আওয়ামী সিন্ডিকেটের কারনে ডুবতে বসেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন

- Update Time : ০৮:২৫:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৬৬ Time View
আওয়ামী সিন্ডিকেটের কারনে ডুবতে বসেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন। সিডিএর অনেক সৎ নির্ভিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভোক্তভূগীদের ভাষ্য, নগরবাসীর মধ্যে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৭ বছরে রাজনৈতিক সময়কালে ঘুরে ফিরে দলীয় নেতৃবৃন্দই চউকের চেয়ারম্যান হয়েছে। এরই সুবাদে প্রতিটি কাজে একটি সিন্ডিকেটের কাছে চট্টগ্রাম নগরের মানুষ হয়ে উঠে মক্কেল, টাকা কামাইয়ের উৎস। এরা সিডিএতে আসা সেবাগ্রহীতাদের এমন কোন কাজ নেই যে খানে তারা অনৈতিক সুবিধা নিতেন না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পদত্যাগ ও পলায়নের হিড়িকের মতো চউকও বাদ পড়েনি।
দেড় দশকেরও অধিক সময়কাল ধরে আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের সীমাহীন দূর্নীতি স্বেচ্ছাচার, লুটপাটের একের পর এক পেরেক ঠুকে বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের প্রকৃত উন্নয়নকে রীতিমতো মুমুর্ষ রোগীতে পরিণত করা হয়েছে। দলীয় প্রভাব প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে সামান্য কর্মচারী যেমন টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছে তেমনি লুটপাটের টাকায় ভাড়া বাসার বদলে নিজেই বনে গেছেন ফ্ল্যাটের মালিক। এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। বিগত ১৮ বছরে রুগ্ন পকেটের অনেকেই এখন কাড়িকাড়ি টাকার মালিক। অন্যদিকে বরাবরের মতো উপেক্ষিত অধরা রয়ে গেছে চট্টগ্রামের উন্নয়ন- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক মহল।
সুত্রমতে, পতিত আওয়ামী সরকারের পদলেহন, মুখ ভরা বড়বড় কথা আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত নগরায়ন, রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকার পরিত্যক্ত সম্পত্তি মিলেমিশে হজম করা, নতুন নতুন উদ্ভট প্রজেক্টের নামে হরিলুট,নানান ছলছুঁতোয় ব্যয় বৃদ্ধির মতো দূর্নীতির এমন কোন পদ্ধতি নেই যা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে নেই। চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ মাফিয়া সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রত্যেকের আখেরের উন্নতি হলেও উন্নয়নের কিছুই হয়নি চট্টগ্রামবাসীর।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের বর্তমান সরকারের সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউকে) নতুন চেয়াররম্যানের আগমনে বেশ চাঞ্চল্য। জনমনে প্রশ্ন চউক কি নাগরিক বান্ধব হবে, না সিন্ডিকেটের খপ্পরে বন্দী অবস্থায় থেকে যাবে।
সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছকে বাদ দিয়ে সিডিএতে নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন। কিন্তু যে আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেট চউকে এতদিন ধরে রামরাজত্ব কায়েম করেছে সেই সিন্ডিকেটকে বহাল রেখে কতটুকু নগরের নাগরিক বান্ধব উন্নয়ন করবে চউক। এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
সূত্রমতে, এই সিন্ডিকেটটি বছরের পর বছর নগরের গ্রাহক হয়রাণী করে এসেছে। ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নকঁশা অনুমোদনে তালবাহানা, লাখ থেকে কোটি টাকা ঘুঘ বানিজ্য, ঘুষে মিলে ছাড়পত্র। শুধু তাই নয় বিভিন্ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বার বার সময় ও ব্যয় বাড়ানো, সব মিলিয়ে একটা গ্রাসের রাজত্ব চলছে।
অন্যদিকে, সিডিএর ভিতরেও চলছে সিন্ডিকেটের শোডাউন। নতুন পদায়নের সরকারী আদেশের বিরুদ্ধে একদল পালন করছে কর্মবিরতি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে নতুন চেয়ারম্যান ও সচিব কি ভাঙ্গতে পারবে পুরোনো ও সুবিধাভোগী এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম। নাকি সিন্ডিকেটের পরামর্শে চলবে সিডিএ। এ নিয়ে সংস্কারের নতুন বাংলাদেশে সিডিএর নব দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসায় নাগরিকরা পরিকল্পিত নগরীর প্রত্যাশা করলেও এই সিন্ডিকেটকে সাথে নিয়ে কতদূর যেতে পারবেন তিনি এ নিয়ে সন্দিহান চট্টগ্রামবাসী।
বিগত ১৮ বছরে এই সিন্ডিকেটের অধীনে নগরের গুরুত্বপূর্ন আবাসিক এলাকাগুলো হারিয়ে গেছে। আবাসিক এলাকাগুলোতে একের পর এক গজিয়ে উঠেছে বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সিডিএর নাকের ডগায় আবাসিকের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা হারাচ্ছে এলাকাগুলো। আবাসিকের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে অবৈধ বানিজ্যিক ইমারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও এবং গণমাধ্যমে লেখালেখি হলেও কোন কর্ণপাত নেই।
