অমর্ত্য সেনকে ১৫ দিনের মধ্যে জমি ছাড়ার কড়া নোটিশ
- Update Time : ১১:৪৪:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
- / ৩০৬ Time View
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে জমি ছাড়ার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৬ মে’র মধ্যে খালি করে দিতে হবে বিতর্কিত জমির অংশ। অন্যথায় বলপ্রয়োগ করে হলেও জমির দখল বুঝে নেবে কবিগুরুর হাতে গড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।
অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি প্রতীচীতে উচ্ছেদের নোটিশ আগেই ঝোলানো হয়েছিল। সেই নোটিশের আইনি যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেন অমর্ত্য সেন। তারই জবাবে এবার ১৫ দিনের মধ্যে জমি ছাড়তে বলে বুধবার (১৯ এপ্রিল) চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতর স্বাক্ষরিত নোটিশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি প্রতীচী খালি করা না হয়, তাহলে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করবে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, এর আগেও শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী’ গেটে উচ্ছেদের নোটিশ ঝোলানো হয়েছিল। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৯ এপ্রিল ‘প্রতীচী’ জমি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তবে তার আগে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে ১৭ এপ্রিল জবাবি চিঠি দিয়েছিলেন অমর্ত্য সেন।
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, লিজের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে কেউ এই জমি দাবি করতে পারেন? নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ আরও লেখেন, শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’র জমিতে আইনশৃঙ্খলা ও শান্তিরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। অমর্ত্য সেন জানান, তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন, আগামী জুন মাসে ফিরবেন।
এর আগে, জমি ছাড়ার নোটিশ প্রতীচীর গেটে লাগানোর আগে গত ১৩ এপ্রিল বিশ্বভারতীতে এ সংক্রান্ত একটি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে বিদেশে থাকার কারণে সেই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না অমর্ত্য সেন। এরপরেই ১৪ এপ্রিল প্রতীচীর গেটে উচ্ছেদের নোটিশ টানিয়ে দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বভারতীর অভিযোগ, এই জমি অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। তবে অমর্ত্য সেনের দাবি, এই জমি তার বাবার। ১ দশমিক ৩৮ একর জমি অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে। মিউটেশন করার কথা জানানো হলেও বিশ্বভারতী নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। অমর্ত্য সেনের আইনজীবীকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ইমেইলে বলা হয়, ১৯৭১ সালের দখলদার উচ্ছেদ আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অমর্ত্য সেনের পৈত্রিক বাড়ি শান্তিনিকেতনে। ‘প্রতীচী’ নামের ওই বাড়ির মোট জমির পরিমাণ ১৩৮ শতাংশ। অমর্ত্য সেনের দাবির, তার বাবা আশুতোষ সেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বভারতী কতৃপক্ষের দাবি, ওই জমির মধ্যে ১৩ শতাংশ জমি অমর্ত্য সেন বেদখল করে রয়েছেন। ওই জমি সেন পরিবারকে লিজ দেওয়া হয়নি।
এর আগে বেশ কয়েক দফায় বিতর্কিত জমি ফেরানোর নোটিশ দেওয়া হলেও এটা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয় যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেনের বাড়ি গিয়ে নিজের হাতে রাজ্য সরকারের ভূমি ও রাজস্ব দফতর থেকে অমর্ত্য সেনের নামে ১.৩৮ একর জমির খতিয়ান তুলে দেন।
বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। শান্তিনিকেতনের জমিও তাদেরই। ফলে এটা নিয়ে বাঁধে তীব্র বিরোধ। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বভারতী এবং অমর্ত্য সেনের মধ্যে তিন দফায় সালিশি বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু সেখানেও কোনো ধরণের সমাধান মেলেনি। কারণ, দুপক্ষই নিজেদের জমির দাবিতে অনড়। কেউ কাউকে জমি না ছাড়ার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে।
এবার বুধবার (১৯ এপ্রিল) গভীর রাতে শান্তিনিকেতনের অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র দেয়ালে নোটিশ টাঙায় বিশ্বভারতী। নোটিশে বলা হয়, আগামী ৬ মে পর্যন্ত চূড়ান্ত সময় দেওয়া হলো। এর মাঝে বিতর্কিত ১৩ শতাংশ জমি ছাড়তে হবে। অন্যথায় বল প্রয়োগ করে বিশ্বভারতী তাদের জমি বুঝে নেবে।
যদি সত্যি অমর্ত্য সেন জমি ফেরত না দেন তবে বুলডোজার দিয়ে কথিত দখল করা জমি ফেরত নিতে পারে অনড় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই বাড়ির সামনে রাজ্য প্রশাসন ১৪৫ ধারা জারি করে রেখেছে যাতে সেখানে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের যোগ্য প্রধানমন্ত্রীর মুখ হতে পারেন’- মাস দুয়েক আগে অমর্ত্য সেনের এ মন্তব্য নিয়ে রীতিমত তোলপাড় পড়ে যায়। মমতার দল তৃণমূল এ মন্তব্যে খুশি হলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ কারণেই বেজায় চটে যায় বিজেপি শিবির। ফলে বিষয়টি এখন ব্যক্তি অমর্ত্য সেন বনাম বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নয় বরং বিষয়টি এখন কার্যত পশ্চিমবঙ্গে শাসক বিরোধী লড়াইয়ের মাত্রা পেয়েছে।