সিলেট বিভাগীয় কমিশনার
ওসমানীর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে সবাইকে সুন্দর দেশ বিনির্মানে কাজ করতে হবে
- Update Time : ০৮:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ২২ Time View
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) আবু আহমদ ছিদ্দীকী (এনডিসি) বলেছেন, জেনারেল ওসমানী ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কদের একজন।
তাঁর সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সুদক্ষ নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। তিনি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী যোদ্ধা পাকিস্তানি বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে ৯ মাসেরও কম সময়ে বিস্ময়কর বিজয় অর্জন করেন। বঙ্গবীর জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর ১০৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট ওসমানী জাদুঘরের উদ্যোগে খতমে কোরআন, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) ওসমানী জাদুঘর প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আরিফুল হক চৌধুরী।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, ওসমানী কেবল সিলেটের নন, তিনি পুরো বাংলাদেশের গর্ব। এ মহান কর্মবীরের জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেমে উদ্বোদ্ধ হয়ে আমাদের সবাইকে সুন্দর একটি বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করতে হবে।
ওসমানী জাদুঘরের সহকারী কীপার মো. আমিনুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল, ওসমানী গবেষক ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান, সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, ফুলকলি ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড সিলেটের ডিজিএম জসিম উদ্দিন খন্দকার, গণ গ্রন্থাগার অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক দিলিপ কুমার সাহা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত জালালাবাদ নোয়াকুরুম জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
আতাউল গণি ওসমানীর জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনী ও সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি। পুরো নাম মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী হলেও তিনি জেনারেল এম এ জি ওসমানী নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। বাবার চাকরি সূত্রে আসামের গোহাটিতে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। ১৯৩৪ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় তিনি পুরো ভারতবর্ষে প্রথম হয়েছিলেন। এ জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘প্রাইওটোরিয়া’ পুরস্কার প্রদান করে। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক পাস করেন। এরপর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের সর্বকনিষ্ঠ মেজর পদে পদোন্নতি পান। দেশভাগের পর তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে যোগ দেন পাকিস্থান সেনাবাহিনীতে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সেনানিবাস। ১৯৬৭ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন।
আতাউল গণি ওসমানী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পাকিস্থান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তাঁকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয় করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা,অস্ত্রের জোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবন্থা করা প্রভৃতি কাজে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর আবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন ওসমানী। বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য পদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্য পদও ত্যাগ করেন। তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ সরকারের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেলেও ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৭৬ সালে তিনি ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এম এ জি ওসমানী মৃত্যুবরণ করেন। তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ:) মাজার সংল্গন্ন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। তার সম্মানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ, ওসমানী বিমানবন্দর ও নগরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকায় ওসমানী শিশু পার্ক ও ওসমানী জাদুঘর রয়েছে।
এদিকে,মহান মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ইন চীফ, প্রখ্যাত সমরবিদ বঙ্গবীর জেনারেল এম এ জি ওসমানীর ১০৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ সিলেট। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালনের লক্ষে সংগঠনের উদ্যোগে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় খতমে কোরআন ও মিলাদ মাহফিল এবং বাদ আছর হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সন্নিকটে মরহুমের গর্ভধারিনী মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত ওসমানীর কবর জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্টিত হয়।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার এ মহান বীরের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনসহ বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদের ৭ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি সংসদ সিলেটের নেতৃবৃন্দ দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়