দেয়া, বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা রয়েছে। কৃষকের প্রত্যাশানুযায়ী বাজারও স্থিতিশীল থাকে না। নানামুখী কারণে কৃষকেরা পাট চাষবিমুখ হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের উদ্দেশ্যই হলো কৃষককে সাবলম্বী করা। কৃষকের আয় বৃদ্ধি করাসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা। সরকার পাটচাষিদেরও প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে নতুন জাতের পাটের চাষাবাদ বাড়ে। রবি-১ পাটের নতুন জাত, এরজন্য প্রণোদনা রয়েছে।  তবে প্রাকৃতিক কারণে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন বা ফসলের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হয়ে থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

কমেই চলেছে পাটের দাম, সিন্ডিকেটের দখলে হাট

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
Update Time : ০৭:১৮:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বিশ্বে পাট সোনালী আঁশের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল। দেশ-বিদেশে পাটের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। সরকার পাট রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও কোনো কিছুই প্রান্তিক পাটচাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না।

পাটের বাজার সিন্ডিকেট দখল করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পাবনার প্রান্তিক কৃষকরা। এখন হতাশাগ্রস্ত কৃষকরা পাট আবাদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

কয়েকদিন ধরে পাট বিক্রির চেষ্টা করে বারবার পিছপা হয়েছেন আব্দুস সালাম। কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে হাটে তোলা পাট নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন। এখন লোকসানের হিসাব কষে চিন্তিত তিনি। এই কৃষক বলেন, যতখানি আশা ভরসা নিয়্যা আবাদসুবাদ করি, ওই আবাদের মূল্য পাইনা। খরচাপাতি বেশি অথচ দাম নাই। পাটের মণ সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা হলে আমরা লাভবান হতাম। দাম না বাড়লে পাট চাষ করি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

 

কৃষক আব্দুস সালামের বাড়ি রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়ের বড়মটুকপুর গ্রামে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রতিবেদকের সাথে পাটের বাজার দর নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা তো সরকারের কাছে আগে থেকেই পাটের দাম বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছি। কিন্তু সরকার তো পাটের দাম বাড়ায় না। চারদিকে শুধু সিন্ডিকেট চলছে। এখন সারের দাম বেশি, মজুরিও বেশি। কিন্তু কোথাও পাটের ন্যায্যমূল্য নাই। সরকার যদি ভর্তুকি দেয় তাহলে আমরা কৃষকেরা বাঁচতাম।

মমিনপুরের এই কৃষকের মতো রংপুর জেলার বেশির ভাগ কৃষকের কণ্ঠে পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার আক্ষেপ। এদিকে প্রখর রোদ আর খরার কারণে পাট জাগ দিতে না পারায় কোথাও কোথাও ক্ষেতেই পাট শুকিয়ে নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টির পানি নির্ভর চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। আর যারা বাড়তি খরচের ধকল সামলে পাট জাগ শেষে সোনালী আঁশে স্বপ্ন বুনছেন এখন তারাও হতাশ সিন্ডিকেটের মারপ্যাচে।

চলতি মৌসুমে পুরোদমে শুরু হয়েছে পাটকাটা ও আঁশ ছাড়ানোর কাজ। পাট মন্ত্রণালয় থেকে সার, বীজ, কীটনাশকসহ নানা সহযোগিতা দেয়া হলেও রংপুরে দিন দিন কমে যাচ্ছে পাটের আবাদ। আর চলতি বছর স্থানীয় হাটগুলোতে পাটের দাম না থাকায় পুঁজি হারানোর শঙ্কায় কৃষক। খরচের তুলনায় পাটের দাম না থাকায় পাট ছেড়ে তামাক ও ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।

পাটচাষিরা বলছেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পাটের আবাদ করেছেন তারা। তবে উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তাদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমানোর কারণে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। এ পরিস্থিতিতে পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং করাসহ পাটে ভর্তুকি দিতে সরকারের সুনজর প্রয়োজন বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে সেচের মাধ্যমে পাট জাগ দেওয়ার স্থানগুলোতে পানি জমিয়ে জাগ দিচ্ছেন অনেকেই। এতে বাড়তি খরচের চাপ সইতে হচ্ছে তাদের। পাট জাগে হেরফের হলে এবং পরিষ্কার পানি না থাকলে মানসম্মত পাট পাওয়া সম্ভব হবে না। একারণে কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে সেচ সুবিধায় অথবা রিবোন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়া শেষে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেছেন। বর্তমানে দামের হেরফের থাকলেও পাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের গুদামে নয়তো হাটমুখী হচ্ছেন চাষিরা।