জানা যায়, উল্টো সিডিএর অথোরাইজড অফিসার ও পরিদর্শকদের ম্যানেজ করে তারা ছাড়পত্র নিয়ে পুরো আবাসিক কাঠামো ভেঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। অনেক ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, চীফ ইঞ্জিনিয়ার,প্ল্যানিং শাখা, অথোরাইজড শাখা, স্থাপত্য শাখা, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা, এষ্টেট শাখার কয়েকজন কর্তাব্যাক্তির সিন্ডিকেটের কারনে এমন রাম রাজত্ব কায়েম হয়েছে এতদিন, অপরিকল্পিত নগরায়নসহ জনগণ ভোগান্তির শিকার হলেও তারা উৎকোচ ছাড়া ফাইল ছাড়েননি। সিডিএর সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সেবা গ্রহিতাদের সাথে এমন আচরণ করেন যেন তারা এক একজন নবাব আর সেবা গ্রহিতারা অপরাধী সাধারণ প্রজা।
জানা যায় ২৫.০০.০০০০.০১৯.৩২.০০২.১২-৪৬৮ম্বারক ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ মূলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে ভুল তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে ট্রুথকমিশনে দোষ স্বীকারকারী দুদকের ফৌজদারী মামলার আসামী কাজী হাসান বিন শামস্, নির্বাহী প্রকৌশলী, চউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদসহ ৫টি উচ্চতর পদ বিধি বহির্ভূতভাবে পুন: দখল করে এককভাবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা জনসেবার পরিবর্তে পরিকল্পনা ও প্রকৌশল বিভাগে অবৈধ সিন্ডেকেটের ঘুষ বানিজ্য কায়েম করেন। কাজী হাসান বিন শামস্, নির্বাহী প্রকৌশলীর উচ্চতর ৫টি পদ দখল করে রাখাসহ ৮ আগষ্ট সেনাবাহিনী ও ডিজি এফ আই এর কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে সামগ্রিক বিষয় পরিস্কার হয়ে উঠে।
জানা যায়, পদায়ন করা ৩ প্রকৌশলীকে দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিত রাখা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, তারা নানা বঞ্চনার শিকার। তাই তাদেরকে অফিস আদেশের মাধ্যমে পদায়ন করা হয়েছে।
এছাড়াও অগুনিত অভিযোগ রয়েছে মোঃ আবু ঈসা আনসারীর বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে তার নিয়োগ, ঘুষ বানিজ্য, তার স্বেচ্ছাচারীতা নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও তা দেখার সময়ও তার নেই।
জানা যায়, তিনিও একই সাথে তিনটি চউকের অস্থায়ী পদ নগর পরিকল্পনাবিদ (মূল পদ) উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত), প্রকল্প পরিচালক মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নিয়োগ নিয়ে রয়েছে অনেক ধোঁয়াশা। মোঃ আবু ঈসা আনসারী নগর পরিকল্পনাবিদ ১০ আগষ্ঠ ২০০৮ সালে সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ পদে চউকে আবেদন করেন, ২০ নভেম্বর ২০০৮ সালে সম্পূর্ন মিথ্যা তথ্যে নিয়োগ বিধি পরিপন্থীভাবে নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চউকে যোগদান করেন। সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদের নিয়োগ আবেদনে সহকারী শব্দ মুছে নগর পরিকল্পণাবিদ করা হয়
এছাড়াও চউকে নগর পরিকল্পনাবিদের ৩টি পদের বিপরীতে ৪ জনকে নিয়োগের ৪র্থতম মোঃ আবু ঈসা আনসারী। যার ফলে ২০ নভেম্বর ২০০৮ হতে বর্তমান পর্যন্ত তার নগর পরিকল্পনাবিদের বেতন/ভাতাদি উত্তোলন/নিয়োগ বিবিধান বহির্ভূত। তিনি উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রেক্ষিতে পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান পর হতে বিগত ৪ অক্টোবর ২০২০ হতে লাগামহীন ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ ভূমিব্যব হার ছাড়পত্র সহ প্ল্যান অনুমোদনে অথরাজেশন ও পরিকল্পনা শাখায় বিশৃঙ্খলা অস্থিরতা এবং অব কমান্ড সম্পূর্ন বিধস্ত করছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
মোঃ আবু ঈসা আনছারী বিধিবিধান বহিভূত নিয়োগের বিরুদ্ধে বিগত ১৭/০৮/২০০৯ তারিখে বর্তমানে চউকের ৭জন সিনিয়র প্রকৌশলী চেয়ারম্যান চউক বরাবরে জনস্বার্থে ও অফিস শৃঙ্খলা রক্ষার্থে অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতি বাতিলের বিহীত ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করেছিলেন বলে জানা যায়। সিন্ডিকেট ঘুষবানিজ্যের মাধ্যমে অবৈধ ভূমি বহার ছাড়পত্র অনুমোদন, প্ল্যান অনুমোদনের কারনে চউকের বিরুদ্ধে অনেক রীট পিটিশন মামলার উদ্ভব হয়েছে ও হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে চউক মামলার কার্যক্রমে অর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং জনস্বার্থ বিঘ্নিতসহ চট্টগ্রামের আমজনতা সুশীল সমাজের মধ্যে চউকের প্রতি ঘৃনা ও অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে।
নগর যথাযথ উন্নয়নের স্বার্থে চউকের অথরাইজেশন , পরিকল্পনা ও প্রকৌশল বিভাগের কাজে গতিশীলতা স্বচ্ছতা, দুর্নীতি প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নগরের জনগণের ভোগান্তি রয়ে যাবে।
বিশ্লেষক ও ওয়াকিবহাল মহলের মতে চউক’-এ বহাল তবিয়তে থাকা এসব আওয়ামী মাফিয়া সিন্ডিকেটের দূর্নীতিবাজদের নির্মূল এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তি প্রয়োগ ছাড়া নাগরিক বান্ধব চট্টগ্রাম নগরী বির্নিমাণ অসম্ভব।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়