অতিরিক্ত শুল্কে মার্কিন নাগরিকদের ক্ষতি বেশি
- Update Time : ১২:১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩২২ Time View
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানী পণ্য পোশাক খাতের বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র।
যদি বলা হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানী না হলে সেখানে অনেক নিম্ন আয়ের মার্কিন নাগরিক অর্ধউলঙ্গ থাকবে। এটা কিন্তু অতিরিক্ত বলা হচ্ছে না।
বাংলাদেশের পোশাক খাত দীর্ঘ চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র বা পৃথিবীর কোন দেশ হুট করে শুল্কের নামে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানী পণ্য থেকে লাভের গুড়ের ভাগ বসাতে গিয়ে প্রকারান্তরে ক্ষতিটা তাদেরই হবে।
কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কর দাতাদের ক্ষতি সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। তার আগে বলতে চাই, বাংলাদেশের পোশাক না পেলে পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ আগামী শীতে ঘর থেকে বেরুতে পারবে না। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় ক্রেতা তাই সমস্যা তাদেরই বেশি।
দেখুন, একটি পোশাক কারখানা একদিন, একমাস বা একবছরে উৎপাদনে যেতে পারে না। কারখানার অবকাঠামো গড়ে তোলা সহজ হলেও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া অতটা সহজ না। মার্কিনী বা ইউরোপের নাগরিকরা এখন সব কারখানার পোশাক গায়ে চড়ায় না। পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা হলে তবেই তাদের মন ভরে। এক্ষেত্রেও পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ সবার আগে। বিশ্বের শতকরা ৬০ ভাগ পরিবেশবান্ধব সবুজ পোশাক কারখানা বাংলাদেশে রয়েছে। পশ্চিমা বাঘা বাঘা ব্র্যান্ড হাউজগুলো পরবর্তি ৫-৭ বছরের পোশাকের জন্য বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা বুক করে রাখে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, যে কোন পরিস্থিতিতে আগামী দশকে বিশ্বের সিংহভাগ পোশাকের যোগানদাতা বাংলাদেশকেই দিতে হবে। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা পাশাপাশি দক্ষ শ্রমিক সেভাবেই প্রস্তুত আছে। এখন চাইলেই রাতারাতি কোন দেশ এটা ব্যবস্থা করতে পারবে না। এটাতো ধান বা গম চাষ না যে, উর্বর মাটিতে পুতে সার দিলেই ফনফনাইয়া গজাবে। যুতসই কাপড় পরতে হলে বাংলাদেশে আসতেই হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতই শুল্কারোপ করুন না কেন এতে এখানে পোশাক কারখানা মালিকের ক্ষতি খুব একটা নেই। আগে ক্রয়াদেশ নেওয়া পোশাকে অতিরিক্ত শুল্ক কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তবে নতুন ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে কারখানা মালিক সব হিসাব করেই নিবে।
পোশাক শিল্পে বিশ্ব বাংলাদেশের উপর কতটা নির্ভরশীল একটি পরিসংখ্যান দিলেই তা সহজে বুঝা যাবে। বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের শতকরা ৬০ ভাগ পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কারখানা বাংলাদেশে।
দেশে বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানা মোট ২২৬টি। লিড প্রত্যায়িত কারখানার মধ্যে ৮৯টি প্লাটিনাম, ১২৩টি গোল্ড, ১০টি সিলভার রেটেড। এছাড়া ৪টি সার্টিফায়েড কারখানা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) লিডারশিপ ইন অ্যানার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (লিড) নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। এ সনদ পেতে হলে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসি’র তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়।
লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পূরণ ও পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ পয়েন্ট হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ পাওয়া যায়। বিশ্বে পোশাক শিল্পের লিড সার্টিফাইড কারখানা সিংহভাগ ২২৬টি বাংলাদেশে। আরও ৫ শতাধিক কারখানা লিড সনদের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। প্রিয় পাঠক বুঝতেই পারছেন, পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে।
এবার আসা যাক, মার্কিন অতিরিক্ত শুল্কারোপ কিভাবে সেদেশের নাগরিকের ঘারেই যাবে। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই এই শুল্ক দিতে বাধ্য। বাংলাদেশে উৎপাদিত পোশাকের বোতাম থেকে কাপড় সবই অন্য দেশ থেকে আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতাই নির্ধারণ করে দেন। কাপড়-বোতামসহ পোশাকের সব রকম ‘র’ মেটেরিয়ালের পেমেন্টও ক্রেতার একাউন্ট থেকেই এলসি পেমেন্ট হয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ওয়ালমার্ট পূর্বে ১০০ টাকার ক্রয়াদেশ দেওয়া পোশাক এখন দিবে ১৩৭ টাকায়। বাংলাদেশের কারখানা মালিকতো আর এর কমে কাজ করবে না। স্বাভাবিকভাবে ওয়ালমার্ট পূর্বের ১০০ টাকার পোশাক মার্কিন নাগরিকের কাছে ১৩৭ টাকায় পৌছাবে। অতিরিক্ত টাকাতো মার্কিন নাগরিকের পকেট থেকেই যাচ্ছে।
আরও সহজভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশ যদি রোজায় সৌদি আরবের খেজুরের উপর শতকরা ১০ ভাগ অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে তাহলে ব্যবসায়ীর খরচ বাড়বে। আর ব্যবসায়ী দেশের সরাসরি ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত মূল্যের মাধ্যমে তা উসূল করে।
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পসহ সেদেশের নাগরিকের পোশাকের জোগানদাতা বাংলাদেশ। সেহেতু এখাতে শুল্কারোপ করায় তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন কেউ যদি এমনভাবে বাংলাদেশ থেকে যদি পোশাক আমদানি বন্ধ করে বা কমায় তাহলে কি হবে? না এটা সহসাই সম্ভব না। প্রথমত বাংলাদেশে বৃহৎ পোশাক শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মত সস্তা শ্রমে পৃথিবীর কোথাও পোশাক হয় না।
সবদিক বিবেচনায়, বাংলাদেশী পণ্যে ট্রাম্প সরকারের শতকরা ৩৭ ভাগ শুল্কারোপ নিয়ে বাংলাদেশী পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের খুব একটা চিন্তিত হওয়ার কথা না। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ৩ মাস সময় চাওয়া হয়েছে। পূর্বের ক্রয়াদেশ নেওয়া পোশাক রপ্তানীর জন্য এই ৩ মাস সময় পেলে কোন সমস্যাই থাকবে না।































































































































































