মধ্যআগস্টে মমিনপুর ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের কৃষক হরিশ চন্দ্র পাঁচ হাজার টাকা লোকসানে ছয় মণ পাট বিক্রি করেছেন। এবার লোকসান হওয়ায় আগামী বছর থেকে পাটের পরিবর্তে অন্য ফসল আবাদের কথা ভাবছেন এই কৃষক। এই প্রতিবেদককে হরিশ চন্দ্র বলেন, প্রায় এক বিঘা জমিত পাট গাড়া (রোপন করা) থাকি শুরু করি ধোয়া পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা খরচ হইছে। এবার পাট পাইছি ছয় মণ। কিন্তু বাজারোত পাটের দাম পাই নাই। প্রতিমণ ৮০০ টাকা থাকি ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম। ছয় মণ পাট আবাদ করতে দশ হাজার টাকা খরচ নাগছে আর বিক্রি করছি অর্ধেক দামোত। এই বছর পাটোত মণপ্রতি হাজারের কাছাকাছি লস খাইছি বাহে।

মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ি সেরুডাঙ্গা বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, এক সময় আমাদের এই গ্রামে পাটের খুব আবাদ হতো। এখন লোকসানের কারণে মানুষ পাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পাটে খরচ বেশি কিন্তু লাভ নেই। অনেকেই পাটের আবাদ না করে সরিয়া, তামাক,  ‍ভুট্টাসহ শাক-সবজি আবাদ করছে। এগুলো চাষাবাদে লোকসানের সম্ভাবনা নেই।

রংপুর মহানগরীর সরেয়ারতল এলাকার পাটচাষি জহুরুল ইসলাম বলেন, পাট আবাদ করি আমরা লস খাচ্ছি। একটা মানুষের একদিনের (দিনমজুর) মজুরির দাম ৬০০ টাকার নিচে নয়। অথচ পাটের দাম নেই। শাক-সবজি আবাদ করে লাভের আশা করা যায় কিন্তু পাটে শুধু হাহুতাশ। পাটের আগের অবস্থা ফেরাতে হলে বন্ধ পাটকলগুলো চালু করাসহ পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়া উচিত।

সদর উপজেলার পানবাজার গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রিরোন রেটিং পদ্ধতিতে যন্ত্র দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পাট পচানো অত্যন্ত ঝামেলার কাজ। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ২৫ থেকে ৩০ জন লাগে। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে এক বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে খরচ হয় মাত্র ১৩ হাজার টাকা। এত কিছুর করার পরও যদি পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাহলে মানুষ কেন পাট চাষ করবে?

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাতটার দিকে পীরগাছা উপজেলার পাওটানা হাটে গিয়ে দেখা যায়, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ ও উলিপুর উপজেলা থেকে অনেক পাট চাষি এসেছেন এই হাটে পাট বিক্রি করতে। গত ২ সপ্তাহ আগে এই হাটে মানভেদে প্রতি মণ দেশি, তোষা এবং মেস্তা জাতের পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মানভেদে সেই পাট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার এই হাটে  ৭০০ থেকে এক হাজার মণ পাট বিকিকিনি হয়ে থাকে।

হাটের মাঝখানে তপ্তরোদে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল সাজু ব্যস্ত পাটের ট্রলি বোঝাই করতে। এর ফাঁকে কথা হলে তিনি বলেন, পাটের বাজার বিগত কয়েকটি হাটের তুলনায় আজ নিম্নমুখী। গত কয়েকটি হাটে প্রতিমণ পাট ২ হাজার ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। সেই পাট আজকে প্রতিমণে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে খুচরা ব্যবসায়ী ও পাটচাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে পাটের বাজার নিম্নমুখী হলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাজারে টিকে থাকতে পারব না।

গতবছর এই হাটে প্রতিমণ পাট টোসা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার সেই দাম কমে আসাতে বিপাকে পড়েছেন প্রান্তিক চাষিরা। গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থেকে আসা ক্ষুদ্র পাটচাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পনেরো বছর ধরে ব্যবসা করছি। এরমধ্যে গত কয়েক বছর ধরে পাটে খুব বেশি লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম যদি প্রতিমণে ২ হাজার ৬০০ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে কৃষকরা লাভবান হতো।

