ঢাকা ১১:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসময়ের টানা বৃষ্টি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম

মোহাম্মদ আলম
  • Update Time : ০৬:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২১ Time View

ফাইল চবি

আড়ৎদার-ফরিয়া সিন্ডিকেটে সবজি বাজারের আগুন দিন দিন বাড়ছে। অসময়ে দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির ফলনে ঘাটতি হবে বলে মনে করছে কৃষক। এর প্রভাব বাজারেও থাকবে। তাই সহসাই সবজির দামে স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। সরকার কঠোর হাতে ফরিয়া সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে ভোক্তা সাধারণের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।

ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রখোলায় প্রতিদিন ভোর ও বিকালে পাইকারি সবজি বাজার বসে। উপজেলার একমাত্র খাজনামুক্ত পাইকারি বাজার হওয়ায় নবাবগঞ্জ ছাড়াও নিয়মিত ঢাকা থেকে পাইকার ওই বাজারে সবজি বেচাকেনা করে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কয়েকশ টন বেগুন, মরিচ, ধুন্দল, ঢেড়স, বরবটি, কাঁচকলা, মুলা, পেঁপে, লাউ, টমেটো ওই বাজারে বেচাকেনা হয়। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তি জেলা মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে আলু পেয়াজ এখানে বেচাকেনা হয়।

কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতে পানি জমেছে। ইতিমধ্যেই পাইকারি বাজারে সবজির আমদানি অনেক কমেছে। আমদানি কম হওয়ায় দামও বেড়েছে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারেও বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। যেমন নবাবগঞ্জ বাজারে শনিবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪২০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ও করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৯০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, কচুমুখি ৭০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা এবং প্রতিটি লাউ গড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহে এ বাজারেও সবজির দাম দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।

যন্ত্রাইল এলাকায় পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন জয়নাল আবেদিন নামে একজন কৃষক। ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পেঁপে গাছের গোড়ায় পানি জমেছে। ইতিমধ্যেই পেঁপে গাছে হলুধাভ রং হয়েছে। তিনি আশংকা করছেন তার পেপে বাগান মরে যাবে। একইভাবে বেগুন, মরিচ, মুলা চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামীতে আরও কয়েকদিন দেশের সব বিভাগে কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে। বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের সবজি উৎপাদনে ঘাটতি হতে পারে। সিন্ডিকেটের কারণে সবজি বাজার এমনিতেই চড়া। উৎপাদন ঘাটতিতে তা আরও বাড়তে পারে। সরকার কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট শহর থেকে গ্রামে বিস্তৃত। কৃষক নিজেও জানে তার উৎপাদিত পণ্য সিন্ডিকেটের হাত ঘুরে তিন-চারগুন দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন কৃষক জানান, ৫ আগষ্টের পর বিএনপির কয়েকজন স্থানীয় নেতা তাদের পাইকারি বাজারে খাজনা প্রথা চালু করার পাঁয়তারা করেছে। কিন্তু কৃষকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় তা ব্যর্থ হয়। কৃষকের ভাষ্য, শুধুমাত্র সরকার বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। খুচরা বাজারে ভোক্তা সাধারণ সোচ্চার হলে ফরিয়াদের হাত থেকে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হতে পারে।

নওরোজ/এসএইচ

Please Share This Post in Your Social Media

অসময়ের টানা বৃষ্টি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম

মোহাম্মদ আলম
Update Time : ০৬:৩৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

আড়ৎদার-ফরিয়া সিন্ডিকেটে সবজি বাজারের আগুন দিন দিন বাড়ছে। অসময়ে দেশজুড়ে টানা বৃষ্টির কারণে সবজির ফলনে ঘাটতি হবে বলে মনে করছে কৃষক। এর প্রভাব বাজারেও থাকবে। তাই সহসাই সবজির দামে স্বস্তি ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। সরকার কঠোর হাতে ফরিয়া সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে ভোক্তা সাধারণের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।

ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রখোলায় প্রতিদিন ভোর ও বিকালে পাইকারি সবজি বাজার বসে। উপজেলার একমাত্র খাজনামুক্ত পাইকারি বাজার হওয়ায় নবাবগঞ্জ ছাড়াও নিয়মিত ঢাকা থেকে পাইকার ওই বাজারে সবজি বেচাকেনা করে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কয়েকশ টন বেগুন, মরিচ, ধুন্দল, ঢেড়স, বরবটি, কাঁচকলা, মুলা, পেঁপে, লাউ, টমেটো ওই বাজারে বেচাকেনা হয়। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা, পার্শ্ববর্তি জেলা মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে আলু পেয়াজ এখানে বেচাকেনা হয়।

কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেতে পানি জমেছে। ইতিমধ্যেই পাইকারি বাজারে সবজির আমদানি অনেক কমেছে। আমদানি কম হওয়ায় দামও বেড়েছে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুচরা বাজারেও বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। যেমন নবাবগঞ্জ বাজারে শনিবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪২০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ও করলা ১০০ টাকা, বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৯০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, কচুমুখি ৭০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা এবং প্রতিটি লাউ গড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহে এ বাজারেও সবজির দাম দ্বিগুণ বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে।

যন্ত্রাইল এলাকায় পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন জয়নাল আবেদিন নামে একজন কৃষক। ফলনও আশানুরূপ হয়েছে। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পেঁপে গাছের গোড়ায় পানি জমেছে। ইতিমধ্যেই পেঁপে গাছে হলুধাভ রং হয়েছে। তিনি আশংকা করছেন তার পেপে বাগান মরে যাবে। একইভাবে বেগুন, মরিচ, মুলা চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামীতে আরও কয়েকদিন দেশের সব বিভাগে কমবেশি বৃষ্টি হতে পারে। বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের সবজি উৎপাদনে ঘাটতি হতে পারে। সিন্ডিকেটের কারণে সবজি বাজার এমনিতেই চড়া। উৎপাদন ঘাটতিতে তা আরও বাড়তে পারে। সরকার কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট শহর থেকে গ্রামে বিস্তৃত। কৃষক নিজেও জানে তার উৎপাদিত পণ্য সিন্ডিকেটের হাত ঘুরে তিন-চারগুন দামে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন কৃষক জানান, ৫ আগষ্টের পর বিএনপির কয়েকজন স্থানীয় নেতা তাদের পাইকারি বাজারে খাজনা প্রথা চালু করার পাঁয়তারা করেছে। কিন্তু কৃষকের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় তা ব্যর্থ হয়। কৃষকের ভাষ্য, শুধুমাত্র সরকার বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। খুচরা বাজারে ভোক্তা সাধারণ সোচ্চার হলে ফরিয়াদের হাত থেকে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হতে পারে।

নওরোজ/এসএইচ