পাটের দাম কম হওয়ায় বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের পাশাপাশি সরকারকেও দুষছেন নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ রয়েছে। আগের মতো এখন আর পাটের আমদানি-রপ্তানি নেই। সরকার নির্ধারিত কোনো মূল্য না থাকায় চাষিরা উৎপাদন খরচের তুলনায় পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। একারণে তারা পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পাটের বস্তার ব্যবহার বাড়ানোসহ পাটজাত পণ্যসামগ্রীর ব্যবহার বাড়লে পাটের দাম কিছুটা হলেও বাড়বে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

দাম কমানোসহ সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে পাট চাষিদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, মিল মালিকদের পাট কেনার আগ্রহ না থাকায় গত বছর বেশি দামে কিনে রাখা অনেক পাট ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের গুদামে মজুদ রয়েছে। এ বছর নতুন পাট বাজারে আসলেও তাঁরা ভালো দাম হাঁকছেন না। তাই বেশি দাম পাট কিনে রাখার মতো সাহস পাচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। মিল মালিক ও বড় ব্যবসায়ীদের থেকে সাড়া পেলে তবেই পাটের দাম আবারও বাড়বে বলেও দাবি করেন তারা।

পাওটানার হাটে কথা হয় সুকুমার সরকার নামে এক পাট ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে পাটের ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে তারা প্রতিমণ পাট জাত, মান ও রঙ ভেদে ১৮০০-২৪০০ টাকা দরে কিনছেন। বিদেশে পাট যাচ্ছে না তাই তারা পাট কিনে গুদামজাত করে রাখছেন। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা পাট তারা জুটমিলে বিক্রি করতে পারবেন কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ বড় বড় ব্যবসায়ী ও মালিকরা একধরণের সিন্ডিকেট করে পাট কিনে থাকে। এছাড়া পাটকল বন্ধ থাকাসহ সরকারের অনীহার কারণে এই খাতের সুদিন হারিয়ে যাচ্ছে। সোনালী পাটের আঁশ এখন চাষিরা শ্বাসকষ্ট বাড়িয়েছে।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৩৭ হেক্টর। তবে কৃষকেরা ৫২ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ২.৫৬ মেট্রিকটন। প্রায় ৭৫ হাজার কৃষক পাট চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

অন্যদিকে রংপুর জেলায় এবার পাট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে। তীব্র তাপদহ, অনাবৃষ্টি, রোদ এবং খরা থাকলেও বেশ কয়েকটি উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার রংপুর অঞ্চলে ৬২৭ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এদিকে উন্নত মানের বীজ সরবরাহের পাশাপাশি অনাবৃষ্টিতে পাট জাগ দেয়ার দুশ্চিন্তা এড়াতে রিবোন রেটিং ও ভালোমানের পাট চাষ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে পাটের ন্যায্যমূল্যের বাজার নিশ্চিতকরণে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সরকারের কৃষিবিভাগ।

রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পাট যে মৌসুমে হয় ওই মৌসুমেই অন্য ফসলে তুলনামূলক ভাবে বেশি আয় করা সম্ভব হয়। অনেকে লাভের হিসাব করে পাটের আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

পাটের ব্যবহার বা পাটজাত পণ্যের উৎপাদন সংকোচিত হয়ে আসছে বলে মনে করেন তিনি। এই কৃষিবিদ বলেন, পাটের সুতা থেকে তৈরি পণ্যের আশানুরুপ ব্যবহার বাড়েনি। এখনও কৃত্রিম ও প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য এবং ব্যাগের ব্যবহার রয়েছে। সেক্ষেত্রে পাটজাতীয় পণ্যের বাজার প্রসারিত হয়নি বলা যায়। অন্যদিকে পাট চাষ থেকে শুরু পাট জাদ দেয়া, বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা রয়েছে। কৃষকের প্রত্যাশানুযায়ী বাজারও স্থিতিশীল থাকে না। নানামুখী কারণে কৃষকেরা পাট চাষবিমুখ হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের উদ্দেশ্যই হলো কৃষককে সাবলম্বী করা। কৃষকের আয় বৃদ্ধি করাসহ আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা। সরকার পাটচাষিদেরও প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে নতুন জাতের পাটের চাষাবাদ বাড়ে। রবি-১ পাটের নতুন জাত, এরজন্য প্রণোদনা রয়েছে।  তবে প্রাকৃতিক কারণে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন বা ফসলের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হয়ে থাকে